আহমেদ ইউসুফ
প্রতি বছরই এক ঝাঁক নবীন ভিড় জমায় ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে। আবার দীর্ঘ ক্যাম্পাস জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েন আরেকদল প্রবীণ। আসা যাওয়ার এই মধুর স্মৃতিই আমৃত্যু হৃদয়ে গেঁথে রাখেন ক্যাম্পাসিয়ানরা।
অনেকে বলে থাকেন তাদের নাকি প্রথম পরিবার জন্মস্থান আর দ্বিতীয় পরিবার নিজ ক্যাম্পাস। ছোট-বড়, বন্ধু, শিক্ষক, প্রিয়জন কয়েকটি পরিচয়ে অনেকে আবার পার করে দেন জীবনধারা। এ যেন মধুর সম্পর্কের মেলা। হয়তো এটাই দেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর যুগ যুগ ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে শির উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকার স্তম্ভ।
সকলের সুখে দুঃখের সাথী হওয়ার বর্ণনা বোধ হয় এই ক্যাম্পাসিয়ানদের দেখেই অন্যরা বুঝতে পারেন অবলীলায়। আরেকটু বললে পরিষ্কার হবে বিষয়টি, এই যখন নবীন শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস পাড়ায় আসে, তখন সিনিয়ররা নিজ দায়িত্বে এগিয়ে যায়। বরণ করে নেয় শাশ্বত আয়োজনে। এক নতুন মধুর সম্পর্কের বাঁধনে জড়িয়ে পড়েন উভয়েই। যে অনুভূতিগুলো দূর থেকে বুঝতে একটু সময় লাগতে পারে।
আবার সহপাঠীদের মধ্যে নতুন আরেক সম্পর্কের সৃষ্টি হয়। যে সম্পর্কের টানে একজনের প্রয়োজনে অন্যজন থাকেন শক্ত খুঁটি হয়ে। যার প্রমাণ মেলে বিভিন্ন সময়ে ক্যাম্পাসিয়ানদের বাবা-মা, ভাই-বোন, অথবা নিকটাত্মীয়দের মুমূর্ষু অবস্থায় অর্থ সংগ্রহের ক্ষেত্রে। তখন সেখানে বন্ধু-সহপাঠীরা নিঃস্বার্থে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে। এটাই হলো ক্যাম্পাসিয়ানদের বুক ফুলিয়ে কথা বলার জায়গা।
এই সম্পর্কগুলোর অনন্য পরিচয় মেলে দেশের ২৬তম সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়া কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি)। বলা হয়ে থাকে দেশের অন্য অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনায় এই প্রাঙ্গণে সহোদর সম্পর্কগুলো অত্যন্ত মধুর।
এই উদারতা এবং সহোদর দৃষ্টিভঙ্গির উদাহরণ হিসেবে এখানকার শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন উদ্যোগের কথা বলতে হয়, যা বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় একাধিকবার খবরের শিরোনাম হয়েছে।
এর মধ্যে গত এপ্রিলে পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী নকিবের বাবার চিকিৎসার খরচ জোগাড় করতে সহায়তা করে তার সহপাঠীরা। গত জুলাইয়ে ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের গণিত বিভাগের জাকির হোসাইন নামের এক শিক্ষার্থীর চিকিৎসার খরচ জোগাড় করে দেয় তার বন্ধুরা। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান তানিমের ক্যানসার চিকিৎসায় প্রায় ২০-২৫ লক্ষ টাকা জোগাড় করে দেয় তার বিভাগের বন্ধু, বড় ভাইরা।
অ্যাকাউন্টিং বিভাগের তন্ময়, রসায়ন বিভাগের সজীব, ব্যবস্থাপনা বিভাগের রাজেশ গোপ, মার্কেটিং বিভাগের ফারুকসহ অসংখ্য শিক্ষার্থী এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের চিকিৎসার খরচ জোগানের নজির স্থাপন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের।
নবীন শিক্ষার্থীদের আগমন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম ব্যাচের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী সালমা আখতারের কাছে অনুভূতি জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, ‘এই ক্যাম্পাসে আমরা এসেছি এক বছর শেষ হতে চলল। নতুন আরেকটি ব্যাচ আসবে কয়েকদিনের মধ্যেই। তাদের আমরা ছোট ভাই-বোনের মতো আপন করে নিব। সবাই একসঙ্গে মিলেমিশে থাকব। যতটা সম্ভব তাদের আমরা সহযোগিতা করব। দুটো ব্যাচের মধ্যে যাতে কোনো দূরত্ব না থাকে সে চেষ্টা করব। তাদের সকল প্রয়োজনে আমরা এগিয়ে যাব এবং সবাই একই বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে চলব এই কুবি ক্যাম্পাসে। এটাই প্রত্যাশা।’
এ দিকে প্রতিবছরের নবীনদের আগমনী আর প্রবীণদের বিদায়ের বিষয়ে অভিজ্ঞতা এবং অনুভূতি জানতে চাওয়া হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ম ব্যাচের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের প্রবীণ শিক্ষার্থী ইমরান মাহমুদ জীবন বলেন, ‘জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে ১৪তম ব্যাচের ক্লাস শুরু হবে। আমার সঙ্গে তাদের পার্থক্য প্রায় ছয় বছর। কিন্তু সত্যি বলতে কাউকে ন্যূনতম দূরের মনে হচ্ছে না। মনে হচ্ছে আমার ঘরে নতুন মেহমান আসছে। আমি বরণ করে নিতে প্রস্তুত। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবনটা এমনি। এই ক্যাম্পাসে আর বেশিদিন হয়তো নেই। তবে এই ভালোবাসার বন্ধনগুলো স্মৃতির পাতায় রয়ে যাবে আজীবন।’
কবির ভাষায় আকুতি ব্যক্ত করে বলি তাই,
‘এসো হে নবীন তোমার জন্য অলংকৃত করেছিনু আমাদের এ ভুবন। তুমি আসবে এবার অপেক্ষার শেষে করিতে মনোরম সুভাষিত এ প্রাঙ্গণ। এসো হে নবীন আমাদের এ ভুবন।’
লেখক : শিক্ষার্থী, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়
ওডি/এমএ
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড