রহমান মৃধা
ভারতের ১৩০ কোটি মানুষের চাপ, বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের চাপ আর নিউজিল্যান্ডের ওপর মাত্র ৩৫ লাখ মানুষের চাপ! পুরো ভারতের চাপ এবং তার আশপাশ দেশের চাপ। খেলোয়াড়দের সংখ্যা সমান কিন্তু চাপের পরিমাণ বিশাল। এ ধরণের চাপাচাপির মাঝে পড়ে কোনো খেলোয়াড় পাহাড় পর্বতের মতো ভারি জিনিস মাথার উপর রেখে যখন খেলে কিভাবে জাতি প্রত্যাশা করতে পারে যে তারা তাদের সেরা খেলাটা খেলবে? খেলাধুলার জগতে প্রতিটি খেলোয়াড় সব সময়েই একা (অলওয়েজ এলোন) আবার কখনোই একা নয় (লেভার এলোন)।
বিশ্বের ১১-১২ টা দেশের মধ্যে ক্রিকেট সীমাবদ্ধ। তারপরও যে পরিমাণ চাপ সৃষ্টি করা হয় তাতে খেলোয়াডদের পারফরমেন্সের উপর প্রত্যাশিত ফল লাভ করা কঠিন ব্যপার। নিউজিল্যান্ডাররা তাদের দলের ওপর প্রত্যাশার হিমালয় পাহড় চাপিয়ে দেয়নি। জয় কিংবা পরাজয়কে তারা মেনে নিতে শিখেছে স্বাভাবিকভাবে। জিতলে অবশ্যই ভালো না জিতলে তাদের কাছে বিশাল ব্যাপার যে তারা অনেক ভালো খেলে চলেছে। আজ হেরেছে, কাল জিততে পারবে, না পারলে পরশু। এইভাবে যারা সত্যিকার খেলাধুলায় আশক্ত তারা ভাবতে শিখেছে যা বাংলাদেশ, পাকিস্তান বা ভারত শেখেনি এখনও তাই তাদের মনোভাব নেতিবাচক। পারবে না এ চিন্তাটি মাথায় আনা বা নেতিবাচক ভাবে ভাবতে শুরু করা পরাজয়ের লক্ষণ।
এই পর্যন্ত মোট ছয়টি বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে পরাজয়কে মেনে নিয়েছে নিউজিল্যান্ডাররা। এই নিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ফাইনালে উঠল তারা। আমরা সবাই তা জানি, এবারো ফাইনালে হারলে তাদের কাছে পৃথিবী শেষ হয়ে যাবে না। তারা আবার আশায় বুক বাঁধবে। ভালো খেলোয়াড় বা যে জাতি যতো বেশি খেলাধুলায় সময় এবং ত্যাগ স্বীকার করে তাদের মাইন্ড সেট বা জীবনটা খুব সরল, সহজ চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। হঠাৎ কোনো বড় অর্জনে তারা আত্মগর্বী হয়ে পড়ে না, বা ধরাকে সরা জ্ঞান করে না।
আবার অপ্রাপ্তিতে হতাশ হয় না। অন্যদিকে যদি লক্ষ্য করি ঠিক এর উল্টো দিকে আমাদের উপমহাদেশীয় দেশ এবং দলগুলোর অবস্থান। ভারত উপমহাদেশের বৃহত্তম দেশ, আশা–প্রত্যাশাও সেখানে আকাশচুম্বী। বাংলাদেশের অবস্থা ঠিক এক রকম। আশা এবং প্রত্যাশার চাপেই তাদের স্বাভাবিক খেলার পারফরমেন্স গুলিয়ে ফেলে, পরিকল্পনায় দূর্বলতা ধরা পড়ে। দেখা যায় সামর্থ্য থাকা সত্বেও ভালো খেলতে পারেনি। সবচেয়ে বড় কথা, মঞ্চ সাজিয়েও মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত সংস্করণের যুগন্ধর এক খেলোয়াড়কে তাঁর শেষ বিশ্বকাপে একটি ট্রফি তারা উপহার দিতে পারলো না। যেমন বংলাদেশ টিম পারল না বাংলাদেশের অধিনায়কে সেরকম করে একটি হ্যাপি এন্ড দিতে।
আমি টেনিস জগতের মানুষ, টেনিসের অভিজ্ঞতা থেকে এতটুকু বলতে চাই, ভারতের হার ভারতেরই, বাংলাদেশের হার বাংলাদেশের। হার জিত থাকবেই, এ নিয়ে সময় নষ্ট বা ভাবনার কিছু এখন আর নেই। দেখতে হবে পরাজিত হলেও ভালো খেলা দেখিয়ে দর্শকদের আপ্লুত করতে পেরেছে কি না বা দুর্দান্ত একটি ক্রিকেট ম্যাচ উপহার দিয়েছে কি না? যদি উত্তর হ্যাঁ হয় তবে তার জন্য দুই দলকেই ধন্যবাদ জানাতে শিখতে হবে। খেলাধুলায় উইনার টেকস ইট অল, কাজেই এবারের খেলায় ধন্যবাদ নিউজিল্যান্ডারদেরই প্রাপ্য।
লন্ডনে চলছে টেনিস উইম্বেল্ডন খেলা । বিশ্বের বড় দেশ থেকে শুরু করে ছোট দেশের পার্টিসিপেশন রয়েছে। প্রথমেই আউট হয়েছে অনেকে। আবার আশাবাদিরা তাদের পারফরমেনসে দর্শকদের এখনও হতাশ করেনি। তারপরও সব শেষে মাত্র একজনই জয়ী হবে, ‘দেয়ার উইল বি এ ওয়ান উনিয়ার’। ভয়কে জয় করা বা জয়কে জয় করা একটি চেলেঞ্জ। পরাজয়ের ভয়কে জয় করা সত্যিকার অর্থে আসল জয় যা আমাদের শিখতে হবে। এবারের ওয়ার্ডকাপ ক্রিকেট খেলার জয় পরাজয় থেকে এমনটিই হোক সবার ( lesson learned) শিক্ষনীয়।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড