• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

দ্যা গ্রেট গ্রেটা থুনবার্গ 

  মাহবুব নাহিদ

০২ অক্টোবর ২০১৯, ২০:৩২
গ্রেটা থুনবার্গ
গত বছর সুইডেনে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে গ্রেটা থুনবার্গ প্রতিবাদ শুরু করে (ছবি: টুইটার)

বয়স এখন তার হয়তো ছেলেমানুষি করার। খেলাধুলা নিয়ে মাতামাতি করা, কিংবা হৈহল্লা করে ঘুরে বেড়ানোর সময় তার । কিন্তু এসব কিছুই না করে মাত্র ১৬ বছর বয়সে গ্রেটা থুনবার্গ জিতে নিলেন বিকল্প নোবেল পুরষ্কার। বুধবার বিকল্প নোবেল খ্যাত "রাইট লাইভলিহুড এওয়ার্ড-২০১৯" জেতার ঘোষণা দিলেন কর্তৃপক্ষ। তার সেই পুরষ্কার পাওয়ার কারণও অসাধারণ।

জলবায়ু পরিবর্তনে পুরো বিশ্বের চোখে আঙুল দিয়েছেন গ্রেটা থুনবার্গ। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন সবাই। কিন্তু এর যথাযথ প্রতিকার কেউ করছেন না। সবাই মুখে বড় বড় বুলি আওড়ানোর তাড়নায় ব্যস্ত। কিন্তু শর্ষের মধ্যেই ভূত ঢুকে বসে আছে। যাদের হাতে বড় বড় দায়িত্ব তারাই এ ব্যাপারে উদাসীন।

গ্রেটা থুনবার্গ জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্ব রাজনীতিবিদদের উদ্যোগ নিতে স্কুল শিক্ষার্থীদের এক আন্দোলন ডাক দেন। ২০ সেপ্টেম্বর নিজ দেশের পার্লামেন্টের সামনে অবস্থান নেন এই সুইডিশ কিশোরী। তার ডাকে সাড়া দিয়ে ১৫০ দেশে ৪ মিলিয়ন মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। থুনবার্গের কণ্ঠে আগুন ঝড়ে ২৮ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে।

নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অংশ নেন বিশ্বনেতারা, ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ এবং পরিবেশবাদীরা। থুনবার্গ জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ব্যর্থ বলে উল্লেখ করেন বিশ্বনেতাদের। জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বড় উদাহরণ হচ্ছে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে জানা যায় কার্বন ডাই অক্সাইড সহ অন্যান্য গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন।

বিশ্বে সবচেয়ে বেশি কার্বন ডাই-অক্সাইড নির্গমন করে চীন ও আমেরিকা। বিগত কয়েক বছরের মধ্যেই বিশ্বের গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২-৩ ডিগ্রী। ধারণা করা হয় ২০৩০ সাল নাগাদ তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে ৩-৪%। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের বরফ গলতে শুরু করেছে উদ্বেগজনক হারে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মানুষের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি দেখা যায়। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে মারাও যাচ্ছে বহু মানুষ। চীন ও আমেরিকা বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী রাষ্ট্র হলেও তাদের ভূমিকা আসলেই কষ্টদায়ক।

বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে জানা যায়, পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে সংঘটিত দাবালেনের কারণও বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি। সম্প্রতি পৃথিবীর ফুসফুস খ্যাত আমাজন জঙ্গলে দাবানল হওয়ার ঘটনাকে অনেকেই দায়ী করছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জায়ার বালসানেরোকে। বার্গার অর্থনীতি এর একটি বিশেষ কারণ। গো মাংস ব্রাজিলের অন্যতম একটি ব্যবসায়ীক পণ্য। এই মাংস দিয়ে তৈরি হয় বার্গার। গরু চারণ ভূমি করার জন্য আর গরু পালনের রেঞ্চ তৈরির জন্য কাটা হয় আমাজনের গাছ। এর পিছনে জায়ারের রয়েছে বিশেষ ভূমিকা। এজন্য এই বন নিধনের ঘটনাকে বলা হয় জায়ার'স ডিফরেস্টেশন।

এই সমস্ত ঘটনা বিশ্লেষণ করলে ভালোভাবেই বোঝা যাচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনে বিশ্বনেতাদের উদ্বেগ তো নেই বরং তারাই দায়ী। টুনবার্গ দাবী করেন, নেতারা নিজেরা কিছুই করতে পারেন না কিন্তু শুধু শুধু তরুণদের ডেকে আনেন সকল কাজে। তরুণদের সকল ভালো কাজেই আগ্রহ থাকে কিন্তু বিশ্বনেতারা তরুণদের অপব্যবহার করে বলেই টুনবার্গের দাবি।

বিশ্বনেতাদের দ্বায়ী করার পিছনে আরও অনেক কারণ বর্তমান। বিশ্বায়নের কারণে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলছে সবাই। যুদ্ধ আর লড়াইয়ের খেলায় মেতে উঠতে দেশে দেশে চলছে পারমানবিক অস্ত্র তৈরির যজ্ঞ। পারমানবিক চুল্লী থেকে নির্গত বর্জ্য থেকে পরিবেশ হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষাসহ নানান ধরনের যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার পরিবেশকে করে তুলছে বিপন্ন। তবুও সকলের মুখে বিশুদ্ধতার বাণী। সম্মেলনে আসলে সবাই দুধে ধোয়া তুলসীপাতা হয়ে যায়। মাইক হাতে পেলে লম্বা বক্তব্য ঝাড়তে ভুল করে না। কিন্তু এদের সকলের মুখে মধু অন্তরে বিষ তা বুঝতে ভুল করেনি কিশোরী থুনবার্গ। ছোট মেয়েটি নিজের সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছে যার জন্য সে পুরষ্কার পেয়েছে কিন্তু তার এই অবদান শুধুই পুরষ্কারের ফ্রেমে বাধা যাবে না। পুরষ্কার পাওয়ার জন্য সবাই তাকে সাধুবাদ জানাবে। তথাকথিত বিশ্বনেতারাও হয়তো শুভেচ্ছা জানাবে, বাহবা দিবে কিন্তু থুনবার্গের চাওয়া কেউ পূরণ করতে পারবে না। কারণ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের যুদ্ধে তারা কেউ নামছে না। কারণ শুভেচ্ছা জানানো সহজ কিন্তু নিরাপদ আবাসস্থল গড়ে তোলা এতোটা সহজ নয়।

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড