• বুধবার, ০৮ মে ২০২৪, ২৫ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ : মানুষের অধিকার বড়, নাকি রাষ্ট্রের শাসন?

  সাদিয়া ইসলাম বৃষ্টি

১৬ জুন ২০১৯, ১৩:২৬
ব্যক্তিস্বাতন্ত্রবাদ
ছবি : প্রতীকী

দেশ আর সমাজ, মানুষের মিশেলে তৈরি হওয়া রাষ্ট্র যে অনেক বেশি গুরুত্ব রাখে তা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। তবে, এই সবকিছুর চাইতে মানুষকে এগিয়ে রেখেছে ইনডিভিজুয়ালিজম বা ব্যক্তিবাদ। ইউরোপের রাজা-রানিরা এখন ক্ষমতার ভাগাভাগি করে নিয়েছেন জনগণের সাথে। একটা সময় ব্যাপারটি এমন ছিল না। মানুষ নয়, প্রাধান্য পেত রাষ্ট্র। কিন্তু মানুষ মিলেই যখন রাষ্ট্রের চাকা ঘোরায়, তখন কেন সেই মানুষকেই পিছিয়ে রাখা? এমন এক পটভূমিতেই মানুষের মাথায় এসেছে মানুষকে এগিয়ে রাখার চিন্তাধারা, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ বা ব্যক্তিবাদ।

মানুষ হাসবে, গাইবে, খেলবে। নিজের মতামত জানাবে, যেখানে ইচ্ছে চলেফিরে বেড়াবে। তার এই জীবনে রাষ্ট্রের নাক গলানোর অধিকারকে সীমিত রাখা প্রয়োজন। এটাই ছিল এই মতবাদের মূল কথা। মানুষ এতো স্বাধীনতা পেলে বেচারা রাষ্ট্রের কী হবে? সে উত্তরও দিয়েছেন এই মতবাদে বিশ্বাসীরা।

রাষ্ট্রযন্ত্র তো মানুষের উপরে ভিত্তি করে সচল রয়েছে। তাই মানুষকে দমিয়ে রাখলে রাষ্ট্রও দমে যাবে- এমনটাই ভেবেছেন তারা। রাষ্ট্র কোনো মনিব নয়। বরং, মানুষকে সুস্থ ও স্বাভাবিকভাবে সমাজে চলার পথে সাহায্য করা একটি বন্ধু মাত্র। চিন্তাটি কি খুব একটি ভুল? প্রশ্নটা তোলা থাকলো আপনার জন্য।

সামাজিক চুক্তির নানাবিধ তত্ত্ব রয়েছে। ইংল্যান্ডে সেটা সপ্তদশ শতকের কথা, আর ফ্রান্সে অষ্টদশ শতক। সেসময় এই সামাজিক চুক্তির উপর ভিত্তি করে আসতে থাকে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবাদ তত্ত্বগুলো। আগে ঈশ্বর বা রাজাকে রাষ্ট্র নির্মাণের অগ্রদূত মনে করা হলেও পরে তত্ত্ব দেওয়া হয় যে, মানুষের জন্য আর মানুষের চাহিদাতে, মানুষের দ্বারাই এসেছে রাষ্ট্র।

ধীরে ধীরে এই তত্ত্ব অর্থনৈতিক স্বাধীনতার ব্যাপারগুলো মিশতে থাকে। একসময় অ্যাডাম স্মিথের মতো মানুষের ছায়ায় আরো শক্তিশালী হয় এই তত্ত্ব। সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক- নানাদিক দিয়ে এই তত্ত্বকে পরিপুষ্ট ও প্রস্তুত করতে শুরু করেন দার্শনিকেরা। এসময় কাজের অন্যতম পুরোধা হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন জন স্টুয়ার্ট মিল ও হার্বার্ট স্পেন্সার। মানুষ ধীরে ধীরে উদার মনোভাবের অধিকারী হওয়ার কথা শিখতে শুরু করে।

এ নিয়ে থমাস হবস, রুশো আর জন লকও নিজেদের লেখা ও বইয়ে নানারকম কথা বলেছেন। সামাজিক চুক্তিকে মাঝখানে রেখে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যকে আরো পরিষ্কার করে দেখতে চেয়েছেন তারা। বলা হয়, এই মতের উপরে ভিত্তি করেই ঘটে গিয়েছিল ইংক্যাল্ডের ১৬৪৯ এবং ১৬৮৮ সালের বিপ্লব, ১৭৭৬ সালের আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ ও ১৭৮৯ সালের ফরাসি বিপ্লব।

পুঁজিবাদ এবং ব্যক্তিকে প্রাধান্য দেওয়ার ব্যাপারটিতে বেশ মিল আছে। আর এই মিলের উপরে ভিত্তি করেই হাতে হাত রেখে এগিয়ে গিয়েছে তারা। রাষ্ট্রকে একরকম অচল করে দেওয়ার মতো চিন্তাও খেলা করেছে অনেকের মনে। সার্বভৌমত্ব রাষ্ট্রের নয়, মানুষ ও মানুষের তৈরি সরকারের- এমনটা ভাবা হয়েছে। অবশ্য প্রথমে খুব উৎসাহ থাকলেও, পরবর্তীতে একটু একটু করে পুঁজিবাদ এবং পুরোপুরি রাষ্ট্রকে অচল করে দেওয়ার নেতিবাচক দিকগুলো সবার চোখে পড়তে শুরু করে। শুরু হয় বেকার সমস্যা, একনায়কতান্ত্রিক সরকারের আধিপত্য, নির্যাতন ও দূর্গতি।

একটু একটু করে সবাই বুঝতে শুরু করে যে, ব্যক্তিবাদ ভালো ব্যাপার। তবে, রাষ্ট্রেরও সেখানে উপস্থিত থাকার দরকার আছে। রাষ্ট্র শুধু শাসনের যন্ত্র নয়। এতে জড়িয়ে আছে অনেক অনেক ছোট ছোট অংশ, যেগুলো মানুষ ও মানবজীবনের ভালোর জন্যই প্রয়োজন।

কখনো রাষ্ট্র ব্যক্তির স্বেচ্ছাচারিতাকে দমিয়ে সবার মধ্যে শান্তি বজায় রাখবে। আবার কখনো রাষ্ট্রের অনুচিত কার্যক্রমকে ব্যক্তি রুখে দেবে। এভাবেই পুরো ব্যাপারটি পরিচালিত হওয়া প্রয়োজন।

সূত্র- টেক্সটবুক।

ওডি/এনএম

মানুষের অধিকার নিয়ে লিখবে অধিকার; লিখুন আপনিও। আপনার চারপাশে অধিকার বাস্তবায়নে আপনিও সচেষ্ট হোন, জানান সরাসরি দৈনিক অধিকারকে [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড