• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

হতাশার ভারে নিমজ্জিত এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা

  মামুন সোহাগ

২৯ এপ্রিল ২০২০, ১৫:০২
এইচএসসি
ছবি : সম্পাদিত

অনিশ্চয়তা। গভীর এক অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ। প্রাণঘাতী করোনার প্রকোপে এক রকম স্থবির হয়ে আছে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় সবই বন্ধ। ক্লাস, পরীক্ষা কোনো কিছুই নেই। তবে পরীক্ষার্থীরা ঘরবন্দী থেকেই নিজেদের মত করে নিচ্ছে প্রস্তুতি।

কোয়ারেন্টিনের দিনগুলোতে বইয়ের পাতায় তাকালে ঝাপসা দেখছে শিক্ষার্থীরা। এ যেনো মানসিক অপ্রাপ্তির ঢেঁকুর ছাড়া কিছুই না। অ্যাকাডেমিকভাবে শিক্ষার্থী বিবেচনায় সবথেকে নাজুক অবস্থায় রয়েছে এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা। একদিকে কলেজ থেকেও পুরোপুরি বিদায় নিতে পারেনি দেশের সিংহভাগ এইচএসসি পরীক্ষার্থী ; অন্যদিকে পাচ্ছেনা শিক্ষকদের তেমন গাইডলাইন।

এইচএসসি পরীক্ষার্থী আফরিন জাহান প্রিয়া ঢাকার বাসিন্দা। পড়ছে টিকাটুলির সেন্টার উইমেন কলেজে। মুঠোফোনে কথা হয় এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে। পড়াশোনার কি অবস্থা প্রশ্ন করতেই জানান, আগের মত মনোযোগ নেই পড়াশোনায়। করোনায় ঘরবন্দী থেকেই নিতে হচ্ছে প্রস্তুতি। আগের মত বাসায় হোম টিউটর আসে না। কোচিং প্রাইভেটের প্রয়োজনে সকাল বিকাল বাইরেও যাওয়া যাচ্ছে না। ঘরে থেকেই টেস্ট পেপার দেখেই প্রস্তুতি চলছে।

এছাড়া, কলেজ কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব সম্বন্ধে জানতে চাইলে এই শিক্ষার্থী আরও জানায়, এখন অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস নিচ্ছে শিক্ষকেরা। তবে আগের মত মনোযোগ আসে না। না বুঝলেও পাল্টা প্রশ্ন করার তেমন সুযোগ থাকে না। আবার পরীক্ষা কবে সেই দিন তারিখ অজানা।

এ তো গেলো ঢাকায় থাকা শিক্ষার্থীদের কথা। মফস্বল শহর কিংবা গ্রামের এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের অবস্থা আরও নাজুক। রাজধানীর হালচাল গ্রামে একেবারে নেই। সেখানে অনলাইন ক্লাস কিংবা হোম টিউটরদের সাথে হরহামেশা যোগাযোগ নিছক স্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই না।

মফস্বল শহর ঝিনাইদহের সরকারি কেসি কলেজে পড়ছে সাইমুন রহমান। চোখেমুখে একরাশ হতাশা নিয়ে এই শিক্ষার্থী শোনান তার প্রস্তুতির গল্প। তিনি বলেন, ‘আমি একজন এইচএসসি পরীক্ষার্থী। সার্বিকভাবে আমার পরীক্ষা প্রস্তুতি ভালো থাকলেও এখন আবার সেই প্রস্তুতি নতুন করে নিতে হচ্ছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে মানসিক চাপ বাড়ছে যার কারণে প্রস্তুতির কিছুটা ব্যাঘাত ঘটছে।’

এই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘দশম শ্রেণি পর্যন্ত সংসদ টিভিতে ক্লাস চললেও উচ্চমাধ্যমিকের কোনো ক্লাস, চর্চা হচ্ছে না। অনেকটা হতাশায় কাঁধ ভারি করেই নিতে হচ্ছে সামনের পরীক্ষা প্রস্তুতি।’

এদিকে, এপ্রিলের প্রথমে সারা দেশে একযোগে পরীক্ষা হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে ২২ মার্চ সব স্থগিত করা হয়। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ঘরে বসে প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। করোনার প্রকোপ ভয়াবহ দেখে প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্স সাফ জানিয়ে দিয়েছেন করোনা দুর্যোগ না গেলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ থাকবে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। তাই বলা যায়, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আপাতত খোলা হচ্ছে না। করোনা ভাইরাস যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে অন্তত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্কুল-কলেজ সবই বন্ধ থাকবে।

আরও পড়ুন : করোনায় কর্তব্য ভুলে যায় নি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা

করোনাভাইরাস সংক্রমণে ৯১ শতাংশ শিশু ও তরুণ মানসিক চাপ ও শঙ্কার মধ্যে রয়েছে। শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া, সামাজিক দূরত্বের কারণে মানসিক চাপ এবং পরিবারে দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়ায় তারা হতাশায় ভুগছে। তবে এর মধ্যেও শিশু ও তরুণেরা এ ভাইরাস রোধে নিজ নিজ কমিউনিটিতে ভূমিকা রাখতে চায়। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের এক জরিপে এসব তথ্য এসেছে।

গতকাল মঙ্গলবার ‘চিলড্রেন ভয়েসেস ইন দ্য টাইম অব কোভিড-১৯’ শিরোনামে এই জরিপ প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, মহামারির সময়ে স্বাভাবিক জীবনে ছন্দপতনের জন্য সরাসরি তিনটি কারণকে উল্লেখ করেছে শিশুরা। সেগুলো হলো শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়া, সামাজিক দূরত্বের কারণে মানসিক চাপ এবং পরিবারে দারিদ্র্য বেড়ে যাওয়া। শতকরা ৭১ ভাগ শিশু ও তরুণ বলেছে, স্কুল কলেজ বন্ধের কারণে তারা নিজেদের বিচ্ছিন্ন ও নিঃসঙ্গ অনুভব করছে।

লেখক : শিক্ষার্থী, সরকারি তিতুমীর কলেজ

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড