জুবায়ের আহমেদ
মাদকাসক্ত হয়ে পড়া ছেলে মেয়েরা আর কেউ নয়, আমাদের ভাই বোন, আত্মীয়স্বজন এবং সমাজেরই অংশ। ভুল সঙ্গের ফাঁদে পড়ে মরণনেশা মাদকে আসক্ত হয়ে যাওয়া এই ছেলে মেয়েদের আমরা চিহিৃত করতে পারলেই তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করি, মাদক ছেড়ে দেওয়ার আহ্বান করা তো দূরের কথা, উল্টো তাদের সঙ্গে কথাবার্তায় আচরণে বুঝিয়ে দেই যে, এরা নিকৃষ্ট ব্যক্তি, সমাজে এদের স্থান নেই, এদের প্রতি শুধুই ঘৃণা।
এভাবেই আমরা পরিবার থেকে সমাজ থেকে দূরে সরিয়ে দেই মাদকাসক্তদের, যার ফলে আসক্তির প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা মানুষগুলোও নিজেদের সংশোধন করার পরিবর্তে আরও বেশি বেপরোয়া হয়ে পড়ে। মাদক কেনার জন্য পিতা মাতা এবং পরিবারের সদস্যদের নিকট থেকে টাকা চেয়ে না পেলে চুরি করা এবং যেভাবেই হোক মাদকের টাকা জোগাড় করতেই হবে, এই ভাবনা থেকে পাড়া পড়শিরাও রেহায় পায় না মাদকাসক্ত থেকে। এমনকি মাদকের নেশায় মত্ত হয়ে এবং মাদকের টাকার জন্য মানুষ খুন করার ঘটনাও পত্রিকার পাতা উল্টালেই চোখে পড়ে।
জন্ম থেকেই কেউ নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি আকর্ষণ নিয়ে আসে না। নিষিদ্ধ বস্তুর প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি হলেও তা শিশু কাল পেছনে ফেলে কৈশোরে পা রাখার পর ভালো মন্দ মানুষের সঙ্গে মেশার মাধ্যমেই বুঝতে শেখে একটি শিশু। এই সময়ে শিশুটি কার সঙ্গে মেলা মেশা করছে সেদিকে খেয়াল রাখা পিতা মাতাসহ পরিবারের বড় সদস্যদের দায়িত্ব। এ সব দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের মাঝেও কেউ কেউ ভুল পথে পা বাড়ায় এবং অধিকাংশ সময়েই ভুল পথে পা বাড়ানো শিশু বা যুবকটি পরিবার কর্তৃক সঠিকভাবে ডাক চাপের অভাবে যখন তখন যেখানে খুশি চলে যাওয়া, যার তার সঙ্গে মেলা মেশায় অভ্যস্থ হয়ে পড়ছে। মূলত এভাবেই একটি শিশু/যুবক মাদকাসক্ত এবং নারী ঘটিত বিষয়সহ নানা প্রকার অপরাধজনক কার্যক্রমে জড়িয়ে পড়ছে। মাদকের জন্য পিতা মাতাকে হত্যাসহ জঘন্য কর্মকাণ্ডের খবর প্রতিদিনই পত্রিকার পাতায় দেখা যায়।
মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছে বা মাদকাসক্ত হয়ে বিপথে চলে যাওয়া তরুণ তরুণী বা যেকোনো বয়সের মানুষকে দেখলেই সমাজ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। আপাত দৃষ্টিতে মাদকসেবীদের থেকে দূরে থাকা বা তাদের বর্জন করা সঠিক সিদ্ধান্ত বলে মনে হলেও মনে রাখতে হবে মাদকসাক্ত ব্যক্তিরা আমাদেরই পরিবারের সদস্য। তাদেরকে সঠিক পথে ফেরাতে আমাদেরই আগ্রহী হতে হবে, প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বেশি বেশি সময় দিতে হবে তাদের।
খেলাধুলা, ধর্মীয় রীতিনীতি পালনসহ যেকোনো সামাজিক কার্যক্রমে তাদের জড়িয়ে রাখার চেষ্টা করতে হবে, যেনো চাইলেই তারা মাদকসেবী সঙ্গীদের সঙ্গে যোগ দিতে না পারে। মাদকাসক্ত জীবন তিলে তিলে নিঃশেষ হয়ে যায়, এ সত্যটি মনে রেখে তাদেরকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনতে পরিবার ও সমাজের মানুষকে আন্তরিক হতে হবে। আন্তরিকতা, ভালোবাসা, সর্বোপরি খেলাধূলা, সুস্থ বিনোদান এবং ধর্মীয়-সামাজিক কার্যক্রমে মাদকাসক্তদের জড়িত করার চেষ্টা বাস্তবায়ন করতে পারলে মাদকের মরণ নেশা থেকে মানুষকে বিরত রাখা এবং আসক্তদের ফিরিয়ে আনা কঠিন কাজ হবে না বলেই আমি মনে করি।
লেখক, শিক্ষার্থী, ডিপ্লোমা ইন জার্নালিজম বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব জার্নালিজম অ্যান্ড ইলেকট্রনিক মিডিয়া (বিজেম)
ওডি/আরএআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড