আহসান ইমাম
শীতের আগেই ঢাকার বাতাসে ‘বিপদ’ শিরোনামে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত প্রতিবেদন (১৫-১১-২০১৯) থেকে জানেছি নভেম্বর মাসের ২ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত বাতাসে ভাসমান বস্তুকণার পরিমাণ (পিপিএম) যথাক্রমে ১৭৩, ২৬৪, ২৩২, ১৮৪, ৩০৫, ৬০, ৪৩, ৮৪, ১৮৪, ২৩০। পত্র-পত্রিকা থেকে আরও জেনেছি, ঢাকা শহরের অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ, গাড়ির ধোঁয়া ও আশপাশের ইটের ভাটাগুলোর কারণে প্রতিবছর এ সময় বায়ুদূষণ বেড়ে যায়। ‘Dhaka is the second most air pollution city in the world’ নামে গ্রিনপিস এবং ভিস্যুয়ালের এই প্রতিবেদনটিও এখনো ডেইলি স্টারের অনলাইন সংস্করণে রয়েছে।
সাধারণত পিএম ২.৫ নামে বাতাসের দূষিত ভাসমান কণার মাত্রা দিয়ে বায়ু দূষণের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। এ রকম মাত্রার পরিমাণে প্রথম স্থানে রয়েছে দিল্লি (প্রতি কিউবেক মিটারে ১১৪ মাইক্রোগ্রাম) এবং এর কাছাকাছি রয়েছে ঢাকা (৯৭ মাইক্রোগ্রাম) এবং এর পরের শহরটি কাবুল।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, বায়ুদূষণের কারণে শ্বাসতন্ত্রের রোগ যেমন- হাঁপানি, নানা ধরনের এলার্জি বেশি হয়। এই ঝুঁকিতে শিশুরা এবং বয়স্করা রয়েছেন সবার আগে। এমনকি বায়ুদূষণের কারণে মানুষের গড় আয়ু কমে যাচ্ছে। শীতের পুরোটা সময় এদেশে বিভিন্ন ধরনের উৎসবের আয়োজন হয়ে থাকে। ঢাকা শহরকেন্দ্রিক উৎসবগুলোতে ঢাকার বাইরের শহর এবং বিভিন্ন দেশ থেকে লোকসমাগম হয়ে থাকে। এই সময় এই দূষণও ভীড় করে বা প্রকট হয়ে উঠে ঢাকায়।
বায়ুদূষণ সম্পর্কে আমার তেমন জ্ঞান নেই, তবে নিজে কিছু অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে গিয়েছি। এছাড়া গণমাধ্যমের কল্যাণে জেনেছি, বিশেষ করে ঢাকা শহরের বায়ুদূষণের অন্যতম কারণগুলো। ইটের ভাটা, কলকারখানা, নির্মাণকাজ এবং যানবাহনের ধোঁয়া। আমরা যারা জাহঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে থাকি তারা অনেকটা নিরাপদ এই বিষয় এবং অন্যান্য নানাদিক থেকে। তবে এই পরিসরের বাইরের চিত্র রীতিমতো আঁতকে ওঠার মতো।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গাবতলী যাওয়ার পথেই ইটের ভাটাগুলো চোখে পড়ে। অনেকক্ষেত্রে রাস্তার দু’পাশে ফসলের জমি নষ্ট করে ইট ভাটা তৈরি করা হয়েছে। ইট পোড়ানোর সময় চিমনি দিয়ে কালো ধোঁয়া বেরোয়। অনবরত সেই কালো ধোঁয়া বেরুতে দেখা যায়। শুধু বর্ষাকালে ভাটাগুলো বন্ধ থাকে। এই কালো ধোঁয়া বায়ুদূষণের মাধ্যমে মানুষের শরীরের জন্য মারাত্মক হুমকি। সরকার চাইলে ভিন্নপন্থায় পরিবেশবান্ধব ইটভাটা তৈরির কোনো পরিকল্পনা বা পদক্ষেপ নিতে পারে কিনা?
প্রতিনিয়ত কলকারখানার ধোঁয়া এবং বর্জ্য বায়ুদূষণ করে যাচ্ছে। ঢাকা শহরকে চারদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে কলকারখানা। পরিবেশ রক্ষার জন্য এগুলো অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যায় কিনা? অন্যথায় ঢাকা শহরে বসবাসরত ২০ কোটি মানুষ (সুত্র: world population review) আরও হুমকির মুখে পড়বে।
এই মুহূর্তে ঢাকার উন্নয়নের নিদর্শনস্বরূপ মেট্রোরেলের কাজ চলছে। নিঃসন্দেহে এই উন্নয়নের জন্য খানিক অস্বস্তি স্বাভাবিক। তবে ঢাকা শহরের কোথাও না কোথাও সবসময় নির্মাণ কাজ চলতেই থাকে। নির্মাণকাজের সঙ্গে যে বায়ুদূষণ তা রোধ করার ব্যবস্থাও পাশাপাশি জরুরি। অনেক উন্নত দেশ এক্ষেত্রে অনুকরণীয়।
বায়ুদূষণের আরেকটি বড় কারণ যানবাহন। এটি শুধু ঢাকা নয়, সারা পৃথিবীর বড় শহরের সমস্যা। তবে এর থেকে সমাধানের পথ তৈরি করেছে পৃথিবীর অনেক দেশ। এক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব যানবাহন তথা সাইকেল একটি সমাধান হতে পারে। এর জন্য প্রয়োজন নগরপরিকল্পনা এবং ব্যক্তিগত গাড়ি কমিয়ে টাউন সার্ভিসের মান উন্নত ও পরিমাণ বাড়িয়েও সমাধানের করা যেতে পারে। ভুটানের দিকে তাকালেও আমরা এ সকল সমাধানের রাস্তা বের করতে পারি। পরিবেশ রক্ষার জন্য তারা নানা ধরনের নিয়ম চালু রেখেছে বহুকাল থেকে।
এই পরিস্থিতিতে নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত অর্থাৎ শুষ্ক মৌসুমে বায়ুদূষণ রোধে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে আর্থ-সামাজিক অবস্থার সঙ্গে সঙ্গতিরেখে ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ধরনের পদক্ষেপ না নিলে বায়ুদূষণের কারণে গোটা জাতির স্বাস্থ্যগত, বুদ্ধিগত ও এই ভূখণ্ডের পরিবেশগত অবস্থা মৃত্যুর দিকে ধাবিত হবে।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
বি. দ্র : উপরের মতামতের দায় সম্পূর্ণ লেখকের ওপর বর্তায়, এই লেখা লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব মতামত বিধায় লেখাটির কোনো দায়-দায়িত্ব দৈনিক অধিকার বহন করবে না।
ওডি/আরএআর
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড