• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দেশে উচ্চশিক্ষায় ভর্তি প্রক্রিয়ায় জনস্বার্থ উপেক্ষিত

  মো. সোলায়মান মিয়া

০৮ আগস্ট ২০১৯, ১৬:৩৩
ভর্তি প্রক্রিয়া
ছবি : প্রতীকী

আমরা প্রায়ই দেখি যে, বিভিন্ন বিষয়ে জনস্বার্থ বিঘ্নিত হলে বিভিন্ন ব্যক্তি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। অনেক সময় আদালতও জনগণের কল্যাণ ও মঙ্গলের কথা বিবেচনা করে স্বপ্রণোদিত হয়ে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। জনকল্যাণের জন্য করা এই সব কার্যক্রম নিঃসন্দেহে মঙ্গলজনক। যারা এসব করে তারা নিশ্চয়ই দেশপ্রেমিক এবং দেশের ও জনগণের মঙ্গলের কথা ভাবেন।

সম্প্রতি দেশে এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। এরপর উচ্চশিক্ষার জন্য ছেলে-মেয়েরা বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তির জন্য ভর্তি যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে। সেই ভর্তিযুদ্ধে তাদের স্বতন্ত্রভাবে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আলাদাভাবে আবেদন করতে হবে এবং আলাদাভাবে অর্থও প্রদান করতে হবে। তারপর পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য শুরু হবে ভ্রমণ। আজ ঢাকা তো কাল রাজশাহী, পরশু সিলেট, তরশু খুলনা, চট্টগ্রাম। এইভাবে সে দুই-তিন মাস যাবত এক জেলা হতে আরেক জেলা, এক বিভাগ হতে আরেক বিভাগে ভর্তি পরীক্ষা দেবার জন্য ছুটে বেড়াবে। এই ছুটে বেড়ানোর ফলে সে বা তারা শারিরীক ও মানসিকভাবে উদভ্ৰান্ত ও বিভ্রান্ত হবে। আর যারা মেয়ে শিক্ষার্থী আছেন, তারা তাদের অভিভাবকদের নিয়ে ঐ একইভাবে সারদেশ চষে বেড়াবেন ভর্তি পরীক্ষা দেবার জন্য। ভাবা যায় বিষয়টা কতটা বিড়ম্বনার? অথচ আমরা বলছি দেশ ডিজিটাল হয়েছে। শিক্ষায় উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু ভর্তি প্রক্রিয়া ও পদ্ধতিতে কোনো দৃশ্যত উন্নতি চোখে পড়ছে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিয়ে এই যে ব্যাপক ও বিচ্ছিন্ন কর্মকাণ্ড তা নিরসনের জন্য তিন চার বছর আগে দেশের স্বনামধন্য শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যার নিজে দায়িত্ব নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রক্রিয়াকে গুচ্ছাকারে করার প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কোনো সাড়া পাননি। স্বায়ত্তশাসনের নামে দেশের ছেলে মেয়েদের ভর্তির নামে হয়রানি বন্ধের জন্য গুচ্ছাকারে পরীক্ষা না নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু উচ্চশিক্ষার সঙ্গে যারা জড়িত তারা তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থের কথা বিবেচনা করায় বিষয়টি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। কোটি কোটি টাকা স্বায়ত্তশাসনের নামে আয় করা হচ্ছে। কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে জনগণের স্বার্থ ও সুবিধাই সবার আগে বিবেচনা করা হয়, কিন্তু এক্ষেত্রে অল্প কিছু লোকের সুবিধাকে প্রাধান্য দিয়ে অধিক সংখ্যক জনগণকে কষ্ট ও হয়রানি করা হচ্ছে।

গুচ্ছাকারে পরীক্ষা হচ্ছে- একটা বা একবার পরীক্ষা দিয়ে অনেকগুলো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়া। সমমানের বা ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় এর গুচ্ছ, বিষয়ভিত্তিক গুচ্ছ, বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ। এমন গুচ্ছ হলে শিক্ষার্থীরা তিন-চারটা পরীক্ষা দিয়েই তার কাঙ্ক্ষিত বিষয়ে ভর্তির সুযোগ পেতে পারে। তাকে আর তখন জেলায় জেলায়, বিভাগে বিভাগে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেবার জন্য ঘুরে বেড়াতে হবে না। সে তার সুবিধামত কেন্দ্র নির্বাচন করে পরীক্ষা দেবে। এখানে উল্লেখ্য যে, মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা গুচ্ছাকারে হয়ে থাকে।

দেশের জনস্বার্থে অনেক রিট করা হয়; জনগণের স্বার্থ বা কল্যাণ বিঘ্নিত হয় তার জন্য মহামান্য আদালতও স্বপ্রণোদিত হয়ে রিট করেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই যে, অদ্যবধি প্রতিবছর দেশের লক্ষ লক্ষ জন সাধারণ শিক্ষার নামে আর্থিক, মানসিক ও শারীরিকভাবে হয়রানি হচ্ছে সেই বিষয়টা কেউ দেখছে না, কেউ দেখার প্রয়োজনও মনে করছে না। কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কাছে বিষয়টা মাথা নুয়ে আছে।

আমরা জানি, দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আচার্য হচ্ছেন রাষ্ট্রপতি। তিনি সকল উপাচার্যকে ডেকে যদি বলে দেন যে, সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা হবে গুচ্ছাকারে। কোনো বিশ্ববিদ্যালয় স্বতন্ত্রভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিতে পারবে না। রাষ্ট্রপতির এমন নির্দেশনাই তা বাস্তবায়নের জন্য যথেষ্ট হবে। অথবা প্রধানমন্ত্রী জনস্বার্থ বিবেচনা করে রাষ্ট্রপতিকে বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করতে পারেন।

জনস্বার্থ বিবেচনায় উচ্চশিক্ষায় ভর্তির প্রক্রিয়া গুচ্ছাকারে বাস্তবায়ন হোক; সেই আশাবাদ ব্যক্ত করে রাষ্টপতি, প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষাবিদ, আইনজীবী ও উপাচার্যদের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

লেখক : সহকারী অধ্যাপক, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

ওডি/আরএআর

  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড