• মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কর্মীর রয়েছে কর্মের অধিকার : চাইলেই করা যায় না ছাঁটাই

  ডা. মোঃ সাইফুল ইসলাম

০২ নভেম্বর ২০১৮, ১০:১৮
কর্মী ছাঁটাই
ছবি : প্রতীকী

গতকাল পত্রিকায় পড়লাম, বেসকরকারি একটি মোবাইল ফোন কোম্পানি তার ৩৭ জন কর্মীকে বিনা নোটিশে ছাঁটাই করেছে। এই ছাঁটাইয়ের কথা শোনার পর একজন কর্মী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। কথা হচ্ছে আসলেই কি কোম্পানি চাইলেই তার কর্মীকে ছাঁটাই করতে পারে? এর কি নিয়মনীতি নেই?

একজন কর্মীর অবশ্যই নিজের যোগ্যতায় কাজ করার অধিকার রয়েছে। লক্ষ লক্ষ শ্রমজীবী মানুষের ঘামের বিনিময়ে সচল রয়েছে দেশের অর্থনীতির চাকা। যাদের ঘামের বিনিময়ে এগিয়ে চলেছে দেশ, তাদের জন্যও অবশ্যই সরকারের আইন রয়েছে। আর এই আইনটি হচ্ছে ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬’। যা পরবর্তী সময়ে ‘বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০১৩ (সংশোধিত)’ হিসেবে ঘোষিত হয়। আজকের লেখায় এই আইনের কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ জানাব যা সকলেরই জানা থাকা উচিত।

কোম্পানি যে সব কারণে চাকরিচ্যুত করতে পারেন :

সাধারণত কোম্পানি তথা মালিক চাইলে কিছু কিছু কারণে তার কর্মীকে ছাঁটাই করতে পারেন। কারণগুলো হচ্ছে - • প্রয়োজনের অতিরিক্ততার কারণে চাকরি থেকে ছাঁটাই করা যায় • মানসিক ও শারীরিক অক্ষমতার কারণেও ছাঁটাই করতে পারে।

শ্রম আইন থেকে জানা যায়, কোনো কর্মীকে ছাঁটাই করার অধিকার মালিকের রয়েছে। তবে মন চাইলেই কি কর্মীকে ছাঁটাই করা যায়? কিংবা সকাল সকাল অফিসে গিয়েই কি আপনাকে শুনতে হবে আপনার চাকরি শেষ? চলুন জানা যাক, ছাঁটাই সংক্রান্ত আরও কী কী কথাবার্তা রয়েছে-

• কোনো শ্রমিক যদি কমপক্ষে ১ বছর কোনো প্রতিষ্ঠানে অবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করে, তবে তাকে ছাঁটাই করতে চাইলে একমাস পূর্বে তাকে নোটিশ দিতে হবে। • নোটিশে ছাঁটাইয়ের কারণ উল্লেখ করতে হবে। এছাড়াও শ্রমিকের যাবতীয় পাওনা পরিশোধ করে দিতে হবে। • নোটিশ ছাড়া দ্রুত ছাঁটাই করতে চাইলে অবশ্যই এক মাসের মজুরি ক্ষতিপূরণ হিসেবে প্রদান করতে হবে। • এই ক্ষতিপূরণ তার প্রতি বছর চাকরির জন্য ৩০ দিনের মজুরির সমান হিসেবে দিতে হবে। • নোটিশের একটি কপি প্রধান পরিদর্শক অথবা তৎকর্তৃক নির্ধারিত কোনো কর্মকর্তার নিকট প্রেরণ করতে হবে, এবং আরেকটি কপি প্রতিষ্ঠানের যৌথ দর কষাকষি প্রতিনিধিকে (যদি থাকে) দিতে হবে। • শ্রমিক ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে যিনি সবার শেষে চাকরিতে যোগদান করেছেন, তাকে সবার আগে ছাঁটাই করতে হবে।

পুনঃনিয়োগ :

যেক্ষেত্রে কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয় এবং ছাঁটাইয়ের এক বছরের মধ্যে মালিক পুনরায় কোনো শ্রমিক নিয়োগ করতে ইচ্ছুক হলে, মালিক ছাঁটাইকৃত শ্রমিকের সর্বশেষ জানা ঠিকানায় নোটিশ প্রেরণ করে তাকে চাকুরির জন্য আবেদন করার জন্য আহ্বান করবেন। কোনো শ্রমিক যদি পুনরায় আবেদন করে, তবে তাকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। একাধিক ছাঁটাইকৃত শ্রমিক প্রার্থী হলে পূর্বের চাকরির জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

ডিসচার্জ বা মুক্তি দেওয়া :

চাকরি থেকে ডিসচার্জ বা মুক্তি দেওয়ার অধিকার মালিকের রয়েছে। নিম্নোক্ত ক্ষেত্রে তা এটি করতে পারবেন-

• শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা বা ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে মুক্ত করে দিতে পারবেন। • বিধি অনুযায়ী, মালিককে একজন রেজিস্টার্ড ডাক্তারের কাছ থেকে প্রত্যয়নপত্র নিতে হবে। • ডিসচার্জকৃত কোনো শ্রমিক অন্যূন এক বছর অবিচ্ছিন্ন চাকরি সম্পূর্ণ করলে তাকে মালিক তার প্রত্যেক বছর চাকরির জন্য ক্ষতিপূরণ হিসাবে ত্রিশ দিনের মজুরি অথবা গ্রাচ্যুইটি, যদি প্রদেয় হয়, যা অধিক হবে, তা প্রদান করবেন।

বিনা নোটিশে ছাঁটাই :

এতক্ষণ জেনেছি ছাঁটাই করতে হলে নোটিশ দিতে হবে। তাহলে কি নোটিশ ছাড়া ছাঁটাই করা যাবে না? সাধারণত দুটি কারণে বিনা নোটিশে বা নোটিশের পরিবর্তে বিনা মজুরিতে মালিক কর্মীকে ছাঁটাই করতে পারবেন –

• যদি কেউ ফৌজদারী অপরাধের কারণে দণ্ড প্রাপ্ত হন এবং • অসদাচরণের অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হন।

চাকরিক্ষেত্রে মালিক ও শ্রমিক উভয়ের জন্যই অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ আইন থাকলেও হয়তো অনেক প্রতিষ্ঠানই তা মানেন না। হতে পারে এই আইনগুলো সম্পর্কে তারা তেমন ধারণাও রাখেন না। আবার ধারণা থাকলেও মানতে চান না। অপরদিকে চাকরিজীবীরাও তাদের প্রাপ্য অধিকার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান না রাখায় প্রতিনিয়ত মালিকপক্ষের কাছ থেকে বঞ্চিত হন। সুতরাং প্রত্যেকেরই নিজস্ব অধিকার সম্পর্কে জানা থাকা উচিত।

তথ্যসূত্র : bdlaws.minlaw.gov.bd

মানুষের অধিকার নিয়ে লিখবে অধিকার; লিখুন আপনিও। আপনার চারপাশে অধিকার বাস্তবায়নে আপনিও সচেষ্ট হোন, জানান সরাসরি দৈনিক অধিকারকে [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড