• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৬ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিজয়ের মাসে তরুণ শিক্ষার্থীদের ভাবনা

  তারিক সাইমুম

২১ ডিসেম্বর ২০২০, ১৪:০৯
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন তরুণ শিক্ষার্থী (ছবি : দৈনিক অধিকার)

স্বাধীনতার পর দেশের প্রথম প্রতিষ্ঠিত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি)। বিজয়ের ৪৯ বছর পেরিয়ে গেলেও দীর্ঘ এই সময়ে কি পেয়েছি আর কি পায়নি সেইসব পূর্ণতা ও অপূর্ণতা নিয়ে রয়েছে শিক্ষার্থীদের নানা ভাবনা। ইবির আটটি অনুষদের প্রিয় শিক্ষার্থীবন্ধুদের বিজয়ের ভাবনা জানাচ্ছেন তারিক সাইমুম।

ইবির ধর্মতত্ব ও ইসলামী শিক্ষা অনুষদের আব্দুল্লাহ আল মুকিতের মতে, স্বাধীনতার পর থেকে আমরা প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উদযাপন করে থাকি, এবারও করছি। বিজয়ের ৪৯ বছরে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির সমীকরণে প্রাপ্তির পাল্লাই বেশি ভারী হবে। তবে প্রাপ্তির চেয়ে অপ্রাপ্তিই আমাকে বেশি নাড়া দেয়।

তিনি বলেন, বিজয়ের এতো বছর পেরিয়ে গেলেও আমরা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারিনি। আজও এ দেশের মানুষের পরিপূর্ণ অর্থনৈতিক মুক্তি ও জীবনের নিরাপত্তা মেলেনি। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি এবং জীবনের নিরাপত্তা ছাড়া স্বাধীনতা পরিপূর্ণ হয় না। আর সে কারণে প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব মেলানো খুব কঠিন।

তরুণ এই শিক্ষার্থীর মতে, ‘অপসংস্কৃতি এবং অপরাজনীতি থেকে মুক্তি অর্জন করে আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। স্বাধীনতার মূলমন্ত্র গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন ও শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি বলে আমি মনে করি। আমি এমন একটি দেশ প্রত্যাশা করি, যে দেশে সমাজের প্রতিটি স্তরের মানুষ সব সময়ের জন্য নিরাপদ।’

কলা অনুষদের মাসুম আলভী বলেন, “জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আমাদের কাছে সূর্যের মতো। তিনি অস্ত গেছেন, তার অনুপস্থিতিতে প্রত্যেক তরুণকে প্রদীপ হতে হবে। করোনা মহামারিতে আমরা যে ব্যক্তি দুর্নীতি দেখেছি, এমনটা আমাদের কখনোই কাম্য ছিল না। হেলাল হাফিজ লিখেছেন, ‘কথা ছিল একটি পতাকা পেলে আমাদের দুঃখ জমা দিব যৌথ খামারে।’ কিন্তু বিপর্যয়ে আমরা মানুষের পাশে কতটা ছিলাম, তা আজ প্রশ্নবিদ্ধ!”

এখন পর্যন্ত সর্বত্রই বৈষম্য বিরাজমান উল্লেখ করে তরুণ এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘সরকারি-বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইনে পাঠদানের বৈষম্য, ধর্ষণ এতোটা ভয়ানক আকার ধারণ করেছে, যে পিতা-মাতার কন্যা সন্তান আছে তারা নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে পারে না। ধর্ষিতা বিচার পায়নি বরং বিচার চেয়ে হয়রানি হতে শুনেছি, বিচার ব্যবস্থার ভঙ্গুর অবস্থা। পোশাক শ্রমিক ও বিদেশফেরত রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের করুণ চিৎকার। স্বাধীনতার ৪৯ বছরের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির হিসাব করব না, তবে মাকে (মাতৃভূমি) শত্রু মুক্ত করেছে বাঙালি তরুণরা- এখন আমাদের দায়িত্ব মাকে সুন্দরভাবে বাঁচিয়ে রাখা।’

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের সাফিয়া স্বর্ণা প্রশ্ন তুলে বলেন, বিজয় কথাটি অতি আনন্দের। দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ অর্জন করেছিল লাল সবুজের পতাকা। আজ স্বাধীনতার ৪৯ বছর পার হয়ে গেছে, কিন্তু আমরা কি স্বাধীনতা রক্ষা করতে পেরেছি? কাঙ্ক্ষিত যে বিজয়ের জন্য রক্ত দিয়েছিল বাংলার দামাল ছেলেরা, সেটি রক্ষা করতে পেরেছি?

তার মতে, এ দেশে আজও দিনে-দুপুরে ধর্ষণ হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়, তরুণ সমাজ মাদকে ডুবন্ত, চারিদিকে অন্যায়-অত্যাচার, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে প্রতিটি মানুষ। তার অর্থ হলো আমরা বিজয়ের চেতনাকে ধারণ করতে পারিনি। আমাদের উচিৎ স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করা, বিজয়ের চেতনাকে ধারণ করা। তবেই একদিন সুখী সমৃদ্ধশালী সোনার বাংলা গড়ে উঠবে।

আইন অনুষদের হাসনায়েন রহমান দৃষ্টি বলেন, ‘পরাধীনতার দাসত্ব থেকে মুক্তি এবং স্বাধিকার ও স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার সংগ্রামের চূড়ান্ত পরিণতি-ই হলো বিজয়, যা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বরে বাংলাদেশে অর্জিত হয়েছিল। বিজয় দিবস জাতীয় ইতিহাসের একটি সোনালী দিন, রক্তাক্ত ইতিহাসের স্বর্ণালি অধ্যায়। জাতির সূর্য সন্তানদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করার দিন। ২০২০ সালের জাতীয় অগ্রযাত্রায় আলোকিত ও উজ্জীবিত হোক তরুণ সমাজ। ভোরের সূর্যের আলো ছড়াক চারপাশে। আমরা নবীনরা শৌর্যবীর্য ও বীরের জাতির উত্তরসূরি, শোক আর ঋণ শোধ করার গর্ব নিয়ে প্রতিটি কাজে বিজয় ছিনিয়ে আনাই হোক আমাদের একমাত্র দীক্ষা। আমি জিতলে জিতবে আমার মা, মাটি ও মানুষ। দেশপ্রেম শুধু বিজয় দিবসে আবদ্ধ না রেখে প্রত্যাহিক জীবনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বিজয়ের প্রেরণা নিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গড়ে তুলি একটি সম্ভাবনাময়, জাগ্রত জনতার শ্রেষ্ঠ বাংলাদেশ।’

এ দিকে ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের আবু সোহানের ভাষায়, ‘ত্রিশ লক্ষ শহীদের তাজা রক্ত এবং দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমরা পেয়েছি লাল-সবুজের পতাকা। এক কথায়, আমরা রক্ত দিয়েই অর্জন করেছি বাংলাদেশ নামক স্বাধীন ভূ-খণ্ড। ১৯৭১ সালে ৭৮৬ কোটি টাকার বার্ষিক বাজেট নিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ যাত্রা শুরু করলেও আজ তা বেড়ে ৫ লক্ষ ৬৮ হাজার কোটি টাকায় পরিণত হয়েছে। ১২৯ ডলার মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেয়ে ২ হাজার ৬৪ ডলার হয়েছে। পালাবদলের পরিক্রমায় জিডিপির হারও পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের থেকে কম নয়। তবুও স্বাধীনতার ৪৯ বছর পেরিয়ে আমরা হিসাব কষতে ব্যস্ত যে, আমাদের প্রত্যাশার সাথে প্রাপ্তি কতটুকু!’

‘নিঃসন্দেহে প্রত্যাশার তুলনায় প্রাপ্তি কম নয়, কিন্তু আজও তৃণমূল বা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গ্রাম-বাংলার মানুষের অধিকার নিয়ে সমালোচনার ঝড় সব জায়গায়। বাঙালির জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখা স্বপ্ন “ডিজিটাল বাংলাদেশ” গড়ার প্রধান অন্তরায়গুলো আজও আমরা দূর করতে পারিনি। দুর্নীতি, ধর্ষণ, লুট, চাঁদাবাজি, হয়রানি দিন দিন ক্রমবর্ধমান। এত প্রতিবন্ধকতার মধ্য থেকেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন, হাতে নিয়েছেন যুগোপযোগী সব মেগা প্রকল্প, দুর্নীতির বিরুদ্ধে ঘোষণা করেছেন ‘জিরো টলারেন্স’ যা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার এক একটা সোপান। আসুন প্রত্যেকে প্রত্যেকের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে আমাদের দেশকে বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড় করাতে সহায়তা করি। এটাই হোক বিজয় দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।’

অন্যদিকে বিজ্ঞান অনুষদের অর্পিতা দাস বলেন, ‘পৃথিবীর সব স্বাধীন দেশের স্বাধীনতা দিবস থাকলেও বিজয় দিবস থাকে না। বাংলাদেশ সেই বিরল সৌভাগ্যের অধিকারী দেশ, যেটি ২৪ বছরের রাজনৈতিক আন্দোলন-সংগ্রামের পর রণাঙ্গনে শত্রুকে পরাজিত করে বিজয় অর্জন করেছে। বাঙালির জাতীয় চেতনা ও ঐতিহ্যের এক তাৎপর্যপূর্ণ দিন বিজয় দিবস। শৌর্য আর বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় দিন। এই দিনটি জাতিকে স্মরণ করিয়ে দেয় অনেক রক্ত, লাশ আর যুদ্ধ।’

আরও পড়ুন : সোনালী সময় আর সম্পর্ক কেড়ে নিচ্ছে বিজ্ঞান

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র সংগ্রামের পর ৪৯ বছর আগের এই দিনে আসে চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। এই দিনে আমারা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি সেই সব বীর যোদ্ধাদের, যাদের মহান আত্মবলিদানের ফলে পেয়েছি লাল-সবুজের এই সোনার বাংলা।’

তার মতে, এবারের বিজয় দিবসের শপথ হোক, সব ধরনের হানাহানি, বৈরিতা ও বিদ্বেষকে পেছনে ফেলে দেশের ও জনগণের কল্যাণে সবাই এক হয়ে কাজ করা।

এ দিকে, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের নূর-ই-তাবাসসুম বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির এক চেতনার নাম। আর বিজয় দিবস সেই চেতনাকে ছড়িয়ে দিয়েছে কোটি বাঙালির প্রাণে। ’৭১ এর স্বাধীনতা সংগ্রাম আমাদের শিখিয়েছে কীভাবে অন্যায়, অবিচার, শোষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে গর্জে উঠতে হয়। প্রতি বছর বিজয় দিবস আমাদের মনে অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার প্রেরণা দিয়ে যায়। তরুণ প্রজন্মের উচিত লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বিজয়ের চেতনায় উদ্দীপ্ত হয়ে দেশবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা।’

তরুণ এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘স্বাধীনতা যুদ্ধে গৌরবময় বিজয় অর্জনের মাধ্যমে বাঙালি জাতি বিশ্বের দরবারে স্বতন্ত্র পরিচয় লাভ করেছে। বাঙালির জাতীয় জীবনে বিজয় দিবসের তাৎপর্য অনস্বীকার্য। প্রতি বছর বিজয় দিবস উদযাপনের মধ্য দিয়ে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বাঙালির আত্মত্যাগের মহিমা সম্পর্কে সচেতন হয়ে ওঠে। এরই ফলশ্রুতিতে তারা স্বাধীনতা সংগ্রাম, বাঙালি জাতিসত্তার ইতিহাস-ঐতিহ্য, ভাষা-সংস্কৃতি প্রভৃতি নিয়ে গবেষণাধর্মী কাজ করতে আগ্রহী হচ্ছে। যা বিশ্বের কাছে জাতি হিসেবে বাঙালির মান-মর্যাদা আরও বাড়িয়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে।’

অন্যদিকে জীববিজ্ঞান অনুষদের মো. তানভীর হোসেনের মতে, ‘বিজয় মানে আনন্দ, বিজয় মানে সাফল্য। আর এই সাফল্য ছিল পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান তথা পূর্ববাংলাকে স্বাধীন করার সাফল্য। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের পর ৩০ লাখ বাঙালির দামাল ছেলেদের তাজা প্রাণ, অসংখ্য মা-বোনদের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে এ বিজয়। বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে এটি সবচেয়ে গৌরবময় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিন। দিনটি সাধারণভাবে বাঙালি জাতির জন্য পরম গর্বের।’

তিনি বলেন, এ দিনে পৃথিবীর মানচিত্রে নতুন একটা সার্বভৌম দেশের নাম চিরকালের জন্য এঁকে দিয়েছে বাংলার মানুষ। এই বিজয়ের পেছনে যে মানুষটি ছিল মহানায়ক তিনি হচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙ্গালি জাতি অতীত ও বর্তমান প্রজন্ম শ্রদ্ধাভরে এই দিনটিকে স্মরণ করি।’

লেখক: শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া।

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড