মনিরুল ইসলাম মনি
আসন্ন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে ঘিরে বেজে উঠেছে ভোটের দামামা। আনুষ্ঠানিক প্রচার-প্রচারণা শুরু না হলেও কিছু প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকরা মাঠে রয়েছেন সরব।
সরেজমিনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে গিয়ে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আলেয়া সরোয়ার ডেইজির কর্মী-সমর্থকরা মাঠে তার প্রার্থীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তবে নিরপেক্ষরা মনে করছেন, ডেইজি ক্ষমতাসীন দলের মনোনীত প্রার্থী হওয়ায় আলোচনায় রয়েছেন।
এলাকার ভোটাররা মনে করছেন, ওয়ার্ডটিতে বিএনপির প্রার্থী থাকলেও ডেইজির সাথে মূল লড়াই হবে জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিকুল ইসলাম সেন্টুর। সেন্টু জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ওয়ার্ডটির কাউন্সিলর ছিলেন। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অন্ত নেই স্থানীয়দের। তিনি এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হয়েও দৃশ্যমান উন্নয়ন দেখেননি তারা।
কলাবাগান ক্রীড়া চক্রে ক্যাসিনো চালুর সঙ্গে তিনি জড়িত বলে অভিযোগ আছে। ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের পর তিনি সিঙ্গাপুর চলে যান। তবে পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে আবার লোকালয়ে ফেরেন বিতর্কিত এই কাউন্সিলর।
জানা গেছে, ২০১৬ সালে প্রথম ক্যাসিনোর অত্যাধুনিক মেশিন দিয়ে বাংলাদেশে প্রথম কলাবাগান ক্রীড়া চক্রে ক্যাসিনো চালু করলে পরের বছর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কলাবাগান ক্রীড়া সভাপতি সফিকুল আলম ফিরোজ ক্যাসিনোটি বন্ধ করে দেন।
২০১৫ সালের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কোনো উন্নয়নমূলক কাজের নজির নেই এই কাউন্সিলরের। ছিলেন না কোনো দখলমুক্ত উচ্ছেদ অভিযানে; উল্টো নিজে দখল করেছেন অনেক স্থাপনা। শুধু তাই নয় উত্তরে সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলরদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি অনুপস্থিত ছিলেন সেন্টু। তিনি ১২টি সভার একটিতেও উপস্থিত ছিলেন না। অথচ স্থানীয় সরকার আইন-২০০৯ অনুসারে কোনো কাউন্সিলর করপোরেশনের টানা তিনটি সভায় অনুপস্থিত থাকলে তাকে অপসারণ করা যাবে।
এ বিষয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে ১০ জন কাউন্সিলর এবং চারজন সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলরকে শোকজ করা হলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।
শফিকুল ইসলাম সেন্টুর বিরুদ্ধে স্থানীয় সন্ত্রাসীর লালন করার অভিযোগও রয়েছে। মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় দখল এবং চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে তার নিজস্ব বাহিনীর বিরুদ্ধে।
এ দিকে গত বছরের ২৮ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জন ও বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তার বিরুদ্ধে জমি, বাড়ি, অ্যাপার্টমেন্ট, মার্কেট দখল, অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ মেলার কথা জানায় দুদক।
নির্বাচন নিয়ে শফিকুল ইসলাম সেন্টুর সঙ্গে কথা বলার জন্য একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আর আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনীত আলেয়া সরোয়ার ডেইজি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত ১২ নম্বর আসনের আওতায় ৩১, ৩৩ এবং ৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন। সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর হওয়া সত্ত্বেও তিনি ঘুরে বেড়িয়েছেন পুরো ওয়ার্ডে। এমনকি অবৈধ উচ্ছেদ অভিযান করতে গিয়ে তাকে দখলদারদের রোষানলেও পড়তে হয়েছে কয়েকবার।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ডিএনসিসির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের তিনটি খেলার মাঠের দুটিতে সপ্তাহে একদিন করে ব্যবসায়ীরা দখলে নিয়ে হাট বসায়। আর এই ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তাদের খেলার মাঠ দখলের অনুমতি দেন স্থানীয় প্রভাবশালীদের একটি অংশ। সাধারণ কাউন্সিলর সেন্টু কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় সেই মাঠ দখলমুক্ত করে সেখানে পার্ক করার ঘোষণা দেন ডেইজি।
কাজ করতে গিয়ে কয়েকবার বিতর্ক ও তোপের মুখেও পড়তে হয়েছে তাকে। তার নেতৃত্বে তিনটি ওয়ার্ডের ফুটপাত ও পার্ক দখলমুক্ত হয়েছে। এটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে এলাকাবাসী।
ডেইজি সরোয়ার বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়ার্ড সত্ত্বেও এখানে বেশ কিছু সমস্যা রয়েছে। সংরক্ষিত আসনের কাউন্সিলর হিসেবে কাজের অনেক বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাই চাইলেও আমি অনেক কিছু করতে পারিনি। জনগণ যদি আমাকে ভোট দিয়ে কাউন্সিলর নির্বাচিত করে তাহলে আমি তাদের সমস্যা সমাধানে অবশ্যই কাজ করব। সেটিই আমার দায়িত্ব।
‘খেলার মাঠে মেলা বসত। আমি সেগুলোকে উচ্ছেদ করেছি। এখন শিশু কিশোররা মাঠে নির্বিঘ্নে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। আমি পুরো ওয়ার্ডে সিটিটিভি ক্যামেরার আওতায় আনতে চাই। যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। এতে চুরি-ছিনতাই বন্ধ হবে। প্রশাসনের সঙ্গে বসে আরও পদক্ষেপ গ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে।
তবে এখন পর্যন্ত ওয়ার্ডটির বিএনপি মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী মো. সাজেদুল হক খান রনির কর্মী-সমর্থকদের দেখা না গেলেও কাউন্সিলর পদে এখন পর্যন্ত আলোচনায় রয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া অপু ও সোহেল রানাসহ বেশ কয়েকজন।
ওডি/এমআই
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড