• বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মাতৃভাষার প্রতি তরুণদের যত্নশীল হওয়ার আহ্বান

  আহমেদ ইউসুফ

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২০, ১২:০৬
বাংলা ভাষা
ছবি কৃতজ্ঞতা- মুনতাসির হক মুন

বায়ান্ন। রফিক, সালাম, বরকতদের রক্তস্রোতের বিনিময়ে সেদিন আমরা পেয়েছিলাম প্রাণের মাকে ডাকার অধিকার। মুক্তি পেয়েছিল অসংখ্য তালাবন্ধ না বলার অঙ্গীকার। হারিয়েছিল হানাদারদের অকথ্য নির্যাতনের প্রতিবিম্ব। শির তুলে দাঁড়িয়েছিল সেই স্বপ্নের জয়গান- মোদের গরব মোদের আশা, আ মরি বাংলা ভাষা।

আজও আমরা সেই শহীদদের বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করি। শহীদ মিনারে ফুল দেই। প্রভাত ফেরি করে শহীদ মিনারে দলে দলে যাই। কিন্তু ভাষাকে কি অন্তরে ধারণ করি? নাকি ভাষাকে ধারণ করার নামে গলা টিপে হত্যা করি! এসব প্রশ্ন এখন উঠে আসে। দাঁড়িয়ে যায় দেয়াল হয়ে। হয়তো কখনো এসে আকুতি করে বলে, এবার আমায় মুক্তি দাও।

বর্তমান তরুণ প্রজন্মের কাছে সেই ভাষা এবং ভাষা শহীদদের মর্যাদা কতটুকু! তারা ভাষাকে হৃদয়ে ধারণ করছে কি না সে বিষয়ে মাঝেমধ্যেই প্রশ্ন উঠে। আমরা কতটা মর্যাদার আসনে রাখতে পেরেছি এই বাংলা ভাষাকে? যার প্রমাণ মেলে বিভিন্ন সময়ে সংবাদ মাধ্যমগুলোতে উঠে আসা চিত্রে। তরুণরা এমন সব শব্দ ব্যবহার করছে (যেমন- হুদাই, পিনিকে আছি, প্যারা, মাইরালা, বিন্দাস, ঝাক্কাস, পাংখা ইত্যাদি) যার কোনটির খোঁজ মেলে না অভিধানে।

প্রতি ফেব্রুয়ারিতে আমরা শহীদদের যথাযথ মর্যাদায় স্মরণ করে শহীদ মিনারে ফুল দেই। কিন্তু সকাল বেলায় মাতৃভাষা বাদে উচ্চ শব্দে হিন্দি কিংবা ইংলিশ গান বাজানোর দৃশ্যের দেখা মেলে অহরহ। অথচ কেউ জানতে চায় না কবে, কখন, কীভাবে এই বাংলা ভাষা আমাদের কাছে আসে। কত ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত এ ভাষা।

অনেকেই জানে না তৎকালীন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী কর্তৃক শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে বিচ্ছিন্নতাবাদী উপাধি দেওয়ার ইতিহাস। অনেকেই জানেন না গণ পরিষদে ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের আনা বিল নাকচ হয়ে যাবার পরে সেই দাবিতে ১১ মার্চের ধর্মঘটে ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মতো শিক্ষকরা সামনে থেকে রাস্তা দেখিয়েছিলেন। এই আন্দোলনে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, আলী আহাদ ও রণেশ দাশগুপ্তসহ অসংখ্য ছাত্রনেতারা।

তাইতো ভাষা দিবসে তরুণদের মাতৃভাষার প্রতি আবেগ, ভালোবাসা আর যত্নবান হওয়ার আহ্বান জোরালো হয়। আবেগ প্রকাশ করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ বলেন, ‘তরুণরা একটি দেশের মূল চালিকা শক্তি। তারা চাইলে দেশের মূল শক্তিতে প্রভাব বিস্তার করতে পারে। বাংলা ভাষা একটি স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ভাষা। কিন্তু আমরা বাঙালিরা সেটিকে উপলব্ধি করতে পারি না কিংবা উপলব্ধি করেও কাজে প্রমাণ করতে পারি না। তাই তরুণদের উচিত ভাষার মর্যাদা রক্ষায় এগিয়ে আসা।’

এ বিষয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. জি. এম. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের তরুণ প্রজন্ম মাতৃভাষাকে ধারণ করবে। ভাষাকে মাধুর্যতার রঙে রাঙিয়ে হৃদয়ে ধারণ করবে। এটাই ছিল বায়ান্নর আহ্বান। সেদিনও তরুণরা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় অগ্রণী ছিল। এখনো ভাষাকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দিতে তরুণদের অগ্রনায়ক হতে হবে। তবেই বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মূল্যায়ন হবে বলে মনে করি।’

লেখক : আহমেদ ইউসুফ, শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

ওডি/এনএম

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড