প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে যা বলেছে বিএনপি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি ভারত সফর করে এসেছেন। এসময় বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে হওয়া চুক্তিগুলো দেশবাসীকে জানাতে চিঠি দিয়েছে বিএনপি।

রবিবার (১৭ নভেম্বর) বেলা পৌনে ১২টার বিএনপি মহাসচিব স্বাক্ষরিত এ চিঠি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে গিয়ে জমা দেন দলের যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও খায়রুল কবির খোকন। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহযোগী ও আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া চিঠি গ্রহণ করেন।

প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া বিএনপির চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়ার মাধ্যেমে আমরা (বিএনপি) জানতে পেরেছি, আপনি (প্রধানমন্ত্রী) সর্বশেষ ভারত সফরের সময় (৫ অক্টোবর) দেশটির সঙ্গে ৭টি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই করেছেন। এছাড়া একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে ত্রিপুরায় এলপিজি রপ্তানি বিষয়সহ তিনটি প্রকল্প উদ্বোধন করা হয়েছে মর্মে প্রকাশ। প্রকৃতপক্ষে এ সফরের সময় ভারতের সঙ্গে সর্বমোট কয়টি চুক্তি/সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে সে বিষয়ে জনগণ অবহিত নয়।’

‘এরইমধ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মিডিয়া এবং সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমে এসব চুক্তিকে জনগণের স্বার্থের পরিপন্থী তথা বাংলাদেশবিরোধী চুক্তি হিসেবে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে নির্বিকার। অপরদিকে স্বাক্ষরিত এসব চুক্তিকে জাতীয় স্বার্থবিরোধী মর্মে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ায় বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়।’

‘ভারত দীর্ঘদিন ধরে তিস্তা নদীর পানি সংক্রান্ত চুক্তি ঝুলিয়ে রেখেছে। অথচ ফেনী নদী থেকে ভারতকে পানি উত্তোলনের চুক্তি, বাংলাদেশের উপকূলে ভারতের সার্বক্ষণিক নজরদারিতে সহযোগিতা বিনিময়ের নামে ভারতকে আমাদের উপকূলে রাডার স্থাপনে চুক্তি এবং মোংলা ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের মতো স্পর্শকাতর জাতীয় নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট চুক্তি সই করার পূর্বে বিষয়টি নিয়ে কখনো কোনো ধরনের পাবলিক ডিবেট অনুষ্ঠিত হয়নি কিংবা বাংলাদেশের জনগণের মতামত গ্রহণ করা হয়নি।’

‘বাংলাদেশের সংবিধানের আর্টিকেল ১৪৫ (ক)-তে উল্লেখ রয়েছে, বিদেশের সঙ্গে সম্পাদিত সব চুক্তি রাষ্ট্রপতির নিকট পেশ করা হবে এবং রাষ্ট্রপতি তা সংসদে পেশ করার ব্যবস্থা করবেন। তবে শর্ত হচ্ছে যে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট অনুরূপ কোনো চুক্তি কেবলমাত্র সংসদের গোপন বৈঠকে পেশ করা হবে। কিন্তু ভারতের সঙ্গে যেসব চুক্তি সই করা হলো তার কোনোটিই জনসম্মুখে কিংবা জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়নি। এর ফলে রাষ্ট্রের সব ক্ষমতার মালিক জনগণই এসব চুক্তির খুঁটিনাটি এবং বিস্তারিত বিবরণ সম্পর্কে পুরোপুরি অন্ধকারে রয়েছে। অথচ এসব জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ চুক্তির বিষয়ে অবহিত থাকা জনগণের মৌলিক অধিকার, যে অধিকার থেকে জনগণকে বঞ্চিত রাখা স্পষ্টতই সংবিধানের লঙ্ঘন।’

প্রকৃতপক্ষে ভারতসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সম্পাদিত চুক্তিগুলো সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা হয়নি। এমতাবস্থায় সংবিধানের ১৪৫(ক) অনুযায়ী ভারতসহ অন্যান্য রাষ্ট্রের সঙ্গে স্বাক্ষরিত সব চুক্তির পূর্ণবিবরণী অনতিবিলম্বে জাতীয় সংসদ ও জনসম্মুখে প্রকাশ করে জনমনে সৃ্ষ্ট নানাবিধ প্রশ্ন ও সন্দেহ দূর করার আহবান জানাচ্ছি।’

ওডি/এমআর