মাহবুব নাহিদ
কোনো একটা জিনিসের কাঁচামালের দাম কম কিন্তু তা থেকে উৎপাদিত পণ্যের দাম বেশি, এই ধরনের বিরল ঘটনা আমাদের দেশেই মনে হয় দেখা যায় শুধু। কয়েকদিন আগেই আমরা দেখলাম ধানের দাম অবিশ্বাস্য রকমের কম হওয়ায় কৃষকের আহাজারি। ধান কাটার শ্রমিকের দাম মেটাতে না পারবে বলে ধান পুড়িয়ে দিয়েছে কৃষক।
ধান নিয়ে প্রায়ই এই ধরনের কড়চা দেখা যায়। কিন্তু হুট করেই বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় ক্ষেত্র চামড়া শিল্প নিয়েও এই ধরনের চক্রান্ত শুরু হয়েছে। কুরবানি ঈদে চামড়ার দাম না পেয়ে মাটিতে পুঁতে রাখার দৃশ্য দেখা গেছে। অথচ বর্তমানে এক জোড়া জুতার দাম দিয়ে দুই এক বছর আগেও পুরো ঈদের কেনাকাটা হয়ে যেতো। পাট শিল্পে বাংলাদেশ একসময় অভাবনীয় ভালো করছিল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চক্রান্তে পাট শিল্প ধ্বসে পড়েছে। এবার ধ্বসে পড়তে বসেছে চামড়া শিল্প। গতবছর চামড়ার দাম নিয়ে কিছুটা অসন্তোষ দেখা যায়। কিন্তু এবছর এই বিষয়টি শুধুই আর অসন্তোষ পর্যায়ে থাকেনি। সরকার থেকে মূল্য নির্ধারণ করে দেয়া হলে প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়া ৩৫-৪০ টাকা বদলে বিক্রি হচ্ছে অবিস্মরণীয় কম দামে। পুরো একটি চামড়া বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। ছাগলের চামড়া তো বিক্রি হচ্ছেই না। এর কারণে বেশি বিপাকে পড়েছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।
এই সময়ে অল্প কিছু টাকা লাভের আশায় চামড়া কেনেন তারা। কিন্তু এবার আড়তদার রা চামড়া কিনতেই চাইছেন না। ব্যবসায়ীদের দাবী আড়তদার রা সিন্ডিকেট করে দাম বাড়িয়েছে। আড়তদারদের দাবী ট্যানারি মালিকদের কাছ থেকে বকেয়া টাকা না পাওয়ায় তারা বেশি দামে কিনতে পারছেন না। ট্যানারি মালিকরা দোষ দিচ্ছেন সিন্ডিকেটের। আসলে দোষটা কাদের? মরছে তো সাধারণ মানুষেরা।
বিশেষ করে কুরবানি ঈদে পশুর চামড়া বিক্রি বিভিন্ন মাদ্রাসার একটি বাড়তি আয়ের উৎস। এ বছর এই উৎস একদম ধূলিসাৎ হয়ে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন চামড়া সংরক্ষণ করে রাখতে। এদিকে সরকার ঘোষণা দিয়েছেন কাঁচা চামড়া রপ্তানি করার। অর্থাৎ দেশের চামড়া খাতই একদম তছনছ হয়ে যাবে। অথচ চামড়া খাত নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। ২০২১ সাল নাগাদ চামড়া শিল্পে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৫০০ কোটি ডলার নির্ধারণ করা হয়েছিলো। ২০১৭ সালে চামড়াকে বর্ষপন্য হিসেবে ঘোষণা করা হয়। তবে এই ভেঙে পড়ার দায়ভার কে নিবে? ট্যানারি মালিকদের উপর দোষ চাপিয়ে দেয়ারও উপায় নেই। তাদের হাজারীবাগ থেকে সাভারে যে নেয়া হয়েছে সেখানে প্রায় ৫০ টি কারখানাকে জায়গাই দিতে পারেনি। ভাল প্রযুক্তি আর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা না থাকায় তারা ঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না।
পর্যাপ্ত ঋণের সুবিধাও পাচ্ছে না তারা। তারা নাকি আন্তর্জাতিক বাজারে সঠিক মূল্য পাচ্ছে না এটাও বড় একটা সমস্যা। চীন আমাদের সবচেয়ে বড় ক্রেতা, তারা আবার বিক্রি করে আমেরিকার কাছে। আমেরিকার কারসাজিতেই নাকি সমস্যা পড়তে হচ্ছে আমাদের। সবচেয়ে বড় বিষয় গতবারের কেনা ৪০-৪৫% চামড়াই এখনো অবিক্রীত রয়ে গিয়েছে তবে ব্যবসায়ীরা কিনবে কীভাবে? তাদেরও হয়তো কম দামে কিনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এবার দেখা গেছে যতটুকু চামড়া প্রয়োজন তা নিজেরাই ঘুরে ঘুরে কিনে নিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
সঠিক তথ্য না থাকায় ভুগছেন ছোট ব্যবসায়ীরা। তবে তাদের এসব ছেলে ভুলানো কথাবার্তার কোনো ভিত্তি নাই। সিন্ডিকেট করে গরীবের হক মেরে খাওয়াই তাদের উদ্দেশ্য। আমাদের দেশে এখন বড়লোক ক্রমেই বড়লোক হচ্ছে আর গরীব গরীবই থেকে যাচ্ছে। কিন্তু এর সমাধান কখনোই কাঁচা চামড়া রপ্তানি করার মাধ্যমে হবে না। এটা করলে বহু মানুষ কর্মহীন, বেকার হয়ে পড়বে। হারিয়ে যাবে আমাদের চামড়া শিল্প। তাই এর ঘাড় থেকে নিয়ে ওর ঘাড়ে দোষ চাপানো বন্ধ করে সঠিক পদক্ষেপ নিয়ে আগাতে হবে। চামড়া শিল্প ধ্বংস যাতে না হয়ে যায় সেই লক্ষ্যে সেকল্পসুদুরপ্রসারি পরিকল্পনা করতে হবে। কারণ শরবতের দাম যদি বেশি হয় তাহলে চিনির দামও বেশিই হতে হবে।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড