মাহবুব নাহিদ
আসলে প্রত্যেক ঘটনার অন্তরালে হয়তো কিছু ঘটনা লুকিয়ে থাকে। আমরা খালি চোখে সেসব ঘটনা দেখতে পাই না। কখনো কখনো কিছু ঢাকতে গিয়ে অনেক বড় কিছু পয়দা করতে হয়। বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এখন হয়তো গণতন্ত্র শব্দের ধারকাছ দিয়েও যাচ্ছে না। একের পর এক অগণতান্ত্রিক অনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে যাচ্ছে। আসলে এর পিছনে কারণটা কী? হয়তো আসল কারণ ভারতের অর্থনীতি। বিশ্বে মন্দা দেখা দেওয়ার আশঙ্কার মধ্যে ভারতের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে পাঁচ শতাংশে; যা গত ছয় বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম।
নতুন লগ্নি নেই, কৃষিতে অবস্থা ভালো না, বাজারেও পড়তি- সব মিলিয়ে অর্থনীতির এই ঝিমিয়ে পড়া নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে স্পষ্টতই চাপে ফেলেছে।
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, অভ্যন্তরীণের পাশাপাশি বৈশ্বিক পরিস্থিতি প্রবৃদ্ধি কমার ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। আর অর্থনীতিকে এ থেকে টেনে তোলার পদক্ষেপও নেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার প্রকাশিত সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, ভারতের অর্থ বছরের প্রথম তিন মাস অর্থাৎ এপ্রিল থেকে জুনে বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশ। গত অর্থ বছরের শেষ তিন মাস, জানুয়ারি থেকে মার্চে বৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৮ শতাংশ। সেই হিসেবে এই পরপর দুটি ত্রৈমাসিকে বৃদ্ধির হার ৬ শতাংশ নিচে রয়েছে। হয়তো অর্থনীতির এই নাজুক অবস্থা ঢেকে রাখতে নরেন্দ্র মোদী কখনো কাশ্মীর কখনো আসাম নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন। কাশ্মীর ইস্যুতে তারা অবশ্যই ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি বিরোধীদলীয় লোকজনকেও যেতে দিচ্ছে না কাশ্মীরে। পক্ষান্তরে, পাকিস্তান একের পর এক হুমকি দিয়েই যাচ্ছে। কাশ্মীর ইস্যুতে তাদের অবস্থান যেকোনো সময়ের চেয়ে কঠোর। সেখানে নির্বিচারে নির্যাতিত হচ্ছে নিরীহ মানুষ।
কাশ্মীরের উত্তপ্ত অবস্থার মধ্য দিয়েই সামনে এসে ধরা আসাম ইস্যু। ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য আসামের প্রকৃত নাগরিকদের নামের তালিকা (এনআরসি) শনিবার প্রকাশিত হয়েছে। ওই তালিকায় চূড়ান্তভাবে ঠাঁই হয়েছে ৩ কোটি ১১ লাখ লোকের। তালিকা থেকে বাদ পড়েছে ১৯ লাখ ৬ হাজার মানুষ।
আসামের এনআরসি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই আলোচনা হচ্ছে। এনআরসি তালিকা প্রকাশের পর ১৯ লাখ ৬ হাজার মানুষের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তায় পড়ে গেল। আসামে এন আর সি এক ঐতিহাসিক সত্যি। ১৯৮৫ সালে আসাম চুক্তিতে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি তৈরির কথা ছিল। ভিত্তিবর্ষ হিসেবে ধরা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চ। অর্থাৎ এর আগে যারা অবস্থান করছিল তাদের নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু সেই স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর যারা বাংলাদেশ থেকে গিয়েছে তারা অনিশ্চয়তার ভিতরেই পড়ে যাবে। ৪০ লাখ বাদ দেয়ার কথা থাকলেও বাদ পড়েছে ১৯ লাখ। বিজেপি অধ্যুষিত রাজ্য আসামের মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ যদিও রাজ্যবাসীকে শান্ত থাকার কথা বলেছেন। কিন্তু নিজেই আবার ২০ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী নামিয়ে দিয়েছেন।
এখন যেটা হবে তা হচ্ছে আসাম থেকে এরা বাংলাদেশে ফিরে আসবে নাহয় ওখানে বিক্ষোভ করতে গিয়ে জেলে যাবে। আসাম ১০টি বিশেষ কয়েদখানা বানানো হচ্ছে, হয়তো এই কারণেই। ডোনাল্ড ট্রাম্পের কার্যক্রমের সাথে মিল রেখেই এগিয়ে যাচ্ছেন মোদী। উগ্র হিন্দুবাদী আচরণ আর মুসলিমদের প্রতি বিদ্বেষ দেখিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
কিন্তু রাজনৈতিক বা কূটনৈতিকভাবে আমাদের সবচেয়ে ভাল বন্ধুরাষ্ট্র কেন আমাদের এই বিপদে ফেলতে চাচ্ছে? এমনিতেই ১০ লাখ রোহিঙ্গা আমাদের গলার কাঁটা হয়ে বসে আছে। এর মধ্যে আসামে থেকে যদি ফিরে আসে তবে আমাদের সমস্যার কূল থাকবে না ।তিস্তা গঙ্গার ন্যায্য হিস্যা না পেলেও কখনো তা নিয়ে একটু শংকিত হইনি। বর্ডারে নিয়মিত কিলিংয়ের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াইনি। রাজনৈতিক বা কূটনৈতিক কোনোভাবেই আমরা কাশ্মীর নিয়ে কথা বলারও সুযোগ পাইনি। আমরা বলতে বাধ্য হয়েছি যে এটা তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। কিন্তু একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে আর আমাদের সংবিধান অনুযায়ী আমাদের উচিত ছিল কিছু বলার। দুনিয়া এমনই, শক্তের ভক্ত নরমের যম। আমরা আমাদের সর্বোচ্চ শক্তি হলেও এখনই সময় আসাম ইস্যুতে একটা পদক্ষেপ নেওয়া। নাহলে আসাম থেকে বাংলাদেশিরা ফিরে আসলে দুর্ভোগের আর শেষ থাকবে না।
(দৈনিক অধিকারের অনলাইন ভার্সনের মতামত বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের একান্ত নিজস্ব। )
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড