শিব্বির আহমদ রানা
ইসলাম পূর্ব যুগে নারীরা ছিল একদম অবহেলার পাত্র। নারী বলে তাদের কোনো মূল্যায়ন সে সময়ে ছিল না। সবচেয়ে বেশী নিগৃহীত, নির্যাতিত, লাঞ্ছিত ছিল নারী সমাজ। ভোগ্য পণ্যের মতো ব্যবহার করা হতো! কোন নারী কন্যা সন্তান প্রসব করলে তাকে জীবন্ত পুঁতে ফেলা হতো। ঘোড়ার লাগামে রশি বেঁধে টেনে হিঁচড়ে নির্যাতন করা হতো।
নারী সমাজের অবস্থা কী নিদারুণ ছিল আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে তা ইতিহাসই একমাত্র সাক্ষী। এ অরাজকতার অবসান ঘটিয়েছেন বিশ্ব মানবতার মুক্তির দূত নবী মুহাম্মদ (সা:)। তিনি নারীকে সর্বোচ্চ সম্মানে আসীন করেছেন। মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত ঘোষণা দিয়েছেন। আজকাল নারী সমাজ তাদের সে মূল্যায়ন হারাতে বসেছে। আবার ফিরে যাচ্ছে সে নোংরামিতে। হে নারী, আল্লাহর শপথ! সে মিথ্যুক! যে তোমাকে নরম কণ্ঠে বিগলিত করতে চায়। তুমি যাকে আধুনিকতা বলো সে তো নোংরামি, সে তো শয়তানের ফাঁদ মাত্র।
হে আমাদের মেয়েরা! আল্লাহর শপথ! কোন পুরুষ যখন কোনো যুবতী মহিলার দিকে দৃষ্টি দেয় তখন সে মহিলা কে বস্ত্রহীন অবস্থায় কল্পনা করে। এ ছাড়া সে অন্য কিছু চিন্তা করেনা। তোমাকে কোন যুবক যদি বলে, সে তোমার উত্তম চরিত্রে মুগ্ধ, তোমার আচার-ব্যবহারে আকৃষ্ট এবং সে কেবল তোমার সাথে একজন বন্ধুর মতই আচরণ করে এবং সে হিসাবেই তোমার সাথে কথা বলতে চায়; তাহলে তুমি তা বিশ্বাস করো না। আল্লাহর শপথ! সে মিথ্যুক!
পুরুষের নরম কণ্ঠকে তোমরা প্রশ্রয় দিও না, বিগলিত হয়ে যেওনা তাদের মধু মাখা কৃত্রিম আচরণে। মনে রেখো হে আমাদের মেয়েরা! তোমরা একবার সমাজের কাছে লাঞ্ছিত হলে কিংবা নষ্ট হয়ে গেলে আজীবন তোমাকে খারাপ চোখে দেখবে সমাজ। কিন্তু পুরুষ একবার নষ্ট হলে সে আবার সুপথে ফিরে আসলে সমাজ তার অতীত ভুলে যাবে, ক্ষমা করে দেবে। এটা অহরহ দেখছি। কিন্তু তোমার বেলায় তা হবে না।
তুমি আজীবন নষ্টের বোঝা মাথায় নিয়ে হতাশার সাগরে ডুবসাঁতারে নিমজ্জিত হবে। আমাদের সমাজ ব্যবস্থায় নারী নিগৃহীত হলে, নষ্ট হলে তার সুপথে ফিরে আসার বিষয়টি গুরুত্ব দেয়না। ভালভাবে দেখে না। তবে ভাবুন, তোমাকে তুমি কেমন করে গড়ে তুলবে? আধুনিকতার দোহায় দিয়ে আধুনিকতার চশমা পরে অন্ধকারে তলিয়ে যেওনা হে আমাদের মেয়েরা। জানো কী তোমরা স্বর্ণ-রৌপ্যের চেয়েও বেশী দামী। স্বর্ণ-রৌপ্যের সৌন্দর্য তো তোমাকে দিয়েই প্রকাশিত হয়।
তুমি স্বর্ণ রৌপ্যের চেয়েও দামী। তুমি হিরা-মুক্তার চোয়েও বহু মূল্যবান। কেন তুমি নিজের মূল্যটাকে মুদির দোকানে বিক্রি করবে? কোন তুমি নিজেকে নেহাত সস্তা পণ্যের মতো বেদামী করে ফেলবে? তোমার ইজ্জত, আবরুর কেন লুণ্ঠিত হবে? কেন তুমি লাঞ্ছিত হবে? কেন তুমি ইভটিজিংয়ের শিকার হবে? কেন তোমাকে যৌতুকের বলি হতে হবে? কেন তুমি এসিডে দগ্ধ হয়ে পত্রিকার শিরোনাম হবে? কেন তুমি মশা-মাছির আকৃষ্ট পণ্যের মতো হবে? কেন অযথা তুমি তোমার স্বকীয়তা হারাচ্ছো?
তোমার জন্য আজ কোথাও নিরাপত্তা নেই। যখনই নিজের ঘরটা ছেড়েছো তখনিই তুমি পদে পদে লাঞ্ছিত হয়েছো। এতো সাজুগুজু, এতো প্রদর্শন কেন সস্তার বাজারে। তোমরা যাকে স্বাধীনতা মনে করছো, যাকে আধুনিকতা ভাবছো সবই তো এদেশের, এ সমাজের সুশীলদের দেওয়া অপকৌশল মাত্র। আজকে কোথাও তোমার নিরাপত্তা নেই। তুমি সহজেই বিগলিত হইয়ো না কোন সুকণ্ঠে, হারিয়ে যেওনা কোন সু-মধুর ভাষায়। তোমাকে অনেক সচেতন হতে হবে, অনেক বিচক্ষণ হতে হবে। হিসেব করে চলতে হবে।
সমাজ থেকে দিন দিন মূল্যবোধ হারিয়ে যাচ্ছে, এসব কিছুর কারণ একটাই আর তা হল, সেক্যুলার শিক্ষার বহরকে মাথায় জায়গা দিতে গিয়ে ইসলামিক জ্ঞান, মূল্যবোধ, নৈতিকতা সব হারাতে বসেছে মানুষ। বিয়ের সময় পাত্র-পাত্রী বাছাইয়ের সময় দ্বীনদারিত্বকে (ধার্মিকতা) স্রেফ ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলে; দুনিয়াবি যোগ্যতাকে সব ভেবে ঝাঁপাচ্ছে মানুষ। আরে যেই ছেলে প্রস্রাব করে কীভাবে পবিত্র হতে হয় সেটা জানে না, সে স্ত্রীর হক্ব কী করে আদায় করবে?
যেই ছেলে সুদী ব্যাংকে চাকরি করে আল্লাহর সাথে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, সে স্ত্রীর কী নিরাপত্তা দেবে? সমাজের মা-বাবারা কি এসব বোঝে না? সুতরাং দুনিয়ার স্ট্যাটাসকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে মানুষ এভাবে শয়তানের প্রথম ফাঁদে পা দেয়। এরপর দ্বিতীয় ফাঁদ হল বিয়ের অনুষ্ঠান। জেনে রাখা উচিত, বিয়ে কোন সামাজিক অনুষ্ঠান না, এটা একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান।
কিন্তু এটাকে মুশরিকি কালচারাল ফাংশন বানিয়ে ফেলে যতরকম নষ্টামি আছে সবের যোগান দিয়ে মানুষ দিনশেষে দুয়া করে আল্লাহ্ যেন দাম্পত্য জীবন সুখী করেন। কী কপটতা, কী মূর্খতা! পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানে খুশি করা হয় শয়তানকে, আর শান্তি চাওয়া হয় আল্লাহর কাছে! হ্যাঁ, নারী সমাজ আজকে এসবকে যখন সামাজিক স্ট্যাটাস হিসেবে মেনে নিচ্ছে তখন থেকেই তারা হারাচ্ছে নারীর সে স্বর্ণ যুগকে, সে স্বকীয়তাকে।
হে নারী সাবধান হোন। সাবধানতার সফলতা আছে। সাবধানতার কোনো মার নেই। তবে কিসে সাবধান হতে হবে তোমাকে? নিশ্চয় তুমি আধুনিকতার দোহায় দিয়ে, আধুনিকতাকে ফ্যাশন মনে করে, বেহায়াপনাকে লাইফ স্টাইল মনে করে, সতীর্থকে বিসর্জন দিয়ে যখন তুমি নিজেকে মডেল দাবী করো তখনই তুমি বিপথগামী হও। নিশ্চিত বিপথগামী।
তবে তোমাকে চলতি সমাজ ব্যবস্থায় সেভাবেই চায়। তখন তোমাকে কথিত সুশীলেরা প্রগতিশীল বলে বাহবা দেবে। যা তোমার জন্য মোটেও হিতকর নয়। তোমার নিরাপত্তা বলয় হবে তোমার চরিত্র। চরিত্রকে যেদিন তুমি হেয় করেছো আধুনিকতার পোশাক পড়েছো তখনিই সে থেকেই তুমি ধর্ষিতা, তুমি লাঞ্ছিত, তুমি নিগৃহীত, তুমি নির্যাতিত!
আসুন সঠিক জীবন বিধান কুরানের হুকুমকে মেনে চলি। আধুনিকতাকে বলো- সরি আমি মুসলিম, আমি মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে বিশ্বাস করি, কবরের আযাবকে বিশ্বাস করি, বেপর্দার শাস্তিকে ভয় করি। এভাবে তুমি যেদিন আধুনিকতা কে এড়িয়ে চলবে তখন থেকেই বিবস্ত্র হয়ে, ধর্ষিত হয়ে পত্রিকার কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ার শিরোনাম হতে হবে না।
লেখক- শিব্বির আহমদ রানা, শিক্ষক-সাংবাদিক, বাঁশখালী, চট্টগ্রাম।
(মতামত পাতায় প্রকাশিত লেখা একান্ত লেখকের মত। এর সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।)
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড