• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩৫ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

তারা জ্ঞান, ভালোবাসা ও আলোর ফেরিওয়ালা

  রহমান মৃধা

১৪ মার্চ ২০২৩, ১৭:১২
তারা জ্ঞান, ভালোবাসা ও আলোর ফেরিওয়ালা
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

কোনো সমাজ ও রাষ্ট্র কতটা সভ্য বা উদার তা নির্ভর করে সেখানকার নারীদের পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় অবস্থানের ওপর। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ নারী উন্নয়নে ব্যাপক সক্রিয়। নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশে দুই নারী দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পালন করার সুযোগ পেয়েছেন। আর সে কারণে দেশের খ্যাতি দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী হয়েছে সমাদৃত।

তারপরও নির্যাতন ও বৈষম্যের শিকার নারী; তার মানে এই নয় যে, নারীর এ বিশেষ সমস্যার জন্য পুরুষ দায়ী। নারীর সব বৈষম্য, শোষণ ও নির্যাতনের মূল কারণ বিশ্বের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কাঠামো। তবে বিশ্বের পুরুষশাসিত সমাজব্যবস্থা বদল করতে পারলে, পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে পারলে এবং জীবনের সব ক্ষেত্রে নারীর জন্য পুরুষের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারলে নির্যাতন, শোষণ ও বঞ্চনার হাত থেকে মুক্তি পেতে পারে নারী। সেই সাথে সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক খবর, এই বিষয়গুলো সম্পর্কে ন্যূনতম ধারণার একজন নারীর ভেতর যে আত্মবিশ্বাস এনে দিতে পারে, সেটি তাঁর সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে কয়েক গুণ। কারণ একজন ফ্যাশনেবল নারীর চেয়ে আত্মবিশ্বাসী স্মার্ট নারীর সৌন্দর্য অনেক বেশি।

বিশ্বের সব নারী থেমে নেই, তারা সংগ্রাম করে চলছে তাঁদের মৌলিক অধিকারের জন্য।

২৮ ফেব্রুয়ারি ১৯০৯ সালে প্রথম আমেরিকার সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি নারী দিবস পালন করার ওপর কথা বলে। পরে জার্মান কমিউনিস্ট এবং নারী অধিকারকর্মী ক্লারা জোসেফিন জেটকিন ১৯১০ সালে নারী দিবস পালনে ইউরোপে আলোড়ন সৃষ্টি করে। শেষে নারী দিবসটি জাঁকজমকের সঙ্গে পালিত হয় ফেব্রুয়ারি মাসের শেষ রোববার ১৯১৩ সালে।

নারী দিবসের ওপর প্রথম জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক বৈঠক হয় ১৯৭৫ সালে মেক্সিকোতে। ১৯৭৭ সালে জাতিসংঘের সিদ্ধান্তে দিনটি পালনের জন্য মার্চের ৮ তারিখ ধার্য করা হয় ১৯৭৮ সালে। আর সেই থেকে পালিত হচ্ছে বিশ্ব নারী দিবস।

আমরা পুরুষ জাতি এবং নারী জাতি এই দুটো জাতি মিলে মানুষ জাতি। পুরুষ জাতির অঙ্গে বেশি পরিমাণ মাসেল থাকার কারণে তাদের ধারণা ছিল তারাই নারী জাতির ওপর সব ধরণের বাটপারি করবে। সেভাবেই চলে আসছে এখনও অনেক ক্ষেত্রে। কিন্তু না, নারী জাতি সময়ের সাথে পুরুষ জাতির দুর্বলতা উদঘাটন করতে থাকে এবং তাদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য তৎপর হয়ে ওঠে।

পরিবার, সমাজ এবং দেশের দায়ভার থেকে শুরু করে সব বিষয়ে গুরুদায়িত্ব পালনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে চলেছে। নারীর প্রতি পুরুষের অবিচার, অত্যাচারের সমস্ত যন্ত্রতন্ত্র ভেঙে-চুরে তছনছ করে নারী জাতি বিশ্বের অনেক দেশের সিংহাসনে উপনীত হয়েছে।

‘পৃথিবীতে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’ ইসলাম ধর্মসহ প্রায় সব ধর্মেই নারীকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। নারী হলেন মায়ের জাতি। যে মায়ের গর্ভ থেকে আমাদের জন্ম সে মায়ের জাতিকে যদি মর্যাদা না দেয়া হয় তাহলে তা কলঙ্কজনক হবে।

নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের জন্য অনেক নারী একাধিক আন্তর্জাতিক পুরস্কারও পেয়েছেন। এখন অনেক ভালোর পিছে আবার মন্দও রয়েছে। যেমন বাংলাদেশ নারী শাসিত দেশ সত্ত্বেও ধর্ষণ হচ্ছে, হচ্ছে এখনো নারীর প্রতি অত্যাচার-অবিচার। এসব বন্ধ করতে হবে। দেশে নারীশিক্ষার হার ও কাজে অংশগ্রহণ বাড়লেও নারীর নিরাপত্তা এখনো নিশ্চিত করা যায়নি। বরং নারীর প্রতি সহিংসতার ভয়াবহতা বেড়েছে।

বাংলাদেশে নারীদের জীবনে গত ৫০ বছরে অনেক পরিবর্তন এসেছে, হয়তো অনেকটাই এগিয়েছে। কিন্তু ইতিবাচক উদ্যোগের সঙ্গে সঙ্গে কিছু নেতিবাচক ফলাফলও আছে। রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে নারীরা সামনে এগিয়ে এসেছে, কিন্তু তারা কি মুক্তি ও ন্যায়বিচার পাচ্ছে?

নারী তার ধর্ম, এলাকা, সম্প্রদায় ভেদে বৈষম্যের শিকার হচ্ছে। এই বৈষম্যের প্রধান কারণই লিঙ্গ। বৈষম্য এবং সহিংসতাকে প্রতিহত করতে নারীদের কৌশলী হতে হয়েছে তাদের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হলেও নারীশ্রমিকেরা সমান পারিশ্রমিক, নিরাপদ কর্মপরিবেশ দাবি করেও পাচ্ছেন না।

শ্রমিকদের নিম্ন মজুরি আর কারখানা দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে ক্ষতিপূরণ থেকে বঞ্চিত করার ঘটনা এখনো ঘটে চলেছে। একইসাথে অন্যায়-অবিচার হচ্ছে বিধায় ভয় পেয়ে পিছপা হলে চলবে না। কারণ ওই যে কবি বলেছেন, মেঘ দেখে কেউ করিসনে ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে।

হঠাৎ যেমন কালো মেঘ ছেয়ে যায় আকাশ, নামে মুষলধারে বৃষ্টি। তার একটু পরেই আকাশ আলো করে উঠে সূর্য। বিশ্ব নারী দিবসে বাংলাদেশের সকল নারী সূর্যের মতো করে জ্বলে উঠুক জ্ঞান এবং ভালোবাসার আলো নিয়ে, যে আলো আমাদের সবাইকে ভালো মানের ও মনের মানুষ হতে সাহায্য করবে।

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড