রহমান মৃধা
বাংলাদেশে বসন্ত আমাদের কাছে মনে হয় বেশি সুন্দর। শরৎ কি বসন্তের মত করে চোখে পড়ে? তবে বাংলাদেশের বাইরে যে প্রকৃতি কত বিস্তৃত এবং বিশেষ করে শরৎ, সে সম্পর্কে আমাদের জ্ঞানের মাত্রা আগে কতটা ছিল তা বলতে পারব না। গল্প-উপন্যাসে কতটা পড়েছি বা বুঝেছি তা আমার ঠিক মনেও নেই। বলা হয় বয়স বাড়লে বা যৌবনের আবির্ভাব হলে মানুষ প্রকৃতির প্রেমে পড়ে।
প্রেমে পড়েছি বলব না তবে প্রকৃতির অনেক না দেখা সৌন্দর্য আমি দেখেছি সুইডেনে। এ দৃশ্য যে কত বিশাল, তা এ দেশে না আসলে হয়তো দেখা হতো না। গাছের পাতার রং যে কত বাহারী হতে পারে, তা না দেখলে বিশ্বাসই করা কঠিন। প্রকৃতির ছাপ আমি শুধু হাঁটতে পথে নিজের চোখে দেখি না, দেখি এখানের প্রতিটি মানুষের চোখে। প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এদের মনেও আলোড়ন ঘটে। তবে সুইডেনের প্রকৃতিতে বারো মাসই নতুন কিছু না কিছু ঘটে।
গ্রীষ্মের আমেজ, বসন্তের বাহার মানুষের দেহ মনকে ভরিয়ে রাখে শত রকমের অজানা ফুলের বাহারে। রমনীরা যেন রঙিন হয়ে ওঠে এক একটা ফুলের মতো। সূর্যের একটু আলো পেতে এবং শরীরের ফ্যাকাশে সাদা রং বাদামি করতে সব সৈকতে বসে রৌদ্রস্নান করে। লেক থেকে শুরু করে সব সমুদ্রের পাড়ে রমণীদের মেলা বসে। ভালোবাসার ছোঁয়া নিয়ে তারা যেন বসে আছে পথ চেয়ে কারো জন্য। তারপর হঠাৎ করেই যেন প্রকৃতি বদলাতে শুরু করে। অক্টোবর মাস আসতে না আসতেই শুরু হয় আকাশে-বাতাসে পরিবর্তন। বেশির ভাগ সময় আকাশ মেঘে ঢাকা, বিরহী রমণীর করুণ মুখ। হঠাৎ বৃষ্টি আসে ঠান্ডা ঝাপটা নিয়ে। সে বৃষ্টি ভালোবাসার কথা বলে না।
এই ভালোবাসার জায়গাটা দখল করতে শুরু করে তীব্র শীতের তুষার। কিন্তু উষ্ণতার পাশে হঠাৎ করে আসা শীতল হাওয়া প্রকৃতির মতোই যেন বিধ্বস্ত করে মানুষের মন। ঝলমলে নগরীও যেন কেমন বিষণ্ণ হয়ে ওঠে। আর এটি আমি বিগত প্রায় চল্লিশ বছর ধরেই লক্ষ্য করছি হ্যালোইনের সঙ্গে সঙ্গে পুরো নগরী ঝোড়ো বাতাসে ভুতুড়ে হয়ে ওঠে। রাতের অন্ধকারে পথ চলতে কেমন গা ছম ছম করে।
জীবন ফুল শয্যা নয় এখন বুঝি তা হাঁড়ে হাঁড়ে। অল্প বয়সী থেকে বয়স্ক কর্মজীবী মানুষের জীবন এমন কাছে থেকে দেখলে বোঝা যায় জীবন কতটা কষ্টের! আবহাওয়া যাই থাক, কাজ করতে হয় সবাইকে। প্রচণ্ড শীত এক সময় সহ্য হয়ে, স্বাভাবিক হয়ে ওঠে, কিন্তু মৌসুমের এ বদল হতে একটু সময় লাগে। ব্যস্ত নগরীর মানুষ কষ্ট উপেক্ষা করে প্রকৃতির মতোই চলছে নিজের ভাগ্য বদলাতে। সব আছে তবু কি যেন নেই মনে হয়।
চোখের সামনে সুন্দর সাজানো গাছগুলোর পাতা ফলের মতোই যেন পেকে গেল। কখনো লাল, কখনো বেগুনি, কখনো তীব্র হলুদ, তারপর উত্তাল বাতাসে ঝিরঝির করে পাতা গুলো পড়তে শুরু করছে। একটু দাঁড়ালেই দেখা যাচ্ছে বৃষ্টির মতো ঝরছে। প্রতিটা গাছে পাতাও প্রচুর। সব পাতা যখন পড়ে যাবে দেখবো চারিরাশে শুধু পাতাবীহিন গাছ, নিদারুণভাবে গাছগুলো পাতানিঃস্ব হয়ে যাবে। মনে হবে প্রেম ছাড়া জীবন আর পাতানিঃস্ব গাছ। প্রকৃতির পরিবর্তনের সঙ্গে ক্ষণিক বিরহ লেগে থাকে মানুষের চোখে মুখেও। বিবর্ণ প্রকৃতির সঙ্গে সঙ্গে বিবর্ণ হতে থাকে মানুষের মন। চলতে থাকবে প্রস্তুতি দীর্ঘ বিরহ, দীর্ঘ শীতের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার এক সময়। তখন আর হাল্কা কাপড় থাকবে না কারো গায়ে। শরীরে কাপড়ের পরিপূর্ণতায় ভরে যাবে।
যাই হোক না কেন শরতের এই প্রকৃতির বাহারে চিত্রশিল্পীরা আছে মেতে আঁকাঝোকার মাঝে। আমি প্রতিদিন একবার হলেও ঘরের বাইরে যাচ্ছি। হাঁটছি কখনও প্রিয় সঙ্গিনীর সাথে কখনও বা একা। দেখছি এবং উপভোগ করছি মন প্রাণ হৃদয় ভরে শরতের এই বাহার।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড