• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

এক শহীদ বিপ্লবী নারী: প্রীতিলতা

  শব্দনীল

০৫ মে ২০১৮, ১৩:৩৬

ভারতীয় উপ-মহাদেশের ব্রিটিশ বিপ্লবের ইতিহাসের পাতায় বাঙ্গালী প্রথম শহীদ নারী প্রীতিলতা। যিনি প্রীতিলতা ওয়াদ্দের নামেও পরিচিত। তিনি ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম নারী মুক্তিযোদ্ধাও।

চট্টগ্রামের বর্তমান পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামে ১৯১১ সালের ৫ই মে মঙ্গলবার জন্মগ্রহণ করেন প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার। তার পিতা জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার ছিলেন মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানী এবং মাতা প্রতিভাদেবী। এই দম্পতির ছয় সন্তানের মধ্যে প্রীতিলতা ছিলেন দ্বিতীয়। তাঁদের পরিবারের আদি পদবী ছিল দাশগুপ্ত। পরিবারের কোন এক পূর্বপুরুষ নবাবী আমলে “ওয়াহেদেদার” উপাধি পেয়েছিলেন, এই ওয়াহেদেদার থেকে ওয়াদ্দেদার বা ওয়াদ্দার। শৈশবে পিতার মৃত্যুর পর জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার তার পৈতৃক বাড়ি ডেঙ্গাপাড়া সপরিবারে ত্যাগ করেন। তিনি পটিয়া থানার ধলঘাট গ্রামে মামার বাড়িতে বড় হয়েছেন। আদর করে মা প্রতিভাদেবী তাকে “রাণী” ডাকতেন। পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম শহরের আসকার খানের দীঘির দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ে টিনের ছাউনি দেয়া মাটির একটা দোতলা বাড়িতে স্থায়ীভাবে থাকতেন ওয়াদ্দেদার পরিবার। প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ছেলেবেলায় অন্তর্মুখী, লাজুক এবং মুখচোরা স্বভাবের ছিলেন এবং মা-কে সংসারের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করতেন।

প্রীতিলতার প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিলো চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর সরকারী বালিকা বিদ্যালয়। ১৯১৮ সালে তিনি এই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন। তিনি সকল শিক্ষকদের খুব প্রিয় ছাত্রী ছিলেন। বলা যায় এখান থেকে বিপ্লবের পাঠ শুরু হয় তার।

যখন প্রীতিলতা শৈশব থেকে কৈশোরে পা রেখছিলেন তখন চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলনে সক্রিয় হচ্ছিলো। এর ভিতর ১৯২৩-এর ১৩ ডিসেম্বর টাইগার পাস মোড়ে প্রকাশ্য দিবালোকে সরকারী কর্মচারীদের বেতন বাবদ নিয়ে যাওয়া ১৭,০০০ টাকা ছিনতাই করেছিল সূর্য সেনের বিপ্লবী সংগঠনের সদস্যরা। এ ছিনতাইয়ের প্রায় দুই সপ্তাহ পর গোপন বৈঠক চলাকালীন অবস্থায় বিপ্লবীদের আস্তানায় হানা দিলে পুলিশের সাথে যুদ্ধের পর গ্রেফতার হন সূর্য সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় রেলওয়ে ডাকাতি মামলা। কিশোরী প্রীতিলতার মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম নেয় এই ঘটনার ফলে। স্কুলের প্রিয় শিক্ষক ঊষাদির সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই মামলার ব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে অনেক কিছুই জানতে পারেন প্রীতিলতা। তারপর থেকে বিভিন্ন বই পড়তে শুরু করেন। এরপর প্রীতিলতার দাদা পূর্ণেন্দু দস্তিদারের কাছে বিপ্লবী সংগঠনে যোগদান করার গভীর ইচ্ছার কথা বলেন। কিন্তু তখনো পর্যন্ত বিপ্লবীদলে মহিলা সদস্য গ্রহণ করা হয়নি। এমনকি নিকট আত্মীয় ছাড়া অন্য কোন মেয়েদের সাথে মেলামেশা করাও বিপ্লবীদের জন্য নিষেধ ছিলো। প্রীতিলতা ঢাকায় যখন পড়তে যান তখন “শ্রীসংঘ” নামে একটি বিপ্লবী সংঘঠনের সাথে পরিচিত হন। শ্রীসংঘের “দীপালী সঙ্ঘ” নামে একটি মহিলা শাখা ছিল। এই দলটি প্রকাশ্যে লাঠিখেলা, কুস্তি, ডনবৈঠক, মুষ্টিযুদ্ধশিক্ষা ইত্যাদির জন্য ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ক্লাব তৈরী করেছিল। লীলা নাগ (বিয়ের পর লীলা রায়) এর নেতৃত্বে এই সংগঠনটি নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য কাজ করত। গোপনে তাঁরা মেয়েদের বিপ্লবী সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করার কাজ ও করত। এখান থেকেই প্রীতিলতার বিপ্লবী কাজকর্ম শুরু হয়।

তৎকালীন পূর্ববঙ্গে জন্ম নেয়া এই বাঙালি বিপ্লবী সূর্য সেনের নেতৃত্বে তখনকার ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং জীবন বিসর্জন করেন। ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব দখলের সময় তিনি ১৫ জনের একটি বিপ্লবী দল পরিচালনা করেন। এই ক্লাবটিতে একটি সাইনবোর্ড লাগানো ছিলো যাতে লেখা ছিলো "কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ"। প্রীতিলতার দলটি ক্লাবটি আক্রমণ করে এবং পরবর্তিতে পুলিশ তাদের আটক করে। পুলিশের হাতে আটক এড়াতে প্রীতিলতা সায়ানাইড গলাধঃকরন করে আত্মহত্যা করেন।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড