• শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ভাষা নিয়ে কিছু আশার কারণ ও বারণ 

  তাজবীর সজীব

২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৮:০৬
তাজবীর সজীব

ভাবতেই ভালো লাগার অনুভূতি জাগে, ভাষার জন্য জীবন দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে এমন জাতি আমরা ছাড়া পৃথিবীতে আর কেউ নেই।

বাংলা ভাষা অতি শ্রুতিমধুর, পৃথিবীর বুকে অলিখিতভাবে এ-নিয়েও আছে স্বীকৃতি। পৃথিবীতে বাংলা রাষ্ট্রভাষার একটি মাত্র দেশ আছে, সেটি বাংলাদেশ।

সাহিত্যিক সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন, ভবিষ্যতে ঢাকা হবে বাংলা ভাষার রাজধানী। তিনি কী ভেবে বলেছিলেন? অনেক বিচার বিশ্লেষণ করেই তিনি কথাটি বলেছিলেন নিশ্চয়। বাংলা ভাষার রাজধানী ঢাকা বলার কারন আমরা অনুমান করে নিতে পারি এভাবে যে, ঢাকা দেশের রাজধানী এবং এ সব কিছুর কেন্দ্রবিন্দু ঢাকা এমনতর ভাবনা এবং দেশীয় চর্চা অনুসারে বাংলা ভাষার চর্চাও সঠিক রুপে ঢাকাতে হবে এটাই বিবেচ্য। ঢাকা সারা দেশ জুড়ে সঠিক বাংলা চর্চার নেতৃত্ব দেবে এ আশা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় শুধু নয় আমরাও করতে পারি। উনি কলকাতার মানুষ হওয়া সত্ত্বেও পশ্চিম বাংলা বা কলকাতাকে বাংলা ভাষার রাজধানী বলেননি। ভারত জুড়ে হিন্দি ভাষার রাজত্ব যেটি কলকাতাও এড়াতে পারেনি, এটাই বোধহয় এর প্রধান কারণ হতে পারে। পশ্চিম বাংলার মতো বাংলা ভাষা ওতটা বিপন্ন নয় বাংলাদেশে।

বাঙ্গালীর বাংলা ভাষাকে ধারণ এবং চর্চায় আশা জাগানিয়া কারণ যেমন আছে, আছে হতাশ বা বেদনাহত হওয়ার মত ব্যাপারও।

২১শে ফেব্রুয়ারি। বাঙালির শোকের দিন যেমন, তেমনি গর্বেরও দিন। ১৯৫২ সালের এই দিনে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে শহীদদের বুকের তাজা রক্ত বিসর্জনের ত্যাগের কথা চাইলেও কি ভোলা সম্ভব? আমাদের বাঙ্গালীদের মনে ও মস্তিকে অমলিন এই বিশেষ দিন।

১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে স্বীকৃতি দিলে স্বীকৃতি পায় আমাদের ভাষার প্রতি অনুভূতি, একই সাথে দিনটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয় বিশ্বব্যাপী।

প্রতি বছর একুশ এলে যে দৃশ্যগুলোর অবতাড়না হয়,

- একুশের প্রথম প্রহরে শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয়ভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন, সেথায় খালি পায়ে হাজার হাজার মানুষ সমবেত হওয়া, ভাষা শহীদদের কৃতজ্ঞচিত্তে, ফুলেল শ্রদ্ধায় স্মরণ করা, এভাবেই বাঙালির শোক ও অহঙ্কারের প্রতীক শহীদ মিনার ফুলে ফুলে ভরে ওঠে। শুধু ঢাকার শহীদ মিনার নয়, ভাষা শহীদদের স্মরণে নির্মিত সারাদেশের শহীদমিনারগুলো ভেসে যায় ফুলে ফুলে।

- সারাদেশে অর্ধনমিত রাখা হয় জাতীয় পতাকা। তারই পাশে তোলা হয় কালো পতাকা।

ভাষা শহীদদের জন্য, ভাষার জন্য এই যে আমাদের শ্রদ্ধার বিনম্র প্রকাশ, এটি কি আমরা ধারণ করি নাকি শুধু ‘করি’, করতে হয় তাই?

এমনতর প্রশ্নের অবতারণাও খুব বেদনার। কিন্তু যখন বুকে কালো ব্যাজ পরিহিত, ফুল হাতে শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসা কোন তারুণ্যকে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে জিজ্ঞেস করা হয় ভাষা শহীদদের নাম অথবা ৫২ এর ২১ এ সেদিন কি ঘটেছিল, যখন তারা বলতে পারে না। এ তো বেদনারই।

আর ঠিক তখনই এই যে শ্রদ্ধা নিবেদন, কতটুকু অনুভূতির নিবেদন সে প্রশ্ন চলে আসে।

রাজনৈতিক ব্যানার, অন্যান্য সাংগাঠনিক ব্যানার, প্রাতিষ্ঠানিক ব্যানারে হুড়োহুড়ি করে ফুল দেওয়ার রেওয়াজ দেখে মনে হয়না? এটা দেখানো? আরও খারাপ করলে বলা যায় না, ‘লোক দেখানো?’

কিন্তু এমনতো হবার কথা ছিল না।

মন মননে বাংলা ভাষা জায়গা করে নেবে এমনটিই হবার কথা ছিল। কিন্তু হয়নি।

এ দায় কার?

পরিবারের?

সমাজের?

রাষ্ট্রের?

শিক্ষা ব্যবস্থার?

এটি সমাজের সামগ্রিক চিত্র নয় ভেবে কিছুটা শান্তনা নেওয়ায় যায় কিন্তু মুদ্রার অপর পিঠে অস্বীকার করা যাবে কি, ভাষার বিকৃতি হচ্ছে না? হচ্ছে। আমরাই করছি।

পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে গৌরবময় আন্দোলনের মাধ্যমে যে ভাষাটি আমাদের ভূখণ্ডে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা লাভ করেছিল, সে ভাষার প্রত্যাশিত উৎকর্ষ সাধন হয়নি এটি রুড় বাস্তবটা।

বাঙালিরা বরাবরই উৎসব প্রিয়। শোকের এই দিনেও আমরা উৎসব আনন্দে মাতি, ক্ষতি দেখছি না, এত সাধের অর্জন, আনন্দ উৎসব হতেই পারে, কিন্তু সে উৎসবে অন্য ভাষার গান বাজলে, অন্য ভাষার গানে অশ্লীল নাচের প্রদর্শনী হলে ভাষা সত্ত্বায় আঘাত লাগে।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেকে খাপ খাওয়ে নেওয়া, উচ্চতর শিক্ষা, পেশাগত কারনে, উচ্চশিক্ষা, দেশের বাইরে পেশাগত দায়িত্ব পালনসহ নানাবিধ কারনে ইংরেজি ভাষাটি জানা এবং রপ্ত করা যথেষ্ট জরুরি কিন্তু বাংলার সঙ্গে ইংরেজি মিশিয়ে কথা বলাটা জরুরী কি?

শেষে এসে একটু আশার কথা বলি, বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যায় মঞ্জুরী কমিশন(ইউজিসি)-এর ১৪৪ তম সভায় দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘বাংলা ভাষা ও সাহিত্য’ শীর্ষক কোর্স চালু করার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শিক্ষার্থীদের মাঝে ভাষা নিয়ে চর্চা আর বাংলা সাহিত্যের প্রতি অনুরাগ তৈরিতে এ উদ্যগকে সাধুবাদ না দেওয়া কৃপণতা হবে। আমি নিজে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াচ্ছি, তাই শিক্ষার্থীদের সরাসরি প্রতিক্রিয়া এবং তাদের জন্য এই কোর্সটি কতটুকু আবেদন তৈরি করে সেটি নিজ চোখে অনুধাবন করছি।

তারুণ্য আর ভাষা নিয়ে হতাশা আছে, আশা নেই? আছে তো। শুদ্ধ ভাষা চর্চার চেষ্টা স্বরূপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গ্রুপ হয়েছে, হয়েছে ওয়েব সাইট, তারুন্যের স্বেচ্ছাসেবী প্রচেষ্টায় এপ এসেছে।

নানাবিধ সাহিত্য সংগঠন চেষ্টা করে যাচ্ছে বাংলা ভাষার শুদ্ধ চর্চার।

অমর একুশে বইমেলায় তারুণ্য ভর করে, তারা কি বই কেনে, কোন ভাষার বই কেনে? বাংলা ভাষার বই, বাংলা ভাষায় লেখা বই।

চর্চা যদি একদমই নাইবা হত অমর একুশে বই মেলাই এত বই কি করে আসত, বাংলা ভাষার বই।

চর্চা আছে, আরও বাড়াতে হবে। রক্তের বিনিময়ে অর্জিত ভাষার প্রতি বাড়াতে হবে ভালবাসা। অন্তরের অন্তস্তলে ভাষার প্রতি তীব্র ভালোবাসা ও দায়বোধ থেকে ৫২ এর ২১ এ তাজা রক্ত যে অনুভূতিতে জেগে উঠেছিল, সেই অনুভূতি ধারণ করতে হবে।

লেখক:

সহকারী অধ্যাপক, সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটি

সম্পাদক, দৈনিক অধিকার

উপদেষ্টা সম্পাদক, বিডি২৪লাইভ ডট কম

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড