মো. জাকারিয়া হোসাইন অর্ণব
করোনা মহামারিতে পুরো পৃথিবী যখন এক মায়াজালে আবদ্ধ ঠিক সেখানেই তারই সঙ্গে এক চরম অনিশ্চয়তায় থমকে গিয়েছে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা ।
তবে থেমে যাওয়া শিক্ষাব্যবস্থার চাকা ঘুরাতে বাংলাদেশ সরকার থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। যার ভেতর সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ঘরে বসেই ডিজিটাল পাঠ গ্রহণ অর্থাৎ অনলাইন ক্লাস। দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মোটামোটি চেষ্টা করে অনলাইন ক্লাস শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সক্ষম হলেও এই দৌড়ে একটু ভালভাবেই পিছিয়ে পড়েছে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।
যার তালিকায় প্রথম কাতারেই রয়েছে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় (বুটেক্স)। গত এপ্রিল মাসের সেমিস্টার ফাইনালের জন্য মার্চ মাসে হয়ে যাওয়া ফর্ম ফিলাপের পর থেকে আজ ২৫ জুন পর্যন্ত করোনা মহামারির কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা কার্যক্রম থেকে সম্পূর্ণ রূপে বিচ্ছিন্ন রয়েছেন বুটেক্স শিক্ষার্থীরা।
অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম যেখানে এই সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় ঠিক সেখানেই বুটেক্স প্রশাসন একরকম নিশ্চুপ।
অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম সম্পাদনের পক্ষে যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অংশ অবস্থান করছে সেখানেই এর বিপরীতে মত প্রদান করছেন শিক্ষার্থীদের অন্য একটি অংশ। বিপরীতে অবস্থান করার কারণ জানতে চাওয়ায় তারা দায়ী করছেন ডিজিটাল সেবার উপযুক্ত সুবিধা থেকে দূরে থাকার ব্যাপারটিকে।
বিস্তারিতভাবে বললে, টেক্সটাইল শিক্ষার্থীদের একটি বিশাল অংশই ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা নয়। শিক্ষার প্রয়োজনে তারা ঢাকায় এসে বিশ্ববিদ্যালয় হলে থেকে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় তারা সবাই এখন নিজ গ্রামে অবস্থান করছেন। যেখানে কিছু কিছু এলাকায় ইন্টারনেট সেবা পর্যাপ্ত নয়। অনেকের ল্যাপটপ, কম্পিউটার এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে স্মার্টফোনও নেই।
এই সমস্যার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা আরও একটি কারণে দোটানায় আছেন। সেটি হলো অনলাইন ক্লাস। যেহেতু তাদের পূর্ববর্তী সেমিস্টারের ক্লাস শেষ হয়েই বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়েছে এবং ফাইনাল পরীক্ষাও এখনো সম্পন্ন হয়নি তাই পরীক্ষা না দিয়ে নতুন সেমিস্টারের ক্লাস কিভাবে শুরু করবেন তা নিয়ে সবাই একটি অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে আটকে পড়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা দোটানায় আটকে থাকলেও এ ব্যাপারে বরাবরের মতোই নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ঢাবি, কুয়েট, চুয়েট সহ প্রায় অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন শিক্ষার জন্য নানান পদক্ষেপ নিলেও টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় যেন ঘুমন্ত অবস্থায় আছে। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং শিক্ষকদের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলেও সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে ব্যর্থ হয়েছেন তারা। গুণে গুণে নতুন করে সকল ব্যাচ এর প্রায় এক বছর করে সেশনজট হয়ে গেছে জেনেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন নিশ্চুপ ভূমিকার তীব্র সমালোচনা করেছেন শিক্ষার্থীরা।
আরও পড়ুন : শিক্ষায় ছন্দপতন
এ সমস্যা নিরূপণের উপায় জানতে চাওয়া হলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে যে মত আসে তা হলো-
১. অ্যাসাইনমেন্ট ভিত্তিতে ফাইনাল পরীক্ষা সম্পন্ন করা বা ক্লাস টেস্ট সহ পূর্ববর্তী রেজাল্টের ভিত্তিতে অটো রেজাল্ট তৈরি করে নতুন সেমিস্টারের ক্লাস শুরু করা, ২. সবার কাছে ডিজিটাল সেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে মাসিক ৩-৫ জিবি ইন্টারনেট সুবিধা পাবার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ প্রদান। ৩. লাইভ ক্লাসে যেহেতু সঠিক সময়ে সবার উপস্থিতি সম্ভব নয় তাই রেকর্ড ক্লাস করানোর মাধ্যমে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়া। ৪. পরিস্থিতি ঠিক হওয়ার আগ পর্যন্ত নতুন সেমিস্টারের ক্লাস টেস্ট সরূপ পরীক্ষাগুলো অ্যাসাইনমেন্ট আকারে নেওয়া। ৫. ছাত্র প্রতিনিধি এবং শিক্ষকদের মধ্যে একটি অনলাইন মিটিংয়ের মাধ্যমে অতি তাড়াতাড়ি কোনো সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো।
লেখক : শিক্ষার্থী, শিল্প ও উৎপাদন প্রকৌশল বিভাগ, ৪৪ তম ব্যাচ, বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড