মাহবুব নাহিদ
মাঠে ওরা ১১ জন খেলেন আর আজ ওদের দাবিও ১১টি। ১১টি দাবি জানিয়ে ধর্মঘটের ঘোষণা দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা। যেহেতু আমরা খেলোয়াড়দের খেলাই দেখে থাকি তাই সাধারণ জনগণের মতের অবস্থান খেলোয়াড়দের পক্ষেই থাকবে হয়তো।
অনেক দিন ধরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট ধুকছে। যে ক্রিকেট খেলা আমাদের স্বপ্নের একটা জায়গা হয়ে যাচ্ছিল সেই দলটাই এখন আফগানিস্তান কিংবা তরুণ শ্রীলঙ্কা দলের সাথে নাকানিচুবানি খাচ্ছে। কেন এই অবস্থা? আমরা ভালো করতে গিয়েও কেন খারাপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি? এর দায় কি শুধুই খেলোয়াড়দের?
কখনোই শুধুমাত্র খেলোয়াড়দের দায় হতে পারে না। তাদের খারাপ-ভালো পারফরম্যান্স এর কারণে তারা দলে জায়গা পায়। কিন্তু দেখা এক সিরিজে এক খেলোয়াড় পুরো বসে থাকে, পরের সিরিজ সে দলেই নেই। আবার খারাপ খেলার কারণে বাদ পড়ে কোনো ঘরোয়া লিগ বা কোথাও না খেলেই একজন দলে চলে আসে। এগুলো আসলেই ব্যবস্থাপনার অভাব।
এবার আসি তাদের দাবির বিষয় নিয়ে। সম্মান বিষয়টা আসলেই জরুরি। খেলোয়াড়দের সমিতির কার্যক্রম না থাকা আসলেই হতাশাজনক। কর্মকর্তা ও খেলোয়াড়দের সম্মানের জায়গাগুলো নির্দিষ্ট করা উচিত।
আমাদের দেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে ঘরোয়া ক্রিকেটের অবস্থা। ঘরোয়া ক্রিকেট নিয়ে তারা দারুণ দাবি তুলেছে। ঘরোয়া ক্রিকেটে পারিশ্রমিকসহ সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা বাড়ানো অতীব জরুরি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তারা যে ভালো বল দিয়ে খেলানোর দাবি জানিয়েছেন এটা আশ্চর্যের বিষয়। একটা দেশের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে কেন ভালো বল চাইতে হবে?
প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটারদের পারিশ্রমিকের বিষয়টাও হতাশাজনক। আমাদের দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা বা ক্রিকেট বোর্ডের অর্থনৈতিক অবস্থা এত খারাপ না যে এই ধরনের দৈনিক ভাতা বা ভ্রমণ ভাতা থাকা উচিত।
বিপিএল বিশেষ নিয়মে হোক কিন্তু বিদেশি খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের সাথে দেশি খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের একটা তারতম্য অবশ্যই করা উচিত। চুক্তিবদ্ধ খেলোয়াড়দের সংখ্যা বাড়ানো, ঘরোয়া ক্রিকেটের ক্যালেন্ডার, খেলা বাড়ানো, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগে খেলতে দেওয়ার সুযোগ দেয়া সব দাবিই যৌক্তিক। গ্রাউন্ডসম্যানদের বেতন বাড়ানোর দাবিটাও ভালো ছিল।
এখন বিষয় হচ্ছে, তাদের দাবিতে নারী ক্রিকেটের কথা কেন আসলো না সেটা আশ্চর্যজনক। তারা তাদের সাথে কথা বলতে পারেনি নাকি, কিন্তু এই পর্যায়ে আসার আগে অবশ্যই নারীদের সাথে যোগাযোগ করার দরকার ছিল। কারণ নারীরা আরো বেশি বৈষম্যের শিকার।
বয়সভিত্তিক ক্রিকেট বা স্কুল-কলেজ ক্রিকেট নিয়ে দাবিতে কোনো পয়েন্ট থাকলে ভালো হতো। দেশি কোচ নিয়ে কথা এসেছে, তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই মানসম্মত কোচ নিয়োগ দিতে হবে।
আম্পায়ারিং একটা ভালো বিষয়, যা তাদের দাবিতে উঠে এসেছে। আম্পায়ারিং ও কোচিংয়ের উন্নতি করার জন্য বিশেষভাবে কাজ করা উচিত। বোর্ডের দায়িত্বে ক্রিকেট খেলার সাথে থাকা লোকজন আসবে এমন একটা বিষয় থাকা দরকার ছিল।
নিজেদের ভুলগুলো নিয়েও তাদের কাজ করতে হবে। খেলার মাঠে ও মাঠের বাইরে তাদের কার্যক্রম নিয়ে যেন প্রশ্ন না ওঠে সেই ব্যাপারে তারা মনযোগী হবে এমন আশা পুরো জাতির। ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ধর্মঘটে যাওয়ার আগে তারা কথা বলতে পারতেন।
এই কথা যেমন সঠিক তেমনি, ২০১৩ সালে এই ধরনের দাবি দাওয়া পেশ করা হয়েছিল। কিন্তু তা পালে হাওয়া পায়নি। ধর্মঘট করেছিলেন বাশার-আকরাম খানরাও। তাদের ধর্মঘট সফল হয়েছিল।
এখন কথা হচ্ছে, ভারত সফরের আগে সরাসরি ধর্মঘট করাও কতটা যুক্তিযুক্ত তা ভেবে দেখা উচিত ছিল। সিরিজে কোনো সমস্যা হলে তার দায় খেলোয়াড়দের ওপরেই পরবে শেষে।
তবে সকলের আশা থাকবে যে ক্রিকেটারদের যৌক্তিক দাবিগুলো পূরণ হোক, তারা মাঠে ফিরে আসুক। ছিনিয়ে আনুক বিজয় পতাকা।
লেখক : মাহবুব নাহিদ
বি. দ্র। উপরের মতামতের দায় সম্পূর্ণ লেখকের ওপর বর্তায়, এই লেখা লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব মতামত বিধায় লেখাটির কোনো দায়-দায়িত্ব দৈনিক অধিকার বহন করবে না।
ওডি/এসএস
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড