রহমান মৃধা
বাংলাদেশের গণমাধ্যমে ঢুকলেই কয়েকটি বিষয় বেশি বেশি করে নজরে পড়ে। ভেজাল, দুর্নীতি, অসুস্থতা ও চিকিৎসা। ভেজাল খাবার খাওয়া এবং অন্যকে খাওয়ানো মানে দুর্নীতি। পুরো দেশের সবাই দুর্নীতিযুক্ত।তার মানে কেউ দুর্নীতিমুক্ত নয়। এমন একটি অপ্রিয় সত্য কথা হুট করে বললেই হবে না। যুক্তিযুক্তভাবে এর বিশ্লেষণ দিতে হবে এবং তা গ্রহণযোগ্য হতে হবে। দেশের সব কিছুতেই ভেজাল। আমাদের কথায় ভেজাল। খাবারে, জমিজমায়, কাপড়ে, ঔষধে, শিক্ষায়, এমনকি শুনেছি বিষেও ভেজাল।
ছোটবেলায় বাজারে দুধ কিনতে যেতাম, দুধ নিয়ে বাড়িতে এলেই মা বলতেন দুধ পাতলা, পানি মিশিয়েছে। তখন এর বেশি অন্য কিছু যে মানুষ মেশাতে পারে শুনিনি। আর শুনেছি অনেকে বলেছে ‘আমাকে ঠকিয়ে তোমার কি লাভ?’ একবার একজন উত্তরে বলেছিল ‘তোমাকে ঠকানোই হলো আমার লাভ’।
কম খরচে কিনে বা উৎপাদন করে বেশি দামে বিক্রি করাই ব্যবসার মূল লক্ষ্য। কিন্তু ভেজাল, ফাঁকি বা বিষাক্ত কেমিকেল মিশিয়ে ব্যবসা করা মানব জাতির মোড়াল ভ্যালুর অবক্ষয় মাত্র।
কারণ দুধে কি শুধু পানি ভেজাল? নাকি পানি, পাউডার বা অন্য কোনো কেমিকেল জাতীয় দ্রব্য মেশানো হচ্ছে? পানি হলে সে পানি কি বিশুদ্ধ নাকি অশুদ্ধ? যে পাউডার বা ক্যামিকেল মেশানো হচ্ছে তা কি খাবারের জন্য তৈরি, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্যে তৈরি? পানি ও পাউডার যেমনই হোক তা ভেজাল হিসেবে দুধে মেশানো হলো। আমরা সে ভেজালযুক্ত দুধ কিনলাম। খাবার উদ্দেশ্যে সেটিকে আগুনে জ্বাল দিয়ে ফুটিয়ে নিলাম। ফুটন্ত দুধ বিষাক্ত হলো নাকি ব্যাকটেরিয়া বা অন্য জাতীয় দূষিত পদার্থ কিছুটা হ্রাস পেলো? এসবের কিছুই আমরা জানি না। যেহেতু কিছুই জানি না কাজেই আমরা কি খেলাম এবং আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম অর্থাৎ আমাদের শিশুদেরকে কি খাওয়ালাম তাও আমাদের অজানা থেকে গেল।
শুধু দুধ নয় বাংলাদেশের প্রতিটা পণ্যেই ভেজাল।
ভেজাল ছাড়া কোনো পণ্য নেই। মাছ, মাংস এবং শাকসবজিতে ভেজাল। ভেজাল খাদ্য খেয়ে আমরা নানা ধরনের অসুখে আক্রান্ত হচ্ছি। যাচ্ছি ডাক্তারের কাছে। সে ডাক্তার খাঁটি না ভেজাল জানিনা। তিনি ডাক্তারি পড়ে ডাক্তার নাকি ডাক্তারি না পড়েই ডাক্তার? সাইনবোর্ডে যা লেখা আছে কিংবা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ডাক্তার বলে যাকে পরিচয় দিচ্ছে আমরা তার কাছেই যাচ্ছি। ধরে নিলাম তিনি পাস করা বা ভেজালমুক্ত ডাক্তার।
তিনি দিলেন নানা ধরনের টেস্ট। টেস্ট করালাম যে সকল মেশিন দিয়ে সেগুলো কি সঠিকভাবে কার্যকর আছে? হচ্ছে কি নিয়মানুযায়ী মনিটরিং? যেমন IQ, OQ, PQ (Installation Qualification, Operational and Performance Qualification), এ ছাড়াও নিয়মিত Validation, revalidation, qualifies and calibration!
এগুলো যদি সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা না হয়, তবে যে সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে এসব যন্ত্রপাতি দ্বারা সেগুলোর ফলাফল কি নির্ভুল? ভুল না নির্ভুল সাধারণ রোগী তা জানতে পারবে না কোনোদিনও।
তাছাড়া সেগুলো যারা চালাচ্ছে তারা কি তা চালানোর জন্য সত্যি উপযুক্ত? ধরে নিলাম সবগুলো প্রশ্নের উত্তর পজিটিভ এবং সঠিক রিপোর্টের ভিত্তিতে সঠিক প্রেসক্রিপশন করা হলো।
দোকানে গেলাম ঔষধ কিনতে। সে ঔষধেও ভেজাল। আবার আছে মেয়াদোত্তীর্ণ ঔষধ। আমরা কিছু না জেনে না বুঝে ঔষধ কিনলাম এবং খাওয়া শুরু করলাম।রোগ কখনো কমে, কখনো বাড়ে। নানান রোগ, নানান ঔষধ। অবস্থা জটিল থেকে জটিলতর।
এদিকে বায়ুমণ্ডল থেকে আমরা আমাদের শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে দূষিত বায়ু শরীরে ঢোকাতে বাধ্য হচ্ছি। এমনিতে ছাই, তাতে যুক্ত হলো বাতাস। এবার বোঝো ঠ্যালা।
শরীরে দরকার ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন, আমিষ, কার্বাইড যা সুস্থভাবে বাঁচার জন্য প্রয়োজন। ভেজালে তা অল্প বয়সে ভুগে মরার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শরীরের নাম মহাশয়, যা সহানো যায় তাই সয়। শরীরের হজমশক্তি এবং তার গঠনে যে সব অর্গান জড়িত সে সব অর্গান চেষ্টা করে যা শরীরের জন্য দরকার তা রাখতে, বাকিটা বর্জ্য হিসাবে বের করে দেয়। কিন্তু শরীরেরও তো একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে!
যেমন গাড়ি চালাতে ইঞ্জিনের দরকার তেলের। এখন সেই তেল যদি প্রতিনিয়ত ভেজালযুক্ত হয় তখন গাড়ির ইঞ্জিনের গঠন শক্তি লোপ পেতে থাকে। ইঞ্জিনের কর্মক্ষমতাও কমতে থাকে। শেষে দেখা যায় মেশিন নষ্ট হয়ে গেছে। মেশিন মেরামত করতে করতে এক সময় তা মেরামতের অযোগ্য হয়ে পড়ে। তখন নতুন মেশিন ক্রয় করা ছাড়া উপায় থাকে না।
গাড়ির মত ভেজাল খাবারের কারণে আমাদের শরীরে নানান রোগ জন্ম নিয়ে পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর করে তুলেছে। একই শরীরে কিডনি, হার্ট, ডায়াবেটিস ও উচ্চ বা নিম্ন রক্তচাপ---সবখানেই সমস্যা। এখন প্রয়োজন নানা ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার।
শেষে দৌড়াদৌড়ি শুরু, কোথায় যেতে হবে চিকিৎসার জন্য। ঢাকা, ইন্ডিয়া, সিঙ্গাপুর, লন্ডন! কেউ সঠিক চিকিৎসায় সুস্থ হবে, আর বাকিরা যাবে গোরস্থানে নয়তো শ্মশানে।
পাপ করবো অথচ পাপের প্রায়শ্চিত্ত করবো না তা কখনো হতে পারে না। আমাদের পাপের কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এখন এ অবস্থা থেকে কি পরিত্রাণের আদৌ কোনো উপায় নেই? হ্যাঁ আছে, উপায় আছে। আমরা পাপমুক্ত হলেই এ অবস্থা থেকে মুক্তি পাবো। এর কোনো বিকল্প নেই। বিকল্প থাকা সম্ভবও নয়।
আমরা যদি সবাই পাপ থেকে দূরে থাকি তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট আর র্যাবকে ভেজালের বিরুদ্ধে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে না। সুস্থ সুন্দর জীবনের গ্যারান্টি পেতে আসুন সুস্থ চিন্তা করি। সুস্থ শরীর গঠন করি। সুস্থ মন তৈরি করি। সুস্থ সমাজ, সুস্থ দেশ ও সুস্থ জাতি গড়ে তুলি।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড