• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

শিশু অধিকার : আইন আছে, নেই বাস্তবে প্রয়োগ

  নিশীতা মিতু

০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮, ০৮:৪৮

একটি শিশুর জন্মের সাথে সাথে রাষ্ট্র একজন সুনাগরিকের স্বপ্ন দেখে। সদ্য জন্ম নেওয়া শিশুটি শৈশব, কৈশোরের গণ্ডি পেরিয়ে একজন সুনাগরিক হয়ে ওঠে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন পারিবারিক ও সামাজিক অধিকার নিশ্চিত করা। ১৯২৪ সালে জেনেভায় এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী শিশুদের অধিকার সংরক্ষণের জন্য ‘শিশু অধিকার’ ঘোষণা করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৫৯ সালে জাতিসংঘে শিশু অধিকার সনদ ঘোষণা করা হয়। এই সনদে স্বাক্ষর করা দেশগুলোর একটি হল বাংলাদেশ। কিন্তু শিশু অধিকারের ঠিক কতটা বাস্তবায়িত হচ্ছে আমাদের দেশে?

জাতিসংঘ প্রণীত শিশু অধিকার সনদ অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সের সবাইকেই শিশু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। বাংলাদেশে সদ্য পাসকৃত 'বাংলাদেশ শ্রম (সংশোধন) আইন, ২০১৮' তে যার ভিন্ন মাত্রা লক্ষ্য করা যায়। দেশের বিভিন্ন আইনে ১৪ বছর বয়স অব্দি সবাই শিশু, এর উর্ধ্বে কিশোর। সংশোধিত শ্রম আইন ২০১৮ অনুযায়ী শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করা হলেও, ১৪ বছর থেকে ১৮ বছর বয়সীদের হালকা শ্রমে নিয়োগ দেওয়াকে করা হয়েছে আইনসিদ্ধ।

পিয়াজেট থিওরি অব অবিট্যাটিভ ডেভেলপমেন্ট অনুসারে শিশুদের শৈশব কালের দু’টি পর্ব রয়েছে। একটি হল- প্রাক কর্মক্ষম পর্ব এবং অপরটি হল- কর্মক্ষম পর্ব। ডেভেলাপমেন্টাল সাইকোলজি অনুসারে, শৈশবকালকে হাঁটা, শিক্ষা গ্রহণের সময়, খেলার সময়, বিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় এবং বয়ঃসন্ধিকাল সময় ভাগ করা হয়েছে।

বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে দারিদ্রতা নিত্যসঙ্গী হয়ে থাকে। আর পরিবারের আর্থিক চাহিদা মেটাতে শিশুরা নেমে পড়ছে কাজে। ফলে ক্ষুণ্ণ হচ্ছে তাদের অধিকার বাস্তবায়ন আর বাড়ছে শিশু শ্রমের মাত্রা। ‘জাতীয় শিশু শ্রম জরিপ-২০১৩’ এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে প্রায় ৩৪ লাখ ৫০ হাজার শিশু কোনো না কোনো শ্রমে নিয়োজিত। বর্তমানে দেশের ১৮টি খাতে ১৭ লাখের বেশি শিশু শ্রমিক বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এর মধ্যে ১২ লাখ ৮০ হাজার শিশু শ্রমিক ঝুঁকিপূর্ণ কর্মে নিয়োজিত এবং ২ লাখ ৬০ হাজার শিশু অতি ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এসব শিশুরা হোটেল-রেস্তেরাঁ, ট্যানারি, শিপব্রেকিং পরিবহন, কৃষি, গৃহকর্ম, নির্মাণ, ইটভাঙ্গা, লোহা কাটাসহ বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মে নিয়োজিত রয়েছে।

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদের অধীনে শিশু অধিকারসমূহ :

- অপরাধের ক্ষেত্রে ন্যায় বিচার - গ্রেফতার ও দণ্ড থেকে সুরা - দত্তক গ্রহণ ও প্রদান - পাচার থেকে সুরা - পরিবার বঞ্চিত শিশুর ক্ষেত্রে সঠিক যত্ন - মর্যাদা ও সুনাম - মানবিক আচরণ - শিক্ষা লাভ - শোষণ থেকে রক্ষা - সামাজিক নিরাপত্তা -অবসর ও বিনোদন -চিকিৎসা পরিচর্যা -পারিবারিক সংহতি -প্রতিবন্ধী শিশু বেঁচে থাকা

এর কোনো অধিকারই শিশুরা ঠিকমতো পাচ্ছে না। শিক্ষা লাভের জন্য স্কুলের খাতায় নাম লেখানোর পরিবর্তে নাম লেখাচ্ছে শ্রমজীবী হিসেবে। শিক্ষার সুযোগ যার পাচ্ছে তাদেরও থাকতে হয় মানসিক চাপে। শিশু অধিকার আইন অনুযায়ী চিন্তা, নৈতিকতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার রয়েছে শিশুর। যদিও সামাজিক প্রেক্ষাপটে ধরা হয় এসব জটিল ব্যাপার শিশুরা বুঝতে পারবে না। তাই তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় অন্যদের মতামত।

শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ, পারিবারিক দ্বন্দ্ব, ধর্ষণ থেকে শুরু করে আরও অনেক কারণে ব্যহত হচ্ছে শিশুদের অধিকার বাস্তবায়ন। শিশুমৃত্যুর হার কমলেও কমেনি শিশুর ওপর অত্যাচারের মাত্রা। হোক সেটি শারীরিক বা মানসিক।

সম্প্রতি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেছেন, ‘সবার আগে পথশিশুদের মূল স্রোতে আনা জরুরি। তাদের দক্ষ জনবল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য প্রশিক্ষণ, উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা, উন্মুক্ত স্কুলসহ শারীরিক-মানসিক বিকাশের জন্য বিভিন্ন বিনোদনমূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।’

তিনি আরও জানান, ‘শিশুদের অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন কাজ চলছে। নতুন করে আরও উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

শিশু অধিকার আইনে অন্তর্ভুক্ত শিশুদের অধিকারগুলো কেবল কাগজে কলমে নয়, দেখা পাবে বাস্তবতার— এমনটাই কামনা সবার। আজকের শিশুই আগামীর নাগরিক। তাকে তার প্রাপ্য অধিকার দেওয়াই আমাদের দায়িত্ব। আমাদের সবার দাবি হোক, ‘আজকের শিশু... আগামীর পথ ধরে এসেছে। আমরা তার তরে একটি সাজানো বাগান চাই।’

মানুষের অধিকার নিয়ে লিখবে অধিকার; লিখুন আপনিও। আপনার চারপাশে অধিকার বাস্তবায়নে আপনিও সচেষ্ট হোন, জানান সরাসরি দৈনিক অধিকারকে [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড