মাহবুব নাহিদ
একে অন্যকে খারাপ বলার সুযোগ থাকে না যখন নিজেই একই অপরাধে দোষী হয়। বর্তমানে কাশ্মীর নিয়ে সংকট সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। আসলে কি কাশ্মীরের ঘটনা পৃথিবীর বুকে বিরল? এ ঘটনা পৃথিবীর একটি নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা। তাই যারাই মুখ ফুটে কাশ্মীর ঘটনা নিয়ে নিন্দা জানাচ্ছে তারা, অথচ একটু পিছনে তাকালেই নিজেদের দোষ ঠিকই দেখতে পাচ্ছে তারা।
তাই বিশ্ব মোড়লদের অধিকাংশর শুধুমাত্র নিন্দা জ্ঞাপনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকছে। আসলে ব্যাপারটা সেই বানরের লেজ কাটার গল্পের মতই। এখন তো লেজ সবারই কাটা। প্রত্যেকেই নিজের দেশে কিংবা নিজ দেশের পাশের কোনো দেশ কিংবা দূরের কোনো দেশে নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।
এবার আসি মূল প্রসঙ্গে, কাশ্মীর নিয়ে ভারতের সংবিধানের ধারা বাতিল একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্তকে অনেকেই কালো অধ্যায় বলে দাবী করছে। ইতিমধ্যেই অনেকে বিবৃতি দিয়েছেন, তাদের শক্ত অবস্থান জানিয়েছেন। এদের মধ্যে চীন আর বিশেষ করে পাকিস্তানের কথা না বললেই নয়।
পাকিস্তান ভারতের রাষ্ট্রদূত বরখাস্ত করেছেন, বানিজ্য বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন, রেল যোগাযোগ বন্ধ করেছেন। আসলে পাকিস্তানের স্বার্থ কোথায়? শুধুই কি মুসলিম ভ্রাতৃত্বের সম্প্রীতি? আসলে তা নয়, এখানে পাকিস্তানের বিশাল একটি স্বার্থ জড়িয়ে আছে বলেই তারা জোরেসোরে প্রতিবাদ করছে। স্বার্থ না থাকলে ঠিকই সামান্য একটা বিবৃতি দিয়েই হয়তো চুপ হতে যেতেন। আর যদি তাদের মাঝে আসলে ভালবাসা থেকেই থাকে তাহলে চীনে উইঘুর সম্প্রদায়ের উপরে হামলার ব্যাপারে তাদের তো কিছুই বলতে দেখি না।
বেলুচিস্তানের নাগরিকদের উপর পাকিস্তান সরকারের বৈষম্য তো সমাধান হচ্ছে না। তাদের মানবতা কি শুধুই কাশ্মীরের জন্যই। নাকি চীনকে এখন শক্ত মিত্র বানানোর আশায় কিছু বলছেন না? আর চীন তার নিজের উইঘুর সম্প্রদায় নিয়ে ঝামেলা তারা আসছে আবার কাশ্মীর নিয়ে বিবৃতি দিতে। আমেরিকা কিংবা রাশিয়া সকল বিষয়ই তো সমাধান করার স্বঘোষিত দায়িত্ব নিয়ে নেয়। কিন্তু সিরিয়া কিংবা ইরাক কিংবা আফগানিস্তানে হামলা নিয়ে তাদের অবস্থান কি? সেখানে তারা কি গুরুদায়িত্ব পালন করছেন। আর আমেরিকার রিকো দ্বীপ কিংবা টেক্সাসের অভিবাসী সমস্যা তারা কীভাবে সমাধান করবেন? ট্রাম্প যে অভিবাসীদের বের করে দেয়ার কথা বললেন, মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল তুলবেন এসবের সমাধানই বা কে করবে? আরেক বিশ্বমোড়ল যুক্তরাজ্য কখন যে একা রাজ্য হয়ে যায় তার নেই ঠিক।
সেখানে স্কটল্যান্ড তো কবে থেকেই স্বাধীনতা চাচ্ছে। আসলে ভাল নেই কেউই, প্রত্যেকেই তার নিজে দেশেই ঝামেলায় জড়িয়ে আছে। জার্মানি বাভারিয়ায় শরনার্থী শিবির নিয়ে ব্যাপক ঝামেলায় রয়েছে। অষ্ট্রিয়া থেকে শরনার্থী আসছে আর জার্মানি নিতে নারাজ! স্পেনে তো কাতালানরা স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েই দিলো। সম্প্রতি মিয়ানমারে দেখলাম নারকীয়ভাবে মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায় নিধনের ঘটনা।
অনেকের চোখে পানি ঝড়েছে, খুব বেশি ঝড়েছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান এর। তার স্ত্রী তো বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শিবিরে এসে কান্নায় বুক ভাসিয়ে দিলেন। কিন্তু কুর্দিস্তান নিয়ে তাদের বক্তব্য কি? কুর্দিস্তান নাকি এলাকা বড় করতে করতে কোনো এক সময় স্বাধীনতা ঘোষণা করে বসবে, এই ভয়ে মরছে তুরস্ক! বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায়ের আরেক বড় শক্তি ইরান বহু বছর ধরেই জড়িয়ে আছে খুজেস্তান নিয়ে সমস্যায়। আর সবচেয়ে দুঃখের বিষয় সৌদি আরব কর্তৃক ইয়েমেনে হামলা, খাদ্য অবরোধ বিশ্ব বিবেককে কাঁদিয়ে ছেড়েছে।
ইয়েমেনকে বলা হয় সৌদি দোযখ। তারা তো আবার লম্বা বক্তব্য দিতেই পারে। অকাজ করছে সবাই নাম শুধু কেনো নরেন্দ্র মোদীর হবে। অপরাধ অপরাধই সেটা যেই করুক। মূল বিষয় হচ্ছে ভারত বর্তমানে অর্থনৈতিক দিক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। আর ঠিক সেই মুহুর্তে তাদের নিজেদের করা একটা ভুল চালের কারনেই সবাই এখন চেপে বসেছে।
এই চাপ মোদী সরকারকে খুব বড়সড় ঝামেলায় ফেলবে বলেই বোঝা যাচ্ছে। তবে আর যাই হোক কাশ্মীর নয়, বিশ্বের কোথাও যেনো কোনো কাশ্মীর তৈরি না হয় সেই কল্পে সবাই এক হতে হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড