• শনিবার, ২৫ মার্চ ২০২৩, ১১ চৈত্র ১৪২৯  |   ২৩ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিশ্বে চলছে মারামারি, আমরা এখন কী করি?

  রহমান মৃধা

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:১১
বিশ্বে চলছে মারামারি, আমরা এখন কী করি?
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

বিশ্বের এই জটিল এবং সূক্ষ্মভাবে পরিচালিত নোংরা রাজনীতি বুঝতে হবে আগে তারপর প্রতিক্রিয়া দেখাত হবে; সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে বর্ণবাদী ও ধর্মবিদ্বেষী উগ্র-ডানপন্থি ডেনিশ রাজনীতিবিদ রাসমুস পালুদানকে পবিত্র কোরআন পোড়ানোর অনুমোদন দেওয়ায় সুইডিশ সরকারের নিন্দা ও প্রতিবাদ চলছে বিশ্বজুড়ে।

কুখ্যাত এই চরমপন্থি ধর্ম অবমাননার নিকৃষ্ট কাজটি করার সময় পুলিশের পক্ষ থেকে পরিপূর্ণ সুরক্ষা পেয়েছে। সুইডিশ সরকার মত প্রকাশের স্বাধীনতার মৌলিক বিষয়গুলো যেভাবে প্রকাশ করা হোক না কেন প্রযোজ্য বলে ঐকমত্য প্রকাশ করেছেন। কারণ সুইডিশ আইন এই স্তরে মতামত প্রকাশ করার অনুমতি দেয়।

রাসমুস নিজে একজন আইন বিশেষজ্ঞ যার ফলে সুইডিশ সংবিধানকে এ ক্ষেত্রে কাজে লাগিয়ে একটি অমানবিক ঘটনা ঘটিয়েছে মূলত বৈষম্য সৃষ্টি করার জন্য। সুইডিশ গণমাধ্যমের জরিপে জানা গেছে কুরআন পোড়ানোর ব্যাপারে মত-দ্বিমত রয়েছে। কুরআন পোড়ানোর যে অনুমতি সুইডিশ সরকার দিয়েছে সংবিধানের দোহাই দিয়ে, নরওয়ে বা ডেনমার্ক জনগণের নিরাপত্তার দিক বিবেচনা করে সংবিধানকে সেভাবে বিবেচনা করেনি, যার ফলে রাসমুস ডেনমার্কে কোরআন পোড়ানোর অনুমতি পায়নি কিন্তু সুইডিশ সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতায় বাধা না দিয়ে বরং রাসমুসকে কুরআন পোড়ানোর অনুমতি দিয়েছে।

বেশ কিছুদিন আগে সুইডিশ টেলিভিশনের স্যাটায়ার প্রোগ্রামে তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী রেসেপ তাইয়্যেপ এরদোগানকে নিয়ে রসিকতা করা হয়েছে। তারপর স্টকহোমের সিটি হলের বাইরে এরদোগানকে পুতুল সাজিয়ে উল্টো করে ঝুলানো হয়েছে এবং তুর্কি দূতাবাসের বাইরে কোরআন পোড়ানো হয়েছে তাও চলমান ন্যাটো প্রক্রিয়ার সময়কালে যা সুইডেন এবং তুরস্কের মধ্যে একটি উত্তেজনাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করেছে।

সুইডেন ও ফিনল্যান্ড দীর্ঘদিন ধরে নিরপেক্ষতার নীতি নিয়ে চলছিল। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পর তারা ন্যাটোয় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা একসঙ্গেই এই বিষয়ে এগিয়ে চলছে। কয়েক মাস আগে তুরস্কের সঙ্গে ফিনল্যান্ড ও সুইডেনের সমঝোতাপত্র সই হয়। কিন্তু কুরআন পোড়ানোর ঘটনা পুরো পরিস্থিতি বদলে দিয়েছে।

এমন একটি চলমান অস্থিতি পরিবেশে তুরস্ক-সিরিয়ার ওপর দিয়ে যে ট্রাজেডি বয়ে চলছে তা সত্যিই মর্মান্তিক। যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে এই দুটি দেশ জানিনে কীভাবে তা থেকে সমলে উঠবে তারা। তবে বিশ্বের নানা দেশের মত বিপদে সুইডেন সব ধরনের সাহায্য নিয়ে তুরস্ক-সিরিয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে।

ঠিক একই সময় ন্যাটো জোট নানা ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র অস্ত্র দিয়ে ইউক্রেনকে শক্তিশালী করছে রাশিয়ার সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য। আমরা এক দিকে ভূমিকম্পের আঘাতে মরছি অন্য দিকে একে অপরকে মারছি। এই হলো বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি এবং পরিস্থিতি। চলছে বিশ্বে যুদ্ধ, শুনছি, দেখছি হাজারে মানুষের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থানের সঙ্কট। দেখছি ভূমিকম্পে হাজার মানুষের জীবন নাশ। পাশাপাশি চলছে বর্তমান বিশ্বে কুৎসিত রাজনীতি যা এক হই হুল্লোড় ব্যাপার এবং যাকে বলে নান্ডিভাস্টি অবস্থা।

সোশ্যাল মিডিয়া বা গণমাধ্যমগুলো জনগণের মতপ্রকাশের জন্য এক চমৎকার প্লাটফর্ম; যেখানে যার যা খুশি সে তা করতে পারছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে। যেহেতু গণমাধ্যমের একটি বড় আকারের ডিমান্ড রয়েছে সেক্ষেত্রে সবাই এর ব্যবহার করছে। এখন এটা ব্যবহার করতে গিয়ে অনেকে ভুল তথ্য সহ গুজব বা প্রোপাগান্ডা ছড়াতে দ্বিধাবোধ করছে না। কারণ ইদানীং বিশ্বের অনেকেই ডেসপারেটলি নিজেকে ভাইরাল করার জন্য বা সমাজের একটি দলের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাবার জন্য অনেক কিছুই করছে।

বাংলাদেশও কিন্তু তার মধ্যে রয়েছে। যেমন হিরো আলমকে নিয়ে যে সব নোংরা রাজনীতি চলছে তা সত্যি জাতির জন্য লজ্জার এবং হাস্যকর, যাইহোক সবকিছুর পরিবর্তন হচ্ছে সেখানে মত-দ্বিমতের ওপরও আলোচনা জোরালো হবার কথা কিন্তু বাংলাদেশের মত অনেক দেশে বাক স্বাধীনতাকে বিনাশ করা হচ্ছে-হয়েছে; যার ফলে গত বছর ইলন মাস্ক টুইটার কিনেছেন। এ খবরে গোটা বিশ্বে সাড়া পড়ে যায়।

মাস্ক বলেন, টুইটার একটি সম্ভাবনাময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। গণতন্ত্রের মূল কথা হচ্ছে বাকস্বাধীনতা। বাকস্বাধীনতা হরণ করার অর্থ গণতন্ত্রকে হত্যা করা এবং গণতন্ত্র হত্যা করার অর্থ মানবজাতির অগ্রগতির পথরুদ্ধ করে দেওয়া। টুইটার হচ্ছে এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে মানবতা ও তার ভবিষ্যৎ নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক করা হবে। বিশ্বে যে জিনিসটির বেশি অভাব সেটা হচ্ছে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা। কিন্তু সুইডেনে স্ট্রাম কুর্স নামের কট্টরপন্থি পার্টি মুসলিমদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কুরআন পুড়িয়ে দিচ্ছে।

পুলিশ জানিয়েছে, সংঘর্ষে এ পর্যন্ত প্রায় ২৬ জন পুলিশ ও ১৪ জন জনসাধারণ আহত হয়েছে। এছাড়া ২০টির বেশি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে। স্ট্রাম কুর্স পার্টির নেতা রাসমুস পালুদান কুরআন পুড়িয়ে ফেলার পর সুইডেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় শহরগুলোতে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুরআন পুড়িয়ে দেওয়া ছবি পোস্ট করে রাসমুস পালুদান ঘোষণা দিয়েছে সে আরও কোরআন পোড়াবে।

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে এক ভিডিয়োতে রাসমুস বলেছে, ইসলাম এবং মুসলিমরা হচ্ছে শত্রু। এই পৃথিবীতে যদি একজন মুসলিমও না থাকে তাহলে খুব ভালো হবে, এবং সে তার চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছাবে। জানি না কী তার সেই লক্ষ্য! ডেনমার্কে বর্ণবাদী ভাষণের কারণে ২০১৯ সালে ১৪ দিনের জেল হয় রাসমুসের। স্ট্রাম কুর্স কট্টরপন্থি দল ডেনমার্কের ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে একটি আসনেও জয় পায়নি।

বর্তমানে সে আগামী ২০২৩ সালের জুনে নির্বাচনে ফের লড়বে বলে পরিকল্পনা করছে। এতে এটাই প্রমাণিত যে রাসমুস তার নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থে এ ধরণের অশ্লীল এবং কুরুচি সম্পন্ন কাজ করছে যা সমাজে কখনো মঙ্গল বয়ে আনতে পারে না। তবে সুইডেনের পলিটিকাল পার্টিগুলো বিষয়টি নানাভাবে দেখছে বটে তবে রাষ্ট্রের সংবিধানে লিখা রয়েছে জনগণের বাকস্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের কথা, গণতন্ত্রের কথা, ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা। সুইডেন সেইভাবে কাজ করছে যা বিশ্ববাসীর কাছে হাস্যকর মনে হচ্ছে।

বাংলাদেশের সংবিধানে বলা হয়েছে যেমন রাষ্ট্রের মালিক জনগণ সত্ত্বেও রাষ্ট্র চলছে তার নিজের গতিতে। লেখা থাকা সত্ত্বেও সেটা পালন করা হচ্ছে না, কারণ জনগণের ভোটে সরকার গঠন করা হয়নি, হলে অবশ্যই জবাবদিহিতা থাকত। একই ভাবে ধর্মে পরিষ্কার বলা হয়েছে অন্যায় করা মহাপাপ, দুর্নীতি করা যাবে না, মিথ্যা কথা বলা যাবে না অথচ সবই দেধারছে করা হচ্ছে। তার মানে সংবিধান এবং ধর্মগ্রন্থ থাকা সত্ত্বেও সেগুলো মেনে কাজ করা হচ্ছে না! এটাও বিশ্ববাসীর কাছে হাস্যকর মনে হবার কথা কিন্তু হচ্ছে কি?

ইদানীং পাশ্চাত্যে বেশ লক্ষণীয় এখানকার অনেক নওমুসলিম দিব্বি আরবি ভাষা শিখে কোরআনের মূলমন্ত্র সঠিকভাবে বুঝে যে ব্যাখ্যা প্রদান করছে তার সঙ্গে অনেক কিছুর অমিল দেখা দিচ্ছে, যেমন যাকাত কেন বছরে সুধু রোজার ঈদের আগের দিন বা ইদের দিন দেওয়া হয়? গরিবেরও বছরে বারো মাস শুধু এক মাসে তাদের খরচ দিলে বাকি সময়ের কি অবস্থা!

আবার যেমন রোজা রাখার নিয়ম সূর্য উঠা থেকে সূর্য ডোবা অবধি কিন্তু পৃথিবীতে এমনও দেশ রয়েছে যেখানে মুসলমানরা বসবাস করছে। যেমন- সুইডেন, ফিনল্যান্ড, ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড, এসব দেশগুলোতে তো অনেক সময় সূর্য ডুবে না বা সূর্য দেখা যায় না, নামাজের ক্ষেত্রেও একই প্রশ্ন রয়েছে।

প্রকৃতপক্ষে কুরআন কী বলে এসব বিষয়ে সেটাই আমাদের সঠিকভাবে জানা হলো না এতশত বছর পরও! এসব বিষয় কি নিশ্চয়ই আমাদের জন্য জরুরি নয়? আমাদের অপরাধের দায়ভার আমাদেরকেই নিতে হবে যদি আমরা সঠিক নির্দেশনা না মেনে চলি। অন্যের ওপর (মৌলভীদের) চেপে দিলে চলবে না। আল্লাহর নির্দেশনা শুধু কুরআনেই সীমাবদ্ধ অতএব সময় এসেছে এসব সঠিক তথ্য আল কুরআন থেকে সরাসরি জানার। সবাইকে ইমান এবং শান্তির পথে থাকার তৌফিক আল্লাহ দান করুন।

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

(মতামত পাতায় প্রকাশিত লেখা একান্ত লেখকের মত। এর সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।)

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড