• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

আইনের শাসন, নৈতিকতা এবং উৎকণ্ঠা

  মারুফ আহমেদ

০৮ অক্টোবর ২০১৯, ২২:১১
প্রতীকী
ছবি : প্রতীকী

প্রথমে একটি মর্মস্পর্শী ঘটনার তাৎপর্য উল্লেখ করছি। একদা সক্রেটিসের বিরুদ্ধে শাসকগোষ্ঠী যুব সমাজকে বিপথগামী করা এবং রাষ্ট্র স্বীকৃত দেবতার বিরোধিতার অভিযোগ এনে মৃত্যু দণ্ডাদেশ দেয়। যদিও তিনি (সক্রেটিস) তাঁর মৃত্যুর ২ হাজার ৪১৫ বছর পরে নির্দোষ প্রমাণিত হন।

সেই সময়ে তাঁর ছাত্র ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা চেয়েছিলেন সক্রেটিসকে নিয়ে পালিয়ে যেতে। কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছিলেন এবং মৃত্যুকে সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। কারণ, রাষ্ট্র উদ্ভবের সামাজিক চুক্তির মতাদর্শ হলো, রাষ্ট্রে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী নিজেদের প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান বজায় রাখবেন এবং ব্যক্তি রাষ্ট্রের কাছে তাঁর যাবতীয় সত্ত্বা গচ্ছিত রাখার বিনিময়ে রাষ্ট্র তাঁর যাবতীয় নিরাপত্তা বহন করবেন। তখনকার প্রতিষ্ঠিত এই তত্ত্বের প্রতি সম্মান জানিয়ে সক্রেটিস হেমলকের তরে চির-বিসর্জন দিয়েছিলেন। যার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ এবং রাষ্ট্রের সকল সিদ্ধান্তকে সবকিছুর ঊর্ধ্বে মেনে নেবার বহিঃপ্রকাশ।

কিন্তু উদ্বেগের বিষয় এই যে, রাষ্ট্র এবং তাঁর জনগোষ্ঠীর আচরণ ক্রমশ নীতি বিবর্জিত কাজের দিকে ধাবিত হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হলো, রাষ্ট্র যদি তাঁর মূল লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে, তাহলে তাঁর প্রয়োজনীয়তা বা মূল্যবোধের জায়গা কতটুকুই বা অক্ষত থাকে?

বাংলাদেশের শাসন ব্যবস্থার মূল দলিল, সংবিধান যেখানে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সংবিধানের ২৭ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইনের দৃষ্টিতে সকল নাগরিক সমান এবং একই আইনের অধীনে বিচার লাভের সুযোগ পাবেন। এছাড়াও সংবিধানের ৩২ এবং ৩৯ নং অনুচ্ছেদে যথাক্রমে ব্যক্তি জীবন, ব্যক্তি স্বাধীনতা রক্ষা ও বাক স্বাধীনতা প্রদান করা হয়েছে।

কার্যত আমরা এর প্রয়োগ কতটুকু পাচ্ছি? সম্প্রতি আবরার ফাহাদ নামে বুয়েটের এক শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। যদিও হত্যা, খুন, ধর্ষণ এদেশের নতুন সংস্কৃতি নয়। বহুদিন ধরেই রাজনৈতিক দল এবং প্রশাসনিক ব্যক্তিবর্গের আইনের শাসনের প্রতি সহাবস্থানের প্রতিশ্রুতি আমরা শুনে আসছি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অনেক বিচ্যুতি আমরা লক্ষ্য করলেই দেখতে পাই। প্রায়শই দেখছি অনেকেই ক্ষমতার অপব্যবহার করেন নিজ স্বার্থ হাসিলের জন্য। যার ফলে, সামাজিক অপরাধগুলো ক্রমশ বেড়েই চলেছে এবং সামাজিক বিচ্যুতিগুলো ক্রমশ প্রতিষ্ঠিত প্রথায় রূপ লাভ করছে।

প্রফেসর ডাইসি, যদি আজ বেঁচে থাকতেন, তাহলে নির্ঘাত তিনি তাঁর প্রদত্ত তত্ত্বের প্রয়োগ দেখে মুচকি হেসে ঘুমিয়ে পড়তেন। কারণ, তিনি রাষ্ট্র ব্যবস্থায় আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার কথা বলেছিলেন যেখানে আইন রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করবে এবং কোনো নির্বাহী ক্ষমতাবলে এর ব্যত্যয় ঘটানোর প্রচেষ্টা চালাবে না।

সর্বোপরি কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয় এটা যেমন সত্য তেমনি দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে নিয়োজিত শান্তিরক্ষী বাহিনী রয়েছে এবং বিচারকার্য সম্পাদনে বিচারিক আদালত রয়েছে এটাও তেমনি সত্য। সুতরাং ব্যক্তি সর্বদোষে দণ্ডিত হলেও তাঁর বিচার করার জন্য রাষ্ট্র স্বয়ং নিজেই তার প্রতিবিধান করে দিয়েছেন। যদি এভাবে ক্রমশ আইন লঙ্ঘন হতে থাকে, তাহলে শান্তিরক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা এবং বিচার পদ্ধতি নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাবে। ক্রমশ এ লঙ্ঘন রাষ্ট্র প্রীতির অনুষঙ্গ বলে যদি বিবেচিত হয়, তাহলে নৈতিক অবক্ষয়ের শেষ বিন্দুতে পৌঁছানো এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।

লেখক : শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ (৩য় বর্ষ), বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়

ওডি/এমএ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড