অধিকার ডেস্ক ২৪ অক্টোবর ২০১৯, ২৩:১৯
মানুষের ফাঁসি হবে শুনে হয়তো আরেকজন মানুষের খারাপ লাগতেই পারে। আর একজন মানুষের মৃত্যু মানুষের কাছে ভালো না লাগাই স্বাভাবিক। কিন্তু যখন মানুষ চেহারার দানবের মৃত্যু হয় তখন তা আর কারো হৃদয়কে ব্যথিত করে না। তেমনিভাবে নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকাণ্ডের আসামিদের ফাঁসি হওয়ায় স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছেন পুরো দেশ। নুসরাত হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ১৬ জনের ফাঁসির রায় দিয়েছেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
১৮ বছর বয়সী একটা দিনেদুপুরে বাচাও বাচাও করে চিৎকার করছে। একটা জীবন্ত মানুষ পুড়ে মরে যাচ্ছে কিন্তু কেউ সেই ডাক শুনতে পাচ্ছে না। মেয়েটি লড়াই করতে চেয়েছিলেন জীবনের শেষ পর্যন্ত। লড়াই তিনি করেছেন কিন্তু লড়াই করতে করতে যে জীবনটাই দিয়ে।
ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাত জাহান রাফির কথা বলছি। শুধুই নুসরাত কেনো, এই ঘটনাই তো এখন আমাদের নিত্তনৈমত্তিক ব্যাপার হয়ে গেছে। নির্বিচারে নারী-শিশু ধর্ষণ, ধর্ষণের পরে হত্যা, রাষ্ট্রের ক্ষমা করে দেয়ার এক অদ্ভুত ভূমিকা যেন আমাদের এই দেশটাকে অপরাধীদের আশ্রয়স্থল বানিয়ে দিয়েছে, ধর্ষণকারীদের অভয়া শ্রম হিসেবে গড়ে তুলেছে। কুলাঙ্গার কলেজ অধ্যক্ষ সিরাজউদ্দৌলা ধর্ষণ করেই ক্ষান্ত হননি। জেলে বসেই তার সাগরেদদের নুসরাতকে মেরে ফেলতে নির্দেশ দেন। এত সাহস এরা কোথায় পান?
সাহস যেখানেই পেয়ে থাক, আজ তাদের বিদায় ঘণ্টা বেজেছে। এ রায় আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক রায়। এই মামলা ও মামলার সাথে জড়িত বেশকিছু বিষয় নিয়ে অনেকগুলো বিষয় পরিলক্ষিত হয়েছে।
প্রথমত, এই মামলায় সোশ্যাল মিডিয়ার এক ধরণের শক্তি প্রকাশ পেয়েছে। আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক খারাপ দিক খুঁজে পেলেও সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই এই নৃশংসতা সম্পর্কে সবাই অবগত হয়েছে। পুরো দেশ নিন্দা জানিয়েছে এই গর্হিত অপরাধের।
এই মামলায় প্রকাশ পেয়েছে অত্যাচারীদের মনোভাব। আসলে পশুদের যে মানসিকতা বলতে কিছু থাকে না তা তারা প্রমাণ করেছে। নুসরাতকে হত্যা এবং হত্যা পরবর্তী বিভিন্ন কার্যক্রম সকলকে অবাক করেছে। পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হবার পর তারা তাদের হাসিমুখ আর দুই আঙুল দেখানো সবাইকে অবাক করেছে। এমনকি রাস্তায় মিছিল পর্যন্ত নামিয়েছে তারা। রায় হবার পর গালাগালি করেছে আসামীরা। এমন নৃশংসভাবে মারার পর তাদের একটু অনুশোচনা হবার কথা ছিল। যদি তারা মানুষ হয়ে থাকতো তবে তো সেটা থাকতো! আরেকটা বিষয় হচ্ছে, অতি দ্রুত সময়ে মামলায় রায় রয়েছে। মাত্র ৬১ কর্ম দিবসে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে।
এটা অবশ্যই একটা ইতিবাচক দিক। তবে ওসির বিচার হলে রায় পরিপূর্ণ হতো বলে দাবী ব্যারিস্টার সুমনের। আর আপিল বিভাগে আপিল করার সুযোগ থাকলেও সেখানে কোনো বিলম্ব বা অন্য কিছু হবে না বলেই সবার বিশ্বাস। কারণ এই আসামিদের বিচার সকলের প্রাণের দাবী। জনতার আক্রোশের আগুন যখন জ্বলে উঠেছে তখন তা নেভানোর শক্তি সমুদ্রের সমস্ত পানিরও নেই। যেহেতু বিচারহীনতা অপরাধ বাড়ায় সেহেতু এই মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি এবং পরবর্তীতে দ্রুত কার্যকর হলে সকলের মনে ভয় ধরাবে। হয়তো অপরাধীরাও ওকটু পিছিয়ে যাবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড