• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

এ ব্রোকেন ড্রিম… বাই এস কে সিনহা  

  অধিকার ডেস্ক

১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ১৯:৪৩
অলিউল্লাহ নোমান
ফাইল ছবি

দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার একটি বই বের হয়েছে। বইটির ‘মুখবন্ধ’ এবং প্রচ্ছদ অনেকে প্রকাশ করেছেন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এনিয়ে আবার অনেকের মাঝে উচ্ছাস দেখা যাচ্ছে। এমন উচ্ছাস অনেকের মাঝে দেখেছিলাম যখন তিনি গৃহবন্দি ছিলেন। তখনও আমি বলেছিলাম, দুর্নীতিবাজরা কখনো শক্ত অবস্থান নিতে পারে না।

বইটির নাম দেওয়া হয়েছে, ‘এ ব্রোকেন ড্রিম রুল অব ল, হিউম্যান রাইটস এন্ড ডেমোক্রেসি। প্রচ্ছদে উল্লেখিত শিরোনাম বাংলা তরজমা করলে দাঁড়ায়, ‘আইনের শাসন, মানবাধিকার এবং গণতন্ত্রের স্বপ্নভঙ্গ’। শিরোনাম দেখেই আমার মনে কয়েকটি প্রশ্ন জেগে উঠেছে। তাই সবার সাথে শেয়ার করে নিচ্ছি আমার মনের প্রশ্নগুলো। হতে পারি আমি ভুল। তারপরও যেহেতু মনে প্রশ্নগুলো উদয় হচ্ছে তাই লিখলাম।

১.বাবু সুরেন্দ্র কুমারকে আমি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি থেকে দেখেছি। খুব কাছে থেকে প্রতিদিন বিচারালয় পর্যবেক্ষণ করতাম। সংবাদের খোঁজে আদালত ভবনে যাতায়াত ছিল নিয়মিত। তখন থেকে জানি তিনি একজন গোড়া আওয়ামী লীগার। পাশাপাশি তাঁর দুর্নীতির বিষয়গুলো আইনজীবীদের মুখে মুখে প্রচারিত ছিল।

২. বাবু সুরেন্দ্র কুমার বিচারের আসনে বসা অবস্থায় কি ন্যায় বিচার করেছেন?

বিরোধী জোট নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বাড়ির মামলাটির লিভ টু আপিল শুনানির জন্য আদালতে ধার্য ছিল। সেদিন প্রধান বিচারপতি ছিলেন এবিএম খায়রুল হক। তাঁর দুই পাশে বসেছিলেন মো. মোজাম্মেল হোসেন ও সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। মূল আইনজীবী ব্যারিস্টার রফিক উল হক সাহেব উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, শুরু করার আগে ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেব একটি আবেদন পেশ করবেন। তারপর শুনানি শুরু করা হোক। তারা জানতেন আবেদনটি কি বিষয়ে। উত্থাপনের আগে এফিডেভিট করে দাখিল করতে হয়। নিয়ম অনুযায়ী এফিডেভিট করে সেটা দাখিল করা হয়েছিল সংশ্লিষ্ট দপ্তরে। ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেব দাঁড়ালেন। আপিল বিভাগ সেটা শুনতে নারাজ। সেদিনের আদালতে মনে হয়েছিল খায়রুল হক নন, প্রধান বিচারপতির আসনে বসে কোর্ট চালাচ্ছেন সুরেন্দ্র কুমার। তাঁর অতি উৎসাহী ভূমিকা দেখার সুযোগ হয়েছিল সেদিন। রফিক উল হক বার বার দাঁড়িয়ে বলছেন ওনার আবেদনটা শুনেন। মওদুদ সাহেব আবেদন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন তখন। তারা রফিক উল হককে বলছেন লিভ টু আপিল শুনানি শুরু করেন। নতুন আবেদনের সুযোগ নাই। এক পর্যায়ে তারা বললেন আমরা রায় দিচ্ছি। শুনানি ছাড়াই খালেদা জিয়ার বাড়ির মামলায় লিভ টু আপিল আবেদন খারিজ করে দিলেন। ব্যারিস্টার মওদুদ সাহেব যেই আবেদন নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেটা ছিল বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে এই আপিল আদালতের প্রতি অনাস্থা। একজন বিচার প্রার্থীর তাদের ওপর আস্থা নেই। সেটা জেনে বুঝে তারা সেই বিচারপ্রার্থীর আবেদন শুনানির সুযোগ না দিয়ে খারিজ করে দিলেন! ন্যায় বিচারকরা কি এমনটা করতে পারেন??? এটার নাম কি ন্যায় বিচার???? তখন কোথায় ছিল সুরেন্দ্র কুমারের ন্যায় বিচারের সেই স্বপ্ন???

৩. সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল শুনানির আগে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি শামিম হাসনাইন আবেদন করলেন। কারণ বিচারপতি শামিম হাসনাইন পাকিস্তানে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সহপাঠি ছিলেন। তিনি ট্রাইব্যুনালেও সাক্ষ্য দেয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন। আপিল বিভাগে তখন সুরেন্দ্র কুমার প্রধান বিচারপতি। হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতি সাক্ষ্য দিতে চেয়েছেন। অথচ সেটা শোনারও প্রয়োজন মনে করলেন না। শুধু তাই নয়, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষ থেকে পাঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট পেশ করা হয়েছিল। ধরে নিলাম সেই সার্টিফিকেট ভুয়া। নিজেরা বানিয়ে সেটা পেশ করেছেন। কিন্তু বিচারকের কাজ কি? সেটাকে যাচাই বাছাই করা ছাড়াই প্রত্যাখান করা? একটা মানুষকে খুন করার জন্য আদেশ দেয়ার আগে একটু যাচাই বাছাই করতে সমস্যা কোথায় ছিল?! নাকি তারা জানেন শামিম হাসনাইনকে সাক্ষ্য দেয়ার সুযোগ দিলে এবং সার্টিফিকেট যাচাই বাছাই করতে গেলে খুন করার আদেশটা এত সহজে দেয়া যাবে না। সুরেন্দ্র কুমারের কাছে প্রশ্ন এর নামটি ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা??! চিরন্তন সত্য হচ্ছে ফাঁসির আদেশ দেয়ার আগে সন্দেহাতীত প্রমাণ হওয়া। এখানে কি বলা যায় সন্দেহাতীত প্রমাণ হয়েছিল সবকিছু?? উত্থাপিত প্রশ্নের যাচাই বাছাই ছাড়া কাউকে ফাঁসি দিলে কি বলা যায় সন্দেহাতীত প্রমাণ হয়েছে?!!

৪. আবদুল কাদের মোল্লাকে আপিল বিভাগ ফাঁসি দিয়েছে একজন সাক্ষ্যের একটি বক্তব্যের ওপর ভিত্তি করে। সেই সাক্ষীর নাম মোমেনা। মোমেনার ৩টি বক্তব্য রয়েছে এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে। একটি বক্তব্য রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। যেখানে তিনি ঘটনার সাথে আবদুল কাদের মোল্লার কোন কর্মের সংশ্লিষ্টতার কথা বলেননি। একটি বক্তব্য মামলার তদন্তকারীর কাছে দিয়েছেন। সেখানে তিনি দিয়েছেন এক রকম। সর্বশেষ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের ক্যামেরা ট্রায়ালে। যেখানে শুধু বিচারক প্রসিকিউশনের আইনজীবী ও আসামিপক্ষের একজন আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। বোরখা পরিহিত এবং মুখমন্ডল আবৃত ছিল তার। প্রশ্ন হচ্ছে বিচারের নীতি হল সন্দেহাতীত প্রমাণিত হওয়া। ৩ বক্তব্যে তার বয়সেরও ফারাক রয়েছে। ৩ রকমের ৩টি বক্তব্য দিয়ে কি সন্দেহাতীত প্রমাণিত হয়!! এ প্রশ্ন যখন আপিলের সময় উত্থাপিত হয়েছিল তখন তিনি সুরেন্দ্র কুমার অত্যন্ত দাম্ভিকতার সাথে বলেছিলেন এর মাঝে আমাদের বিশ্বাস হয়েছে। এর নাম কি ন্যায় বিচার???

৫. দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার বিরুদ্ধে একটি আদালত অবমাননার মামলা হয়েছিল সরাসরি আপিল বিভাগে। কারণ, একটি অনুসন্ধানী রিপোর্ট ছিল আপিল বিভাগের কিছু আদেশ নিয়ে। রিপোর্টটির শিরোনাম ছিল-চেম্বার মানেই সরকার পক্ষে স্টে। এই রিপোর্ট আমি নিজেই অনুসন্ধান করে লিখেছিলাম। আদালত অবমাননার মামলাটি যখন শুনানি হয় তখন শ্রদ্ধেয় মজলুম সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমান রিপোর্টের পক্ষে প্রমাণ হাজির করলেন। তাৎক্ষণিক সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ অন্যান্য বিচারপতিরা বললেন, আমরা এখানে সত্য মিথ্যা যাচাই করতে বসিনি। ‘ট্রুথ ইজ নো ডিফেন্স’। আমাদের কারাদণ্ড এবং অর্থ জরিমানা করলেন। প্রমাণ যাচাই বাছাই না করে কাউকে কারাদণ্ড দেয়া কি ন্যায় বিচার!!?? বাবু সুরেন্দ্র কুমারের বইয়ে কি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া যাবে?!!

অলিউল্লাহ নোমান : লেখকের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেয়া।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড