মোঃ ওসমান গনি শুভ
বিশ্বের অন্যতম জনবহুল দেশ বাংলাদেশে সামাজিক অবক্ষয়ের মাত্রা খুবই করুণ আকার ধারণ করেছে। নারীদের সাথে সাথে ছোট শিশুরাও যৌন নিপীড়নের স্বীকার হচ্ছে যেটা আমাদের সমাজের কুৎসিত অবয়বকে চিহ্নিত করে।
নারী ও শিশুর যৌন হয়রানির পিছনে কুৎসিত মনোভাব এবং বিকার মস্তিষ্ক কাজ করছে। নারীরা শারীরিক ভাবে দুর্বল হওয়ায় তাদের ওপর স্টিম রোলার চালাচ্ছেন গৃহকর্তাদের অনেকেই। আজও নারীকে শুধু ভোগের বস্তু হিসেবে চিহ্নিত করেন ভোগবাদী পুরুষ সমাজ।
"এই পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চিরকল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী,অর্ধেক তার নর"
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম তার কবিতায় পৃথিবীতে নারীর অবদান সম্পর্কে বজ্রকণ্ঠে ঠিকই বলেছিলেন। সমাজে নারীর অবদান ছোট করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। অথচ সেই নারীকে কিছু পুরুষ নামের নপুংসকরা কর্মক্ষেত্রে যৌন নিপীড়ন এবং উত্যক্ত করে থাকে। অনেক সময় নিজের সম্ভ্রম বাঁচাতে গিয়ে অনেক নারী আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আমাদের সমাজের পরিপূর্ণ অগ্রগতি কখনোই সম্ভব না যে পর্যন্ত নারীরা কর্মে অংশগ্রহণ না করে। একটি রাষ্ট্রের যথাযথ উন্নতি সম্ভব কেবল তখনই যখন নারীর যথাযথ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে কর্মক্ষেত্রে মনোনিবেশ করানো যায়।
উন্নত বিশ্বের দেশ যেমন- জার্মান, জাপান, যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স, ইতালি, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, কুয়েত, যুক্তরাজ্য, লিবিয়া, সুদান, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি দেশসমূহ তাদের দেশে নারীদের অগ্রাধিকার যথাযথভাবে নিশ্চিত করেছে। ১৮৯৩ সালে নিউজিল্যান্ডের নারীদের সর্বপ্রথম ভোটাধিকার প্রয়োগ করার অধিকার দেওয়া হয়।
আমাদের সমাজের মেয়েদেরও নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে ব্যাপকভাবে। স্কুল-কলেজ যাওয়ার পথে তাদের উত্যক্ত করা হয়, বাজে ভাষা প্রয়োগ করা হয়, অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করা হয়, শিস দিয়ে বাজে ইশারা করা হয়, কুমতলব নিয়ে কুপ্রস্তাব দেওয়া হয় যেটি একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে কারোরই কাম্য নয়।
সমাজে সামাজিক অবক্ষয় ক্রমে ক্রমে বেড়েই চলেছে। নীতি- নৈতিকতা বিসর্জন দেওয়ার প্রতিযোগিতায় যেন সবাই মেতে উঠেছে। বাবার কাছে তার ছোট্ট কন্যাশিশুটি নিরাপদ নয়, দাদুর হিংস্র নখের থাবায় ক্ষত-বিক্ষত ছোট্ট পুতনি, শিক্ষকের কাছে ছাত্রী ধর্ষিত, ইমাম-মোয়াজ্জিনের কাছে শিশু ধর্ষিত, পিতা-মাতার অন্য লোকের সাথে পরকীয়া দেখে ফেলায় সন্তানকে হত্যা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক অবক্ষয় সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভরে উঠেছে।
একটি সুষ্ঠু সমাজ প্রতিষ্ঠিত করতে হলে সমাজে নারী ও শিশুসহ সকলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। আইনের সঠিক প্রয়োগের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। সমাজে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। নারী ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সমাজ এবং রাষ্ট্রের অন্যতম দায়িত্ব।
শিক্ষার্থী, পালি অ্যান্ড বুদ্ধিস্ট স্টাডিজ বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড