মো. রাহাত খান
২০১৯ সালের ১৯ ডিসেম্বর চীনের উহানে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হবার পর এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের (কোভিড-১৯) সংক্রমণ পুরো বিশ্বর জন্য একটি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইতোমধ্যেই বিশ্বজুড়ে ভাইরাসটিকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা করেছে।
সম্ভবত একবিংশ শতকের জন্য এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ, হোক সেটা স্বাস্থ্য খাত, শিক্ষা খাত, অথবা ব্যবসা খাত। কিছুদিন আগে জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলো মরকেল বলেছেন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই করোনা পরিস্থিতিই নাকি জার্মান সরকারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
যদিও যুদ্ধ পরবর্তী বাংলাদেশে নিয়মিতই বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক ও কৃত্রিম নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। আর সেজন্যই হয়তো আমাদের অনেকেই শুরুর দিকে করোনা পরিস্থিতিকে খুব একটা ভয়াবহ মনে করিনি এমনকি এখনো অনেকের মাঝেই সচেতনতার পর্যাপ্ত অভাবও দেখা যাচ্ছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে করোনা পরিস্থিতি যেমনটা ভয়াবহ ঠিক তার থেকেও বেশি ভয়াবহ হতে পারে করোনা পরবর্তী দেশের জীবন, জীবিকা এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি।
প্রধানমন্ত্রীও একাধিকবার তার বিভিন্ন ভাষণে একই বিষয় নিয়ে দেশবাসীকে সচেতন করেছেন। তবে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও দীর্ঘমেয়াদে অর্থনৈতিক চালিকাশক্তির ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য আগামীদিনের ব্যবসায় চ্যালেঞ্জ ও সুযোগের কথা আমাদের মাথায় রাখতে হবে। তারই ধারাবাহিকতায় আজকে যে বিষয় গুলো নিয়ে লিখতে চাচ্ছি তা হলো করোনা পরবর্তী বিনিয়োগের জ্ঞান ক্যামন হওয়া উচিৎ যা দেশের বিনিয়োগকারীদের জন্য আগামীদিনের বৈশ্বিক ব্যবসায় চ্যালেঞ্জের নতুন দ্বার উন্মোচন করবে।
বিগত ১০ বছরে দেশের আকর্ষণীয় বিনিয়োগের খাত যা করোনা পরবর্তী সময়ে কিছুটা পরিবর্তন ও পরিমার্জন আসতে পারে।
১. কৃষি ও বনজ সম্পদ ২. মৎস্য সম্পদ ৩. বড়, মাঝারী, ও ছোট আকারের ম্যানুফ্যাকচারিং প্রতিষ্ঠান ৪. নির্মাণ খাত ৫. খুচরা ও পাইকারি ব্যবসা ৬. হোটেল ও রেস্টুরেন্ট ৭. ব্যাংক, ইন্সুর্যান্স, ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৮. শিক্ষা ৯. স্বাস্থ্য ও সমাজ সেবা (সূত্র, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা ২০০৯ থেকে ২০১৯)
অন্যান্য উন্নত দেশের তুলনায় আমাদের দেশে ব্যবসায় বিনিয়গের ব্যপারে বিনিয়োগকারীদের ব্যবসায় গবেষণার প্রবণতা খুবই কম। যদিও আমি তাত্ত্বিক গবেষণার কথা বলছিনা, কেননা সেটার জন্য কিছু অ্যাকাডেমিক জ্ঞানের দরকার। তবে আমাদের দেশের অনেক নামকরা ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান রয়েছে যাদের উদ্যোক্তাদের শুরুর দিকে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায় জ্ঞান ছিলনা। এ থেকে একটা বিষয় খুব পরিষ্কার যে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায় জ্ঞানের পাশাপাশি কিছু বিষয়ে জ্ঞান থাকা করুরি।
১. ক্যালকুলেটেড ঝুঁকি গ্রহণের স্বদিচ্ছা (মাত্রাতিরিক্ত ঝুঁকিও নয় আবার একেবারে ঝুঁকি বিহীনও নয়), ২. প্রয়োজনীয় পরিমাণ বিনিয়োগের অর্থ (যদিয় গবেষকদের মতে বিনিয়োগের সামর্থ্য এর থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো অত্যাধুনিক ব্যবসার আইডিয়া) ৩. পরিবেশ থেকে প্রাপ্ত সুযোগ (বই এর ভাষায় যাকে বলে Business Opportunities) ৪. বাজারে প্রথম প্রবেশকারী (ব্যবসার তাত্ত্বিক ভাষায় যাকে বলে First Mover Advantage; অর্থাৎ যিনি বাজারে প্রথম সেই অত্যাধুনিক ব্যবসায় আইডিয়াটি নিয়ে আসেন) এবং সর্বশেষ ৫. ভাগ্য (ভাগ্য না পড়ে পড়ুন পরিশ্রম, কেননা ভাগ্য তাদের জন্যই সুবিধা বয়ে আনে যারা ঝুঁকি গ্রহণ করে পরিশ্রম করে)।
আর এর সঙ্গে যদি ব্যবসায় তাত্ত্বিক জ্ঞানগুলো যুক্ত হয় সেটা দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠানের জন্য আরও ভালো ফল বয়ে আনতে পারে। তবে আমার সীমিত জ্ঞানে একটা বিষয় মনে হয়েছে যে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ব্যবসায়ী বিনিয়োগের ব্যাপারে নিজস্ব সৃজনশীলতার থেকে অনুকরণে বেশি আগ্রহী। আর যেটা কোনোভাবেই সৃজনশীল ব্যবসায় পরিবেশের জন্য সহায়ক নয়। এর সঙ্গে কিছু রাজনৈতিক প্রতিবন্ধকতাও রয়েছে তবে সেটা আমার মতে সৃজনশীল চিন্তা ও গবেষণার কাছে অনেকটাই তুচ্ছ বিষয়।
আরও পড়ুন : কেমন হবে করোনা উত্তর পৃথিবী
ব্যবসায় অনুকরণের কিছু উদাহরন তুলে ধরি, ধরুন শুরুর দিকে আমাদের গার্মেন্টসের সংখ্যা খুব কম ছিল। ফলে বিনিয়োগকারীরা বেশ ভালোই মুনাফা করছিলো। কিন্তু যখনই তাদের দেখাদেখি অন্য ব্যবসায়ীরা নতুন করে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান চালু করলো (পর্যাপ্ত বাজার গবেষণা ও তথ্য অনুসন্ধান ছাড়া) তাদের অনেকেই তেমন লাভের মুখ দেখেনি।
এখন আসুন খুবই নতুন ও সুপরিচিত একটি ব্যবসার বিষয়ে। যখন আমাদের দেশে কিছু স্বল্প বিনিয়োগকারী ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা কিনে নিজেদের ব্যবসা শুরু করলো তখন তাদের মুনাফা দেখে আরও কিছু স্বল্প বিনিয়োগকারীগণ একই ভাবে ব্যবসা শুরু করলো (পর্যাপ্ত বাজার গবেষণা ও তথ্য অনুসন্ধান ছাড়া)।
ফলে এই ব্যবসাতেও এখন আর শুরুর দিকের মুনাফা ও জৌলুস নেই। এ থকে বোঝা যাচ্ছে স্বল্প আকারে ব্যবসায় গবেষণা জ্ঞান ও সৃজনশীলতার অভাব ও প্রয়োজনীয়তা। তবে করোনা পরবর্তী ব্যবসায় পরবেশ হতে পারে আরও আধুনিক, গবেষণা ও তথ্য সমৃদ্ধ। ফলে করোনা পরবর্তী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে উপরের উল্লেখিত বিষয়গুলো মাথায় রেখেই বিনিয়োগকারীদের ব্যবসার বাজারে নামতে হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক ও ব্যবসায় গবেষক, সিটি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড