• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৮ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ছাত্র রাজনীতির আদ্যোপান্ত

  মাহবুব নাহিদ

০৫ অক্টোবর ২০১৯, ২০:৪৯
ছাত্র রাজনীতি
ছবি : সংগৃহীত

ছাত্র রাজনীতি খুবই খারাপ চোখে দেখছে আমাদের দেশের জনগণ। আমরা ছাত্র রাজনীতি বলতে হয়তো খারাপ কিছুকেই জানি। কিন্তু ছাত্র রাজনীতি যে একটা জৌলুশের সময় পার করেছে তা আমাদের অনেকের অজানা। শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, সরকারি কর্মকর্তা সবাই যদি রাজনীতি করতে পারে তবে ছাত্ররা করলে কেনো পাপ হবে? বরং ছাত্র রাজনীতি রাজনীতির যে সুউচ্চ ভিত গড়ে তুলতে পারে তা অন্যভাবে সম্ভব নয়। পৃথিবীজুড়ে ছাত্র রাজনীতি রয়েছে, রয়েছে আমাদের দেশেও। সারা পৃথিবীতে ছাত্র রাজনীতির গৌরবময় কিছু সংগ্রামের ঐতিহ্য রয়েছে,আমরা তার ব্যতিক্রম নই।

১৯৪৮ সালে জার্মানি অষ্ট্রিয়ার যে বিপ্লব সংগঠিত হয় তার মূল চালিকাশক্তি ছিলো ছাত্ররা। "জার" আমলে ছাত্ররাই সংগ্রামী আন্দোলনের সূচনা ঘটায়। ১৯৫৫ সালে আর্জেন্টিনা, ১৯৫৮ সালে ভেনিজুয়েলায়, ১৯৬০ সালে কোরিয়ায়, ১৯৬৪ সালে দক্ষিণ ভিয়েতনাম ও বলিভিয়ায় ছাত্র সমাজের সংগ্রামী ভূমিকার মধুমাখা স্মৃতিগুলো এখনো সকলের হৃদয়ে দোলা দেয়।

আমরা বাংলাদেশ? আমাদের জন্মের সাথে মিশে আছে ছাত্র রাজনীতির ইতিহাস। ১৯৪৮ সালে ভাষা আন্দোলনের সূত্রপাতের সাথেই জড়িয়ে ছিলো ছাত্ররা। ১৯৫২ সালে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে ভাষার জন্য লড়াই করে জীবন দিয়ে মাতৃভাষা অর্জনের যে জয়যাত্রা তার অগ্রজে ছাত্ররাই ছিলো। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা দাবীর সাথে সমর্থন জানায় ছাত্রসমাজ। ১৯৬৯ সালে গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও বঙ্গবন্ধুর মুক্তিদানে বাধ্য করার পিছনের কারিগর ছিলো সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সম্মুখ যুদ্ধ সরব অংশগ্রহণ ছিলো ছাত্রসমাজের। পরবর্তীতে ৯০ এর স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনের কারিগর ছিলো ছাত্ররাই। হয়তোবা কোনো কোনো সংগঠন এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছে। কিন্তু ছাত্রসমাজের অংশগ্রহণ ছাড়া এসকল অর্জন আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যেতো।

এখন কথা হচ্ছে স্বৈর শাসকের সময়ও যেই ছাত্ররা সংগবদ্ধ হয়ে রাস্তায় নামতে পেরেছে সেই ছাত্রদের এখন নীতিগত কোনো কথা বলতে দেখা যায় না। দেশের জন্য রাস্তায় নামতে দেখা যায় নাম ছাত্রনেতারা সাধারণ ছাত্রদের অধিকার আদায়ের কথা বলে না।

কথায় বলে "ছাত্রনং অধ্যয়ননং তপঃ" কিন্তু শিক্ষা অর্জনের সনয়ই বিভিন্ন অনিয়মের মুখে পড়তে হয় ছাত্রদের। নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য কখনো কখনো নেমে আসতে হয় রাজপথে। রাজপথে দাবানল হয়ে জ্বলতে হয়, অগ্নিশিখা হয়ে দাউ দাউ করে জ্বালিয়ে দিতে হয়ে যত অনিয়ম, উচ্ছৃংখল। যুগে যুগে বহু লড়াকু সৈনিক এসেছে যারা ছাত্র বয়সেই নিজেদের জাত চিনিয়েছে। অধিকার কখনো কখনো এমনিতেই পাওয়া যায় না। অধিকার কেড়ে নিতে হয়, লড়ে নিতে হয়। পৃথিবীর উন্নত দেশগুলোতেও ছাত্র রাজনীতি রয়েছে। কিন্তু বেশিরভাগ দেশেই দেখা যায় ছাত্র সংগঠন গুলো নিজেদের জায়গায় নিজেরা স্বাধীন। কিন্তু আমাদের দেশে ছাত্র সংগঠনগুলো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে না। মূল সংগঠনের বেড়াজাল থেকে বেড়িয়ে আসতে পারে না ছাত্র সংগঠন।

আমরা আমাদের ছাত্র রাজনীতির একটা খারাপ সময় পার করেছি। যখন আমরা অস্ত্র ছেড়ে কলম ধরোর বদলে শুনেছি কলম ছেড়ে অস্ত্র ধরো। আমাদের দেশে বর্তমানে গনতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্যেও কোনো ছাত্র সংগঠন ই স্বাধীন নয়।

ছাত্র সংগঠনগুলোর অবক্ষয় একদিনে হয়নি। দিনে দিনে তিলে তিলে খারাপ হতে হতে এখন একদম মুমূর্ষু অবস্থায় রয়েছে আমাদের ছাত্র রাজনীতি। শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, নিয়োগ বানিজ্য, হলের সিট বানিজ্য, ধর্ষণ এই সমস্ত মানবতা গর্হিত কাজের সাথে জড়িত থাকতে দেখা যায় ছাত্রদের। হলের ভাড়া কমানোর জন্য এখন আর আন্দোলন দেখা যায় না। মিল চার্জ কমানোর জন্যও কাউকে কথা বলতে দেখা যায়। ছাত্রনেতারা এখন টাকার বানাতে ব্যস্ত। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষও চায় না ছাত্ররা এসব করুক। তারাও বিভিন্নভাবে ছাত্রদের দমিয়ে রাখে। সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্র সংসদ না থাকা। ছাত্র সংসদ হয়ে ওঠে ছাত্রদের মুক্তির দুয়ার। কিন্তু ছাত্র সংসদের নেতাদেরও হতে হবে ছাত্রবান্ধব।

একটা সিস্টেম খারাপ হলে তো সেটা বন্ধ করে দিলেই হবে না। অনেকেই ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষে মত দেয়। তাহলে তো পুরো রাজনৈতিক ব্যবস্থাই বন্ধ করে দিতে হবে কারন এখন রাজনীতি নীতির রাজা নেই, রাজার নীতি হয়ে গেছে।

ছাত্র রাজনীতির সুদিন ফেরাতে হলে অবশ্যই প্রয়োজন আদর্শিক উন্নতি সাধন। ব্যক্তিগত উন্নয়নের মাধ্যমে সামষ্টিক উন্নয়নের দিকে আগাতে হবে। একজন ছাত্র আরেকজন ছাত্রের মাথা ফাটায় এই দৃশ্য দেখতে যেনো না হয়। ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণ ছাত্ররাই করবে। অশুভ শক্তির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হওয়া যাবে না।

যখন একজন ক্লাসের ব্যাকবেঞ্চার না হয়ে ফার্স্ট বয়ই ছাত্রনেতা হবে তখন অন্যরাও রাজনীতি করতে চাইবে। মানুষ বলবে যে ছাত্র রাজনীতি পাপ নয়। কিন্তু একজন ছাত্রনেতা যদি হয় মাদকের ডিলার তবে আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ ঘোর অন্ধকার।

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড