অধিকার ডেস্ক
এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের মহানায়ক শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করে তোপের মুখে পড়েন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। তবে ব্যক্তিগত ক্ষোভ থেকে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে সকলের কাছে ক্ষমাও চেয়েছেন রাঙ্গা।
সোমবার (১১ নভেম্বর) রাতে বেসরকারি এক টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্যের কারণ জানিয়ে ক্ষমা চান রাঙ্গা।
সাক্ষাৎকারে জাপা মহাসচিব বলেন, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ মারা যাওয়ার পরও তাকে স্বৈরাচার বলে অপমান করা হয়। সেই ক্ষোভ থেকেই বিতর্কিত কিছু শব্দ ব্যবহার করেন রাঙ্গা।
সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে রাঙ্গা প্রশ্ন তুলে বলেন, এক সাথে জোট করে এরশাদকে স্বৈরাচার বলা কতটা যৌক্তিক। এরশাদ সাহেব মারা যাওয়ার পরও তাকে যেভাবে আওয়ামী লীগ থেকে অপমান করা হয়, সেটা মেনে নেওয়া যায় না। এই বিষয়ে বিহীত করতে শিগগিরই প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎ চাইবেন বলেও জানান তিনি।
রাঙ্গা আরও জানান, আমরা দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জোটগতভাবে আছি। আমরা একসঙ্গে আছি। আর একসঙ্গে থাকতে চাই।
এ দিকে আরেকটি গণমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জাতীয় পার্টির মহাসচিব বলেন, ‘নূর হোসেন যখন মারা গেছেন, তখন ইয়াবা বা ফেনসিডিল পাওয়া যেত না। এই দুটি শব্দ স্লিপ অব টাং হয়ে গেছে। তবে সে সুস্থ প্রকৃতির মানুষ ছিল না। মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল।’
নূর হোসেনের বুকেপিঠে ‘গণতন্ত্র মুক্তি পাক’ লেখা প্রসঙ্গে রাঙ্গা বলেন, ‘এসব কথা তো আপনি আপনার বুকে আঁকতে বা লিখতে পারেন না। কেউ না কেউ এটা লিখে দিয়েছে। একজন সুস্থ প্রকৃতির মানুষ এটি কোনো সময় করতে পারেন না। সে মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। এটা কেউ না কেউ সাবোটাজ করে করেছে। একটা লাশের দরকার ছিল। সেটা তারা করেছে। একইভাবে আমরা ডাক্তার মিলন হত্যারও প্রতিবাদ করেছি। তাকেও পেছন থেকে গুলি করা হয়েছে। এগুলো হলো রাজনীতির আলোচনা।’
জাপা মহাসচিব বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যতদিন ক্ষমতায় ছিলেন, ততদিন নূর হোসেনের পরিবারকে তিনি প্রত্যেক মাসে ৫ হাজার টাকা করে দিতেন। তার বাবা এসে টাকা নিয়ে যেতেন।’
নূর হোসেনের পরিবার রাঙ্গার বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানালে জাপা মহসচিব বলেন, ‘এখন তারা মামলা করলে করতে পারে। মামলা তো যে কেউ করতে পারেন। দেশে আইন-কানুন তো আছেই।’
গত ১০ নভেম্বর জাতীয় পার্টির বনানী কার্যালয়ে গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় শহীদ নূর হোসেনকে মাদকাসক্ত বলে আখ্যায়িত করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা।
শহীদ নূর হোসেনকে নিয়ে রাঙ্গা বলেন, নুর হোসেন ইয়াবাখোর ফেনসিডিলখোর ছিলেন। যারা গণতন্ত্রের গ ও বুঝে না, সেই অ্যাডিক্টেড ছেলেকে নিয়ে নাচানাচি করছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। তাদের কাছে ইয়াবা-ফেনসিডিলখোর ও ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের গুরুত্ব বেশি। এরশাদ সাহেবের কাছে এরা কোনো গুরুত্ব পায়নি।
নূর হোসেনের হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, পুলিশ গুলি করল সামনে থেকে আর ঘুরে গিয়ে পেছন থেকে লাগল। কি হাস্যকর যুক্তি। তখন তো একজন মারা গেছে, এখন প্রতিদিনই মানুষ মরছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচারী শাসক বলে মন্তব্য করে জাপা মহাসচিব বলেন, এরশাদ স্বৈরাচার ছিলেন না। খালেদা জিয়া স্বৈরাচার। খালেদা স্বৈরাচার হলে শেখ হাসিনাও স্বৈরাচার।
তিনি আরও বলেন, এরশাদের অনুগ্রহে একুশ বছর পর ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। আর সেই আওয়ামী লীগ তার বিরুদ্ধে মামলা দেয়। নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করে।
জাতীয় পার্টির এই নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ বিএনপি গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। ওদের মুখে গণতন্ত্র মানায় না। আগে গণতন্ত্র বুঝতে হবে। এই গণতন্ত্র মুখে দেয় নাকি মাথায় দেয়।
ওডি/এআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড