• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

অমরত্ব নয় দরকার স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার

প্রতি মিনিটে বিশ্বে একজন অস্বাভাবিক কারণে মারা যায়

  এস এম সোহাগ

০৫ নভেম্বর ২০১৮, ১৯:৩৩
মানুষ জন্মের পরে মৃত্যুকে নিশ্চিত জেনেই জীবন অতিবাহিত করতে থাকে, তবে ধ্রুব সত্য এই মৃত্যু হোক স্বাভাবিক। ছবি : সম্পাদিত

'জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা কবে, চিরস্থির কবে নীর, হায় রে, জীবন-নদে?'

কবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘বঙ্গভূমি’ কবিতা থেকে নেয়া, মৃত্যুর স্বাদ জীব মাত্রই নিতে হবে। মানুষ জন্মাবে, মানুষ মরবে, প্রকৃতির সবচেয়ে স্পষ্ট নিয়ম। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী মোট জনসংখ্যা ৭৬৬ কোটি ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ২২১ জন। প্রতি ২ সেকেন্ডে পৃথিবিতে জন্ম নেয় ৩ জন আর মৃত্যু হয় ২ জনের। অর্থাৎ প্রতিদিন প্রায় ৩ লাখ মানুষের জন্ম হয় আর মারা যায় প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার, ফলশ্রুতিতে বৈশ্বিক জনসংখ্যার তারতম্য প্রায় দেড় লক্ষাধিক।

প্রতিবছর বিশ্বে প্রায় ৫ কোটি মানুষ মারা যায় নানা কারণে, দুর্ভাগ্য হলেও সত্য হলো যার মধ্যে অস্বাভাবিক মৃত্যু সিংহভাগ। স্বাভাবিক মৃত্যু আমাদের যতটা না নাড়া দেয় অস্বাভাবিক মৃত্যু আমাদের মধ্যে তারচেয়ে বেশি দাগ ফেলে যায়। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার মতে ২০১৬ সালে বিশ্বে সহিংসতার ফলে মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় ৫ লাখ ৬০ হাজার, যে হিসাবে প্রতি মিনিটে কেউ না কেউ সহিংসতার কারণে মারা যায়।

মানুষের জন্মের সঙ্গে একটি লক্ষ্য নির্ধারণ করে আসে এই ধরণীতে, তা হলো মৃত্যু। বৈজ্ঞানিক কি ধর্মীয় কোথাও এর ব্যত্যয় ঘটে না, সর্বত্র মৃত্যুকে মানব জীবনের একমাত্র চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রতিটি মানুষের জন্মের পরে যে জীবন শুরু হয় তা মৃত্যুর মাধ্যমে সমাপ্তি ঘটে। মৃত্যু প্রতিটি জীবের জন্যে যেমন অনিবার্য, মানুষের জন্যে জীবনের স্বাভাবিক সমাপ্তি নিশ্চিত করাটা প্রতিটা রাষ্ট্রের একটা মৌলিক দায়িত্ব।

ছবি : সম্পাদিত

মানুষ বাঁচতে চায়, কিছু মানুষ বাদে পৃথিবীর প্রায় সব মানুষই বাঁচতে চায়, হতে চায় অমর। কিন্তু, মৃত্যুই সবচেয়ে চরম সত্য। আজ পর্যন্ত মৃত্যুর হাত থেকে কেউ রক্ষা পায়নি, ভবিষ্যতেও পাবে না। এই চরম সত্যিটা জেনেও আমরা মরতে চাই না। তারপরেও প্রস্তুত থাকি, একদিন তো মরতে হবেই। আর মৃত্যুটা হবে স্বাভাবিক এই আশা নিয়েই বেঁচে থাকি।

জীবন ও মৃত্যু একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত। এই পৃথিবীর রূপ, রস, গন্ধ, শব্দ, স্পর্শ জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত পেতে চাই। পৃথিবীতে হাজারো অনিয়ম থাকলেও এই পৃথিবী চির মাধুর্যমণ্ডিত। পৃথিবীর প্রতিটি বস্তু, প্রাণিকে আমি ভালোবাসি। এ ভালোবাসা যে অন্তহীন।

মানুষ আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি জীব। মানুষের মন, বিবেক, বুদ্ধি, শিক্ষা, পাপ-পূণ্যের হিসাব বোধ আছে। এই পাপ পূণ্যের মাঝেই মানুষের ইহকাল পরকালের হিসাব নিয়ে বেঁচে থাকা। উপনিষদদের‌ ভাষায় মানুষ অমৃতের সন্তান। বাইবেল বলে, সে ঈশ্বরের সন্তান। কুরআনের ভাষায় এক আদমের সন্তান, আশরাফুল মাখলুকাত সৃষ্টির সেরা জীব। আর এই সৃষ্টির সেরা জীব মানুষতত্ত্ব ধর্ম ভুলে অসংখ তন্ত্র, মন্ত্র, জাতি, গোত্র, মতবাদে বিভক্ত। লিপ্ত হয়েছে হানাহানিতে। জীবন সত্যকে টুকরো টুকরো করে কেটে বন্টন করেছে। মৃত্যু দেওয়ার মালিক প্রাণ দাতার। মানুষ হিংস্রতার আশ্রয়ে স্বাভাবিক মৃত্যুকে অস্বাভাবিক মৃত্যুতে ঠেলে দেয়।

মহাভারতে উল্লেখ আছে, যক্ষ রূপি ভগবান একদিন যুধিষ্ঠিরকে জিজ্ঞেস করল,”বলো দেখি পৃথিবীতে আশ্চার্য কি? উত্তরে যুধিষ্ঠির বলিল, প্রত্যেক দিনই পৃথিবীতে হাজারো মানুষ মরছে, কিন্তু সকলেই বাঁচতে চায়, অন্যায় করে, খুন করে, লোভ করে, জমি দখল করে, হানাহানি, ধর্ম-জাতি নিয়ে বিবেধ সৃষ্টি করে। এটাই আশ্চর্য।

ছবি : সম্পাদিত

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গ্লোবাল ক্যাম্পেইন ফর এডুকেশনের (জিসিই) ভাইস প্রেসিডেন্ট রাশেদা কে চৌধুরী বলেছেন, রাষ্ট্র মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার নিশ্চিত করতে পারছে না। সন্ত্রাস এখন আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে আপারগ্রাউন্ডে উঠে এসেছে, যা ব্যাধির মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। শিঘ্রই এটি রোধ করা না গেলে দেশের সব অর্জন বৃথা যেতে পারে। গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে এক আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ইনিশিয়েটিভ ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট (আইএইচডি) ও জাতীয় শিক্ষক কর্মচারী ফ্রন্ট (এনএফটিই) যৌথভাবে এ গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে।

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, সন্ত্রাসী ধরা হয় কিন্তু বিচার হয় না। সন্ত্রাসী ধরার সঙ্গে সঙ্গে তৈরি হয় ধূম্রজাল। এ যাবত একজন সন্ত্রাসীরও বিচার হয়নি। এই বিচারহীনতার কারণেই সন্ত্রাসের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। ফলে পরিস্থিতি হচ্ছে ভয়াবহ। তিনি আরও বলেন, আজ প্রমাণ হচ্ছে অবৈধ উপার্জনকারীর ঘরে মূল্যবোধ তৈরি হয় না।

অস্বাভাবিক মৃত্যু কি?

মানুষ যেদিন জন্মে সেদিন থেকেই তার মৃত্যুর জন্যে জীবন অতিবাহিত হতে থাকে, মৃত্যু প্রায় সর্বদাই অনাকাঙ্ক্ষিত,তবুও অপ্রতিরোধ্য এই মৃত্যু স্বাভাবিকভাবেই আশা করা হয়। বৃদ্ধ বয়সে মানুষ মারা যাবে সেটাকে আমরা স্বাভাবিক মৃত্যু বলি। দুর্ঘটনা, রোগ, সহিংসতা, খুনসহ এমন অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত কারণে যদি মানুষের মৃত্যু ঘটে তাহলে তাই হবে অস্বাভাবিক মৃত্যু। প্রতিটা মানুষের স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার থাকলেও রোজ বিশ্বে সহস্রাধিক মৃত্যু ঘটে অস্বাভাবিক কারনে।

বিশ্বে মৃতের সংখ্যা ও কারণ

বিশ্বব্যাপী প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে, স্বাভাবিক-অস্বাভাবিক যে কোনো কারণেই হোক মানুষ মরছে। মানুষের মৃত্যু সর্বদাই খুব ব্যথিত করে, আর তা যদি হয় অস্বাভাবিক কারণে তবে সেই কষ্টের সীমা থাকে না। অস্বাভাবিক মৃত্যুর বহু ধরন আছে, রোগ, সহিংসতা,দরিদতা, ক্ষুধা, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ এমন অনেক কারণে রোজ মানুষ মরছে। এসবই হলো অস্বাভাবিক কারণ, অস্বাভাবিক কারণে মৃত্যুর সংখ্যা রোজ বাড়ছে।

ছবি : গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ

রোগ :

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ২০১৭ সালে অস্বাভাবিকভাবে লাখ লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। যাদের মধ্যে উপরের অবস্থানে থাকার কারণ হলো- রাজনৈতিক সহিংসতা, দুর্ঘটনা, হৃদরোগ, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন জীবাণুবাহিত রোগ।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে অবস্থিত ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন, বিশ্বব্যাংক ও ল্যানসেটের যৌথ বিশ্লেষণে মৃত্যুর প্রধান পাঁচটি কারণ চিহ্নিত করা হয়েছে। মৃত্যুর অন্য তিনটি প্রধান কারণ হচ্ছে দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ (সিওপিডি), ডায়াবেটিস ও শ্বাসতন্ত্রের নিচের অংশের সংক্রমণ (লোয়ার রেসপিরেটরি ইনফেকশন)।

১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ১৯৫টি দেশ ও ভৌগোলিক অঞ্চলের ৩০০ রোগ ও আঘাতের তথ্য নিয়ে এই বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিশ্লেষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত গবেষকেরা বলছেন, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা, টিকা কর্মসূচি, ঘরের অভ্যন্তরীণ বায়ুর মান এবং পুষ্টির উন্নতি দরিদ্র দেশগুলোর শিশুদের দীর্ঘদিন বাঁচার সুযোগ করে দিয়েছে। পাশাপাশি স্থূলতা, রক্তে উচ্চমাত্রায় শর্করার উপস্থিতি, মদ্যপান ও মাদকের অপব্যবহার বিশ্বব্যাপী বড় ধরনের স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে।

মৃত্যুর কারণ হিসেবে ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশন, বিশ্বব্যাংক ও ল্যানসেটের যৌথ বিশ্লেষণ যে ৫ টি রোগের কথা বলা হয়েছে তা হলো যথাক্রমে : ১. মস্তিষ্কের রক্তনালির রোগ ২. হৃৎপিণ্ডের রক্তনালির রোগ ৩. দীর্ঘস্থায়ী শ্বাসতন্ত্রের রোগ ৪. ডায়াবেটিস ৫. শ্বাসতন্ত্রের নিচের অংশের সংক্রমণ।

ছবি : সম্পাদিত

ইনস্টিটিউট ফর হেলথ ম্যাট্রিকস অ্যান্ড ইভ্যালুয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ১২০টি দেশের ১ হাজার ৮০০'র বেশি বিজ্ঞানী ও গবেষক এই বিশ্লেষণে অংশ নিয়েছেন। বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর কারণ, মাতৃমৃত্যু, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যু, সার্বিকভাবে রোগের প্রকোপ, প্রতিবন্ধিতা নিয়ে বসবাস এবং ঝুঁকির কারণ নিয়ে ছয়টি নিবন্ধ তৈরি হয়েছে। ৮ অক্টোবর এসব নিবন্ধ প্রভাবশালী জনস্বাস্থ্য ও চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে ছাপা হয়েছে।

সহিংসতা :

গ্লোবাল ভায়েন্টেন্ট ডেথস ২০১৭ : ছোট অস্ত্র জরিপের একটি নতুন প্রতিবেদন লেখার সময় দেখায় যে, বিশ্বব্যাপী সংঘর্ষের হার হ্রাস পেলেও, ২০০৪ সাল থেকে প্রথমবারের মতো বিশ্বব্যাপী গণহত্যার হার বেড়েছে। যদিও এটি মৃত্যুর একটি নতুন প্রবণতা নির্দেশ করে না, এটি দ্বান্দ্বিক অঞ্চলে মৃত্যুর অস্বাভাবিক কারণের এক ঝুকিপূর্ণ সংকেত। ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ মৃত্যুহারের পাঁচটি দেশের মধ্যে সিরিয়া, এল সালভাডর, ভেনিজুয়েলা, হন্ডুরাস এবং আফগানিস্তান যাদের মধ্যে মাত্র দুটি অঞ্চলে সক্রিয় সশস্ত্র সংঘর্ষ বিদ্যমান ছিল।

‘আল-জাজিরা’র এক প্রতিবেদনে দেখানো হয়, বর্তমান শতাব্দীতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যস্ত দেশ ইয়েমেন। যেখানে সৌদি-আমিরাত জোট, পশ্চিমা সমর্থিত সরকারি বাহিনীর সঙ্গে হুদি বিদ্রোহীদের মধ্যকার সংঘর্ষে নিয়মিত মানুষ মারা যাচ্ছে, দেশটিতে দুর্ভিক্ষ বিস্তার করছে। চলতি বছর ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে জানানো হয় শুধুমাত্র ইয়েমেনে সহিংসতা ও সহিংসতার ফলে সৃষ্ট দুর্ভিক্ষে প্রায় ৪ লাখ শিশু মৃত্যু ঝুঁকিতে রয়েছে।

সহিংসতার বর্তমান প্রবণতা যদি অপরিবর্তিত থাকে তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে সহিংস মৃত্যুর বার্ষিক সংখ্যা ৬ লাখ ৩০ হাজার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। অন্যভাবে যুদ্ধে জড়িত রাষ্ট্রগুলি যদি তাদের অঞ্চলে মৃত্যুর প্রবণতা হ্রাস করে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে এই মৃত্যুর সংখ্যা ৪ লাখ ৮ হাজারে নামিয়ে আনা সম্ভব বলে এই গবেষণায় দেখা গেছে। ভিশন ২০৩০ এর ১৭ টি পদক্ষেপের কার্যকরি বাস্তবায়ন করা গেলে সহিংস মৃত্যুর হাত থেকে আগামী ১২ বছরে আনুমানিক ১৪ লাখ মানুষের প্রাণ বাঁচানো সম্ভব হবে।

ছবি : সম্পাদিত

দুর্ঘটনা :

প্রতিটি মানুষ নিজের স্বজন রেখে নানান কাজে ঘরের বাহিরে যায়, তার ফেরার প্রতীক্ষায় থাকে পরিবারের মানুষ, প্রিয় সব মানুষ। সেই প্রিয় মানুষ ঘরে না ফিরে আসলে যে অপূরণীয় ক্ষতি হয় তা অবর্ননীয়। একটি দুর্ঘটনা শুধু একটি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয় না, তার সঙ্গে জড়িত প্রতিটা মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়।

বাংলাদেশের সবচেয়ে জটিল সমস্যার একটি দুর্ঘটনা, ২০১৬ সালে জার্মান গণমাধ্যম ‘ডয়েচভেলে’র একটি প্রতিবেদনে বাংলাদেশে দুর্ঘটনার মর্মান্তিক চিত্র তুলে ধরে। বাংলাদেশে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৪ জন নিহত হয়৷ আর এই সংখ্যা বিভিন্ন দুর্ঘটনায় নিহতদের সংখ্যার মধ্যে সর্বোচ্চ৷ সেন্টার ফর ইনজ্যুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি)-এর জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে

‘বাংলাদেশ হেলথ ইনজুরি সার্ভে-২০১৬ (বিএইচআইএস)' শিরোনামে এই জরিপ পরিচালনা করা হয়। প্রকল্পের পরিচালক ফারুক আহমেদ ভুইয়া বলেন, ‘আমরা দুর্ঘটনায় এবং আঘাতে মৃত্যু নিয়ে এই জরিপ চালিয়েছি৷ তাতে দেখা যায়, প্রতি বছর বাংলাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ২৩ হাজার ১৬৬ জন নিহত হন৷ আর তাতে প্রতিদিন গড়ে নিহতের সংখ্যা ৬৪ জন৷’

ছবি : সংগৃহীত

২০১৬ সালের তথ্য নিয়ে করা জরিপে দেখা যায়, প্রতি বছর আত্মহত্যা কারণে ২৩ হাজার ৮৬৮ জন, পানিতে ডুবে মারা যায় ১৯ হাজার ২৪৭ জন, উচু স্থান থেকে পড়ে মারা যায় ১৫ হজার ৪৫ জন, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ৯ হাজার ২১০ জন এবং সরাসরি হত্যাকাণ্ডের শিকার হন ৬ হাজার ৪৭৫ জন৷

এর আগে ২০০৩ সালে একটা জরিপ করা হয়েছিল৷ তাতে প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় শিশু (১৮ বছরের নিচে) শিশু মারা যায় ৯ জন। কিন্তু এবারের জরিপে সেই সংখ্যা ১৪ জন৷ প্রতিদিন ১৪ টি শিশু সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হলেও প্রাপ্ত বয়স্ক নিহত হন ৫০ জন৷ নিহতের হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাপ্ত বয়স্ক নিহতের সংখ্যা সর্বোচ্চ। সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা অপঘাতে প্রতিদিন বাংলাদেশে ৩০০ মানুষ নিহত হন৷ পঙ্গু হন ৬৬০ জন।

প্রতিদিন মানুষ জন্মাবে, প্রতিদিন মানুষ মরবে, এটাই জগতের সবচেয়ে ধ্রুব সত্য। প্রকৃতির এই নিয়মের বাহিরে কিছু নেই, কেউ নেই। প্রকৃতির নিয়মে মানুষ যেভাবে জন্ম নেয় সেভাবে মানুষের প্রাণ-ত্যাগের ও অধিকার রয়েছে।স্বাভাবিক মৃত্যু সবার অধিকার, কেউ ই হয়তো মরতে চায় না, কিন্তু মরতে হবেই, তবে সেই মৃত্যু যদি হয় অস্বাভাবিক তাহলে সেই কষ্টের সীমা থাকে না। মৃত্যু হোক স্বাভাবিক, প্রত্যেক জীবের মৃত্যুই স্বাভাবিক হোক। স্বাভাবিক মৃত্যুর অধিকার নিশ্চিত হওয়া আবশ্যক।

ছবি : সম্পাদিত

চার দশক আগে নির্মল সেন দাবি জানিয়েছিলেন, ‘স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি চাই’। এত বছর পরেও এই দাবি পূরণ হয়নি। কিন্তু এটাই তো একটি সভ্য গণতান্ত্রিক সমাজের নাগরিকদের ন্যূনতম দাবি। আমাদের নাগরিকদের অস্বাভাবিক মৃত্যুর বহু পথ চালু রেখেছে এ দেশের ক্ষমতাবানেরা। হরতাল, অবরোধ বা রাজনৈতিক সহিংসতা ছাড়াও তার কমতি নেই। অসিত সরকার অনুদিত পাবলো নেরুদার ‘নিঃসঙ্গ মৃত্যু’ কবিতা থেকে কিছু লাইন তুলে ধরা হলো :

‘কখনো কখনো, একা, আমি দেখি কফিনগুলো খোলা পালে বিবর্ণ মৃতদের বয়ে নিয়ে চলেছে, মৃত কুন্তলে জড়ানো নারী, দেবদূতের মতো শুভ্র রুটিওয়ালা, বিষণ্ন কেরানীবধূ, কফিনগুলো নেমে গেলো মৃত্যুর খাড়াই নদীতে, মদিরার মতো রক্তবর্ণ গাঢ় নদী, দারুণ খরস্রোতা, মৃত্যুর শব্দে পালগুলো ফুলে উঠছে পালগুলো ফুলে উঠছে মৃত্যুর নিঃশব্দ ধ্বনি প্রতিধ্বনিতে।’

মানুষের অধিকার নিয়ে লিখবে অধিকার; লিখুন আপনিও। আপনার চারপাশে অধিকার বাস্তবায়নে আপনিও সচেষ্ট হোন, জানান সরাসরি দৈনিক অধিকারকে [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড