• রোববার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

জামিন-প্যারোল-সাজা স্থগিত, কোনটিতে মুক্তি মিলবে খালেদার

  আমির সোহেল

০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:৩১
খালেদা জিয়া
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া (ফাইল ছবি)

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারাবাসের দুই বছর পূর্ণ হয়েছে শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি)। জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ১৭ বছরের সাজা মাথায় নিয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি আছেন বিএনপির নেত্রী। এই কারাবাসের দুই বছরের মধ্যে বহুবার আদালতে জামিন আবেদন করেও মুক্তির বিষয়ে সফল হতে পারেননি তার আইনজীবীরা।

এমনকি বারবার খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি কিংবা তার সাজা স্থগিত করার ব্যাপারে আলোচনা হলেও শেষ পর্যন্ত কোনো অগ্রগতির দেখা মেলেনি। যা কেবল আলোচনার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

তবে নতুন করে আবারও আইনজীবীরা খালেদা জিয়ার জামিনের জন্য আবেদনের কথা ভাবছেন। কিছুদিনের মধ্যে উচ্চ আদালতে জামিন আবেদন এবং আপিল বিভাগে জামিনের জন্য রিভিউ আবেদন করার কথা জানিয়েছেন তারা।

খালেদা জিয়া কেবল জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় জামিন পেলে তিনি কারামুক্ত হতে পারবেন বলে মনে করছেন তার আইনজীবীরা। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় দশ বছরের দণ্ডপ্রাপ্ত হন তিনি। যেটি আপিল বিভাগে বিচারাধীন। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় সাত বছরের দণ্ড হয়েছে।

এ দিকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার সঙ্গে বারবার দেখা করে তার পরিবার বলছে, তিনি শারীরিক বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। গেল বছরের এপ্রিলের ১ তারিখে বিএসএমএমইউতে ভর্তি করা হয় তাকে।

যে দুই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া

খালেদা জিয়া ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছর কারাদণ্ড পেয়ে কারাগারে বন্দি রয়েছেন। পরবর্তী সময়ে আপিলের পর উচ্চ আদালতে যা বেড়ে ১০ বছর হয়।

২০১৮ সালের নভেম্বরের ১৮ তারিখে খালাস চেয়ে আপিল বিভাগে খালেদা জিয়া জামিন আবেদন করেন। তবে সে আবেদন এখনো আদালতে উপস্থাপন করেননি তার আইনজীবীরা।

২০১৮ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে ৭ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে তাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। একই দণ্ড হয়েছে মামলার অপর তিন আসামিরও। ২০১৮ সালের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এর বিরুদ্ধে আপিল করা হয়।

পরে এপ্রিল মাসের ৩০ তারিখে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন উচ্চ আদালত। একই সঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত এবং সম্পত্তি জব্দ করার ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন।

জুনের ২০ তারিখে বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি উচ্চ আদালতে পাঠানো হয়। ৩১ জুলাই বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এসএম কুদ্দুস জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ তার জামিন আবেদন খারিজ করে দেন।

পরবর্তী সময়ে সেপ্টেম্বরের ১১ তারিখে ফের জামিন আবেদন ফেরত দেন বিচারপতি ফরিদ আহমেদ ও বিচারপতি এএসএম আবদুল মোবিনের হাইকোর্ট বেঞ্চ।

পরে আপিল বিভাগে জামিন আবেদন করলে গেল বছরের ১২ ডিসেম্বর খারিজ হয়ে যায়। তবে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলেছেন আদালত।

এখন আপিল বিভাগের এই খারিজ আদেশের পুর্নবিবেচনা চেয়ে আপিল বিভগে এবং এই মামলায় ফের উচ্চ আদালতের জামিন আবেদন করার কথা জানিয়েছেন খালেদার আইনজীবী জয়নুল আবেদীন।

জামিন না মেলায় আলোচনায় প্যারোল ও দণ্ড স্থগিত

গেল বছরের মার্চ মাসের ৩১ তারিখে খালেদা জিয়ার প্যারোলে মুক্তি নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের এক প্রশ্নে বিএনপি নেতা ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, না, সেটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। সেখানে আমাদের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। প্যারোলটা মামলা সংক্রান্ত ব্যাপার না। এটা একটা বিশেষ বিধান।

সাজাপ্রাপ্তকে কখন প্যারোল দেওয়া হয় বিষয়টির ব্যাখ্যা করে খন্দকার মাহবুব বলেন, যখন একটি লোক চরম অসুস্থ হয়ে পড়েন তার চিকিৎসা দরকার, আর আইন মোতাবেক আদালতে জামিন পেতে তার অনেক সময় লেগে যেতে পারে। বা অনেক ক্ষেত্রে তারা দণ্ড বহাল রয়েছে। সে ক্ষেত্রে সরকার ইচ্ছা করলে তাকে প্যারোলে মুক্তি দিতে পারেন। এছাড়া চিকিৎসার জন্য দিতে পারেন। বিশেষ কারণে দিতে পারেন। সেখানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধিকার সংরক্ষণ করা আছে। যে কোনো সময়ের জন্য প্যারোল দিতে পারেন।

বিএনপি চেয়ারপারসনের প্যারোলের বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র এই আইনজীবী বলেছিলেন, দলের যারা নীতি নির্ধারক আছেন তাদেরও সিদ্ধান্ত দরকার হবে, যার জন্য (খালেদা জিয়া) তারও সিদ্ধান্ত দরকার হবে। স্ট্যান্ডিং কমিটি যদি তাকে পরামর্শ দেন, সে পরামর্শ অনুযায়ী তিনি প্যারোলে যাবেন কি যাবেন না এটা সম্পূর্ণ তার নিজস্ব সিদ্ধান্ত।

এর কয়েকদিন পর ৬ এপ্রিল জামালপুরে এক অনুষ্ঠানে প্যারোল নিয়ে সাংবাদকর্মীদের প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া যদি সুনির্দিষ্ট কারণ দেখিয়ে প্যারোলে মুক্তির আবেদন করেন, তাহলে বিষয়টি আমরা ভেবে দেখব।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, প্যারোলে মুক্তির জন্য একটি সুনির্দিষ্ট ও যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে আবেদন করতে হবে। তার প্যারোলে মুক্তির জন্য কোনো আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো পায়নি।

এরপর প্যারোলে মুক্তির জন্য বিএনপি চেয়ারপারসনের পক্ষে কোনো আবেদন করা হয়নি।

এ আলোচনার কয়েকমাস পর চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগে খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন খারিজ হয়। আপিল বিভাগে খারিজের কিছুদিন পর নতুন বছরের ৯ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্ট বারে এক সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম।

ওই সংবাদ সম্মেলনে খালেদা জিয়ার ‘সাজার কার্যকারিতা শর্তহীনভাবে স্থগিত’ করার বিষয়টি তুলে ধরে ফোরামের আহ্বায়ক জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেছিলেন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১(১) ধারা মোতাবেক কোনো সাজার কার্যকারিতা শর্তহীনভাবে স্থগিত করার একমাত্র ক্ষমতা সরকারের হাতে।

তিনি আশা ব্যক্ত করেন, সরকার প্রতিহিংসার পথ পরিহার করে আইনগতভাবেই চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারেন। এজন্য প্রয়োজন সরকারের সদিচ্ছা। তাই আমরা সরকারের কাছে অবিলম্বে খালেদা জিয়ার দণ্ডাদেশ ৪০১(১) ধারা অনুযায়ী স্থগিত করে তার ইচ্ছামতো চিকিৎসা নিতে দেশে/বিদেশে সুযোগ দেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

গত মাসের ১২ তারিখে এ বিষয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, সাধারণত দণ্ড সাসপেন্ড করা হয় অনেকদিন সাজা খাটার পরে সরকার বিশেষ বিবেচনায় এটা করে, করতে পারে। সে রকম কেস যদি তারা মেইক আউট করতে পারে, সেটা সরকারের ব্যাপার।

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে জিয়া অরফানেজ ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা করেছে দুদক। এ বিষয়ে দুদকের আইনজীবী খুরশীদ আলম খান গণমাধ্যমকে বলেন, দুদকের আইনে সাজা স্থগিতের বিষয়ে কোনো বিধান নেই। তাই এ মামলায় সাজা স্থগিতে সরকারের কোনো সুযোগ নেই।

ব্যর্থ বিএনপি

খালেদা জিয়া দুই বছর ধরে কারাবাসে অতিবাহিত করলেও তাকে মুক্ত করতে আইনি ও রাজনৈতিক কোনোভাবেই সফল নয় তার দল বিএনপি। তবে দলের নেতারা এই ব্যর্থতার দায় নিলেও দোষারোপ করছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকেও। সরকার চাইলেই খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলবে বলে মনে করেন তারা।

এ বিষয়ে সরকারকে দোষারোপ করে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের পরিস্থিতি এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ নেই, ঘরের মধ্যে সভা করলেও আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

আরও পড়ুন : দেশের মানুষ এখন কাতরাচ্ছে : রিজভী

বিএনপি নেতা ও সুপ্রিম কোর্ট বার সমিতির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, সরকার চাইলেই খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে পারে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় রাজনৈতিক কারণে তাকে কারাবন্দি করা হয়েছে। তাই সরকারের সদিচ্ছা ছাড়া আইনগতভাবে মুক্তি দেওয়া যাবে না। কারণ আমাদের বিচার ব্যবস্থাও অনেক সময় সরকারের ইতিবাচক ইচ্ছাই পূরণ করে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য আন্দোলনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলেও জানান দলের নেতারা। আর এ জন্য অপেক্ষায় আছেন সঠিক সময়ের।

ওডি/এএস

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড