• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

`বাংলাদেশে ফার্মাসিস্টরা সর্বদা অবহেলিত হয়ে আসছে'

  মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

২৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৬:১৫
ফার্মাসিস্ট
সঠিক সম্মান পান না ফার্মাসিস্টরা (ছবি : সংগৃহীত)

২৫ সেপ্টেম্বর, বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস আজ। এই দিবসটি ২০১০ সাল থেকে পালিত হয়ে আসছে। যদিও বাংলাদেশে সেটা হতে সময় লেগেছে আরো ৪ বছর অর্থাৎ বাংলাদেশে পালিত হচ্ছে ২০১৪ সাল থেকে। এর আগে বিশ্বব্যাপী ফার্মাসিস্টদের পালনের জন্য বিশেষায়িত কোনো দিবস ছিল না। আর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো এই দিবস পালনের উদ্যোগ নিয়েছিল বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়।

তারপর আস্তে আস্তে ছড়িয়েছে অনেক। এখন প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদায় বাংলাদেশে এই দিবসটি পালন করা হয়। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসী বিভাগ, বিভিন্ন ফার্মাসিউটিক্যালস, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর ও বিভিন্ন ফার্মেসী পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে ঢাকাসহ বড় বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে উৎসাহের সঙ্গে র‌্যালি ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি,সেমিনার ও বিভিন্ন জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম পালনের মাধ্যমে দিবসটি নিয়মিত পালন হয়ে আসছে।

এ বছরের ফার্মাসিস্ট দিবসের থিমটি চমৎকার- ‘Pharmacy : Always trusted for your health’। বাংলায় আমরা বলতে পারি, ‘ফার্মেসি : আপনার স্বাস্থ্যের প্রতি সর্বদা বিশ্বস্ত’। 'বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস' উপলক্ষে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছে দৈনিক অধিকার। জেনেছে তাদের ভাবনা আর মতামত।

তানজিলুর রহমান বলেন, আমাদের দেশের অনেক মানুষ এখনো ফার্মেসি সাবজেক্ট সম্পর্কে তেমন জানেনই না। অনেকের ধারণা ফার্মেসিতে গ্রাজুয়েশন শেষ করে বুঝি ওষুধের দোকান দেয় সবাই। অনেকে আবার একটু বেশিই এই সাবজেক্টটাকে মাথায় তুলে ফেলেন। আসলে এই সাবজেক্টটাকে একটা মধ্যবিত্ত সাবজেক্ট বলা চলে। মানে গ্রাজুয়েশন করতে করতে আমাদের অনেক স্বপ্ন থাকে কিন্তু দিন শেষে দেখা যায় আমাদের ফার্মাসিস্টদের চাকরির ক্ষেত্র খুবই সামান্য। হ্যাঁ, অবশ্য যখন হাতে গোনা কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসি বিষয়টি ছিল তখন গ্রাজুয়েশনের পর চাকরি নিয়ে এতো টেনশন করতে হতো না। কারণ তখন ওষুধ কোম্পানিগুলার চাহিদার তুলনায় গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট কম থাকতো। কিন্তু এখন ফার্মেসি সবার কাছে একটি সুপরিচিত বিষয়। প্রতিবছর একসঙ্গে অনেক গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট বের হচ্ছে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। এইজন্য পর্যাপ্ত চাকরি ক্ষেত্রের অভাবে বেকার ফার্মাসিস্ট এর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। এভাবে চলতে থাকলে আসলেই ওষুধের দোকান দিয়েই ফার্মাসিস্টদের চলতে হবে। পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধার অভাবের জন্য ছেলে-মেয়েরাও আস্তে আস্তে ফার্মেসি সাবজেক্ট নিয়ে পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। বাংলাদেশের ওষুধ শিল্পও আস্তে আস্তে তার ঐতিহ্য হারিয়ে ফেলবে।

সোহানা ফেরদৌসের মতে, ফার্মেসিতে পড়াশোনা শুরু করার আগে থেকেই শুনতাম পড়াশোনা শেষ করার আগেই চাকরি হাতের মুঠোয় থাকবে। কিন্তু যখন পড়াশোনা শুরু করলাম দেখলাম অধিকাংশেরই ধারণা মেডিসিনের দোকানদার হবো। বিষয়টা ভালো, গুরুত্বপূর্ণ হলেও এখনও অধিকাংশের চিন্তাভাবনায় অনেক গোঁড়ামি দেখেছি। ওষুধ নিয়ে জানাটা যে কত গুরুত্বপূর্ণ এটা এখনও মানুষকে বুঝানো সম্ভব হয়নি। এই যে প্রতিবছর হাজার হাজার গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট বের হচ্ছে, দিন শেষে দেখা যাচ্ছে ফার্মাসিস্ট না হয়ে বাধ্য হয়ে অন্য সেক্টরে সুইচ করতে হচ্ছে। ফার্মেসি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে চালু হলেও, এই বিষয় নিয়ে পড়ার যতটা ঝোঁক, সুযোগ-সুবিধা ঠিকমতো না পাওয়ার কারণে এই আগ্রহ ঠিক ততটাই কমে যাচ্ছে।

উম্মে সালমা বলেন, ‘ফার্মেসি’ কে জানা আর ফার্মাসিস্টদের জানা এক নয়। স্বাস্থ্যসেবায় ঢের ফারাক, ফার্মাসিস্টরাও তৈরি, তবুও এদের যোগবন্ধন, ভীষণ মাত্রায় বৈরী! এর আসল কারণ স্বাস্থ্যসেবায় ফার্মাসিস্টদের উপযুক্ত খাত এর অভাব। তা তো বটেই তদুপরি আমাদের দেশের শিক্ষিত সমাজের ও একটি বড় অংশের ফার্মাসিস্ট দের সম্পর্কে উপযুক্ত ধারণার অভাব। ফার্মেসি শিল্পে ফার্মাসিস্টদের সম্পর্কে মোটামুটি যে একটা ধারণা রাখা হয় তার অনেকটুকুই ধীরে ধীরে নিপতিত হয় 'হসপিটাল ফার্মেসি’ বা 'রিটেইল ফার্মেসি' এর ধারণায়। যেখানে একজন ফার্মাসিস্ট ডাক্তার কর্তৃক নির্ধারণকৃত ওষুধের মান যাচাই, সঠিক কার্যকারিতা, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে সঠিক বিবেচনা করেই রোগীকে সঠিক মাত্রার ওষুধ সম্পর্ক অবগত করেন। অন্যদিকে রিটেইল ফার্মেসির কাজ প্রেসক্রাইব বা নন প্রেসক্রাইব ইত্যাদি। যা একজন হেলথ কেয়ার প্রফেশনাল ফার্মাসিস্টই করতে পারে। অথচ এগুলোকে অনেকেই শুধু হসপিটাল এর এ দরজা থেকে ও দরজা এবং ওষুধের দোকানে টহল দেয়াকেই বুঝে থাকে! তাই স্বাস্থ্যসেবার এই গুরুত্বপূর্ণ পেশাদারীদের পেশা সম্পর্কে সঠিক ধারণাও আগে জরুরী। নতুবা যদি পেশার ধারণাই না থাকে, নিয়োগ ক্ষেত্রে সোচ্চার হতে হবে। জনসাধারণকে স্বাস্থ্যসেবায় ফার্মাসিস্ট দের প্রয়োজনীয়তা বুঝাতে হবে।

মেহেদী হাসান ভূঁইয়া মনে করেন, একটি দেশের স্বাস্থ্যসেবা সম্পূর্ণ করার জন্য ডাক্তার নার্সদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে ফার্মাসিস্টদের। অজানা কোনো কারণে বাংলাদেশে ফার্মাসিস্টরা সর্বদা অবহেলিত হয়ে আসছে আমাদের গতানুগতিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায়। আধুনিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ফার্মাসিস্টদের অবহেলার সুযোগ নেই। শুধুমাত্র ওষুধশিল্পে ফার্মাসিস্টদের আটকে রেখে আধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা তৈরি হয় না। এই জন্য ফার্মাসিস্টদের হসপিটাল ও মডেল ফার্মেসিতে কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। হসপিটাল ও কমিউনিটি ফার্মাসিস্টরা যেভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অবদান রাখতে পারবে অথবা স্বাস্থ্যসেবার যে পরিবর্তন আনবে তা বর্তমানে বাংলাদেশে চলমান পদ্ধতিতে সম্ভব নয়। বিজ্ঞানভিত্তিক আধুনিক স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে ফার্মাসিস্টদের আরও সক্রিয়ভাবে কাজে লাগানো হোক এইটাই এবারের বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসে আমার চাওয়া।

ইসনাইন জান্নাত ইশা বলেন, ফার্মাসিস্টরা স্বাস্থ্যসেবা পেশাজীবী যারা ওষুধ ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং সরবরাহের সঠিক পদ্ধতিতে বিশেষজ্ঞ। ফার্মাসিস্টরা নতুন ওষুধের গবেষণা ও পরীক্ষায়ও অবদান রাখে। তারা ফার্মেসি, মেডিকেল ক্লিনিক, গবেষণা খাতে, হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে। ডাক্তার এর কাছ থেকে শারীরিক অসুস্থতা জানার পর কোন ওষুধ কতটুক পরিমাণ এ কীভাবে গ্রহণ করা যায় কিংবা অন্যান্য পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকলে কোন ধরনের ওষুধ কতটুক গ্রহণ করতে হবে এই বিষয়ে সূক্ষ্ম ধারণা পাওয়া যায় একজন ফার্মাসিস্ট থেকে। ২৫ সেপ্টেম্বর বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস উদযাপনের পিছনে উদ্দেশ্যগুলি সম্পর্কে এই গ্রহের প্রত্যেক ব্যক্তির জানা উচিত। প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো থেরাপিউটিক পণ্যগুলির কার্যকর ব্যবহারের মাধ্যমে রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করা। মেডিকেল টিমে ফার্মাসিস্টদের গুরুত্ব বাড়ানো। দিন শেষে ওষুধের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ মানুষের স্বস্তির এজেন্ট হওয়া একটি আনন্দদায়ক অনুভূতি।

মুবতাসিম রহমান লাবিব বলেন, বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস আমাদের এক আবেগের স্থল। বিশ্বব্যাপী ফার্মাসিস্টরা সমাদৃত হলেও আমাদের দেশে এখনো স্বাস্থ্যখাতে সরাসরি সংযুক্ত নয়। তাই এ দিবসে একমাত্র প্রত্যাশা হলো উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও ফার্মাসিস্টরা যথাযথ মর্যাদার অধিকারী হোক।

সুমাইয়া সুলতানা বলেন, দিনটি ফার্মাসিস্টদের। 'ফার্মেসি' শব্দটি শুনলেই বাংলাদেশের মানুষের মনে যে ভাবনাটি প্রথমে আসে তা হলো 'ওষুধের দোকান', যেটি দুঃখজনক হলেও সত্য। কিন্তু বাস্তবিকভাবে আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে ফার্মেসি ও ফার্মাসিস্টদের অবস্থান যে কতটা ওপরে তা আমরা জানতে পারি। আধুনিক বিজ্ঞানের এ যুগে, ফার্মেসি (ওষুধ বিজ্ঞান, রসায়ন ও চিকিৎসাবিজ্ঞানকে একত্র করে উপস্থাপন করছে) খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান দখল করে নিয়েছে। একজন দক্ষ ফার্মাসিস্ট, যার মধ্যে ওষুধ, তার ক্রিয়া প্রতিক্রিয়া, উপকারিতা অপকারিতা, প্রস্তুত প্রণালি ইত্যাদির সঠিক জ্ঞান থাকে, এবং চিকিৎসা বিজ্ঞান এর গুরুত্বপূর্ণ একটি স্তম্ভ। ফার্মাসিস্ট ও ওষুধবিদ্যা ছাড়া চিকিৎসাবিজ্ঞান ও স্বাস্থ্য এককদম সামনে আগানো অসম্ভব। 'বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস' পুরো বিশ্বের মানুষকে জাতি সমাজ ও দেশের সচেতনতা ও স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠায় ফার্মাসিস্ট দের গুরুত্ব ও ভূমিকা স্বরণ করিয়ে দেয়।

নাজিয়া আফরিনের মতে, অচেনা যোদ্ধা ফার্মাসিস্ট। স্বাস্থ্যসেবার অবিচ্ছেদ্য অংশ ওষুধশিল্পের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত ফার্মাসিস্টরা। ফার্মেসি পেশায় কর্মরতদের উৎসাহ প্রদান এবং সাধারণ মানুষকে এ পেশা নিয়ে সচেতন করতেই বিশ্বব্যাপী পালিত হয় দিবসটি। মানসম্মত ওষুধ রোগীর কাছে সরবরাহ করতে নিরলস চেষ্টা চালিয়ে যায় এ পেশার মানুষেরা। নিরলস পরিশ্রম ও চেষ্টার মাধ্যমে রপ্তানিকারক শিল্প হিসেবে ওষুধশিল্পকে রপ্তানিকারক শিল্প হিসেবে সমাদৃত করেছে যে কারিগর রা তারাই অনেকক্ষেত্রে পর্দার আড়ালেই রয়ে যায়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশে হসপিটাল ফার্মাসিস্ট নেই যা আমাদের জন্য হতাশাজনক। অচেনা যোদ্ধার মতো করোনাকালীন সংকটপূর্ণ অবস্থাতেও তারা সেবা প্রদান করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাই "বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবস" উপলক্ষে প্রত্যাশা শুধুমাত্র বছরের একটি দিনে নয় সার্বক্ষণিক ফার্মাসিস্টদের যথাযথ মর্যাদা নিশ্চিত হোক এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে সরাসরি গ্রাজুয়েট ফার্মাসিস্ট যুক্ত করা হোক তাহলেই তাদের মাধ্যমে আরও বেশি সমাদৃত হবে দেশের স্বাস্থ্যসেবা।

ওষুধশিল্প বর্তমানে বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানিমুখী খাত হলেও এদেশের মূল স্বাস্থ্যখাতে ফার্মাসিস্টরা এখনো অবহেলিত, এমনটাই মনে করেন লামিয়া তাসনিম এশা। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গ্র‍্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা এখন পর্যন্ত কেবল বিভিন্ন কোম্পানিতে ওষুধ উৎপাদন ও পরিকল্পনায় তাঁদের মেধার স্বাক্ষর রাখতে পেরেছেন। কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো ফার্মাসিস্টদের সরাসরি এদেশের স্বাস্থ্যসেবায় যুক্ত করা এখন সময়ের দাবি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা অনুসারে প্রতি ১ হাজার মানুষের চিকিৎসায় একজন করে ডাক্তার এবং ফার্মাসিস্ট থাকা আবশ্যক। ২০১৮ সালের মার্চ মাসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কর্তৃক 'হসপিটাল ফার্মাসিস্ট' পদে গ্র‍্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের ১ম শ্রেণির ৯ম গ্রেডে নিয়োগের জন্য গেজেট প্রকাশ করা হলেও তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে একদিকে যেমন গ্র‍্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টরা কর্মসংস্থানের সুযোগ হারাচ্ছেন, অপরদিকে রোগীরাও সুচিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে ফার্মাসিস্ট পদ শুন্য থাকায় প্রায়ই রোগীদের ভুল ওষুধ প্রয়োগের ঘটনা ঘটছে - যার ফলে দেশের স্বাস্থ্যখাত মারাত্মক ঝুঁকির মুখে পড়বে। অর্থাৎ, গ্র‍্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের বাদ দিয়ে দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা কখনোই পরিপূর্ণতা পাবেনা। নিরাপদ ও কার্যকরী স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণে দেশের প্রতিটি হাসপাতালে গ্র‍্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের নিয়োগে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর ভূমিকা প্রত্যাশা করছি। কেননা গ্র‍্যাজুয়েট ফার্মাসিস্টদের মূল স্বাস্থ্যখাতে নিয়োগ প্রদান জরুরি।

আহনাফ বিশ্বাস বলেন, ফার্মাসিস্ট চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতির অন্যতম একজন সহায়ক। বর্তমানের কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য তারাই দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। দেশের বর্তমান স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে দুর্নীতির বিষয়গুলো হসপিটাল ফার্মেসি বাস্তবায়নের ক্ষীণ সম্ভাবনাকে যেন আরও ক্ষীণ করে দেয়। বিশ্ব ফার্মাসিস্ট দিবসকে সামনে রেখে আমাদের সবাইকে আরও বেশি উদ্যোগী হয়ে দীর্ঘ কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে যেন সমাজের সর্বস্তরের মানুষকে ফার্মেসি পেশার গুরুত্ব অনুধাবনের মাধ্যমে হসপিটাল ফার্মেসি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। বছরের শুধু এই দিনটায় নয়, অন্যান্য সময়ও স্বাস্থ্যকাঠামোর অপরিহার্য খুঁটি, দেশের যেকোনো দুরবস্থাতেও নিরবচ্ছিন্ন ওষুধের সরবরাহ ঠিক রাখা অদম্য ফার্মাসিস্ট মহলকে তাদের প্রাপ্য মর্যাদা ও স্বীকৃতি দেওয়া হোক- একটাই চাওয়া।

ববিতা মন্ডল সোমা বলেন, ফার্মেসি আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সঙ্গে জড়িত গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা। যেখানে ওষুধের আবিষ্কার, ডিজাইন, প্রস্তুতি, মানোন্নয়ন, নিরাপদ ব্যবহার এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকে। বর্তমানে দেশে ৪০ টিরও বেশি সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ফার্মেসি বিভাগ চালু আছে এবং প্রতি বছর প্রায় ৬০০০ ফার্মেসি গ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী তৈরি হচ্ছে। কিন্তু তারা তাদের সঠিক কর্মক্ষেত্রে যেতে পারছে না। আর পারবেই বা কীভাবে, যেখানে ফার্মেসি বলতে আমরা বুঝি ওষুধের দোকানদার কিংবা ওষুধ শিল্পকারখানায় কাজ করা। আর স্বাস্থ্যখাতের গুরুত্বপূর্ণ এই পেশার প্রতি আমাদের এই অবহেলাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। কোনো ভবিষ্যত চিন্তা না করেই এন্টিবায়োটিক এর মতো ওষুধগুলো আমরা প্রেসক্রিপশন ছাড়াই সেবন করছি, মানছি না কোনো স্বাস্থ্যোপদেশ। যার ফলে এন্টিবায়োটিক রেসিস্টেন্স ব্যাকটেরিয়াগুলো দিন দিন সক্রিয় হয়ে উঠছে। এমতাবস্থায় স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে প্রতিটি হাসপাতাল, ক্লিনিক অর্থাৎ সাধারণ মানুষের স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে জড়িত প্রতিটি ক্ষেত্রেই উচিত "হসপিটাল ফার্মাসিস্ট" চালু করা। এতে করে একদিকে যেমন ফার্মাসিস্টরা তাদের যোগ্য সম্মান পাবে পাশাপাশি আমাদের ভগ্ন স্বাস্থ্যখাতও অনেকটা সবল হবে।

ওডি/নিমি

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড