• শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ৭ আশ্বিন ১৪৩০  |   ৩২ °সে
  • বেটা ভার্সন

সর্বশেষ :

sonargao

বাংলাদেশের পুরো মেডিক্যাল সেক্টরকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি!

  মো. গোলাম সারোয়ার সাইমুম

০৫ নভেম্বর ২০২২, ১৩:২৩
বাংলাদেশের পুরো মেডিক্যাল সেক্টরকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি!

আমার নাম তাসকিয়া। আমার বাবা পেশায় ভ্যানচালক। আমার জন্মের সময় বাড়িতে খুশির বন্যা বয়ে গেলেও, জন্মের সময় মাথার পেছনের অংশে টিউমার সদৃশ ছোট আকারের বস্তু দেখার পর নিমিষেই সকল আনন্দ শেষ হয়ে যায় আমার পরিবারের। আমার বাবা মায়ের টাকা ছিল না রুটিন চেকআপ এর জন্যে জার্মানি বা ইংল্যান্ড তো দূরের কথা বাংলাদেশের কোনো মেডিকেলে গিয়ে আল্ট্রাসনোগ্রফি করে গর্ভধারণকালে আমি কেমন আছি সেটা দেখার।

আমার মাথায় কি জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছিল সেটা তারা দেখতে পারেননি। আমার বাবা মায়ের এখনো টাকা নেই, আমার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য নেই। তবুও আমার বাবা-মা আমাকে নিয়ে বসে থাকেনি।

আমার চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে আমাকে নিয়ে ছোটাছুটি করেন। মাগুরা সদর হাসপাতাল থেকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গিয়েছেন বেশ কয়েকবার। দিন দিন আমার ছোট টিউমার সদৃশ বস্তুটি বড় হতে থাকে। ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকগণ উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাকে ঢাকা মেডিক্যাল, ঢাকা শিশু হাসপাতাল অথবা ঢাকা নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু ওখানে কিভাবে আমাকে নিয়ে যাবে?

তাদের কোন দিনে এনে দিনে খাওয়া, বাবা-মা তো আর্থিকভাবে কুলিয়ে উঠতে পারবে না। কারণ, সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েও প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে চরা দামে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করারও সামর্থ্যও নেই আমার বাবা-মার!

কোনো উপায় না পেয়ে আমার জন্য এলাকার শাহজাহান মিয়া আমার জন্য সুইডেন প্রবাসী জনাব মাহবুবুর রহমান মৃধা সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তিনি পরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মহা পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. নাজমুল স্যারকে আমার বিষয়টি জানান। উনি সাথে সাথেই আমার পরিবারকে সুচিকিৎসার আশ্বাস দেন। আমার এখন ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা চলছে। আমার চিকিৎসার টাকা যোগাড় করা যেমন আমার পরিবারের জন্যে একটা চ্যালেঞ্জ তেমনি আমার সুচিকিৎসা করাও চিকিৎসকদের জন্যে চ্যালেঞ্জ।

আমার রোগটা খুবই জটিল। আমি ঠিক মত শুয়ে থাকতে বা ঘুমাতে পারিনা। কারণ, মাথার নিচে যে ফুটন্ত মাংসপেশি বেড়ে চলেছে সেটাই বড় সমস্যা। আমি জানি না শেষ পর্যন্ত বাঁচবো কি-না! কিন্তু তবুও আশা করি আমার এই দেশের মেডিক্যাল সেক্টর নিশ্চয়ই আমার এই জটিল বিষয়টা নিয়ে গবেষণা করবেন, আমার চিকিৎসার দায়িত্ব যখন নিয়েছেন তখন জানবেন আমার কি হয়েছে, সেটা বিশ্লেষণ করে আমার চিকিৎসার জন্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

যদি শেষে মারাও যাই তাহলে আমার যা ঘটেছে, কেন ঘটেছে, কিভাবে ঘটেছে, কিভাবে সমাধান করা যেত বা প্রতিরোধ করা যেত সেসব কিছু গবেষণাপত্রে লিখে রাখবেন যাতে করে পরবর্তীতে এটা কাজে লাগে। পরবর্তীকালে আমার মতো কোনো এক শিশুর এসব হওয়া থেকে আটকানো যায় বা হলেও তার জন্যে যাতে চিকিৎসার ব্যবস্থা থাকে। আমার চিকিৎসা সঠিক না হলেও তাদের যেন সুচিকিৎসা হয়।

আমাদের চিকিৎসা ব্যবস্থার যাতে উন্নতি হয়, আমরা যাতে দেশেই সুচিকিৎসা পেতে পারি। রুটিন চেকআপের জন্যে যাতে আর কাউকে বিদেশে যেতে না হয়। তোমরা আমাকে না হলেও আমার রোগটি সম্পর্কে জানো এবং নতুন প্রজন্মের মেডিকেলে পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের জানতে সুযোগ করে দাও। আমি চেয়ে আছি তোমাদের অপেক্ষায়। আর দেশের মানুষ অপেক্ষা করছে সুচিকিৎসার অপেক্ষায়।

আমার রোগ একটা চ্যালেঞ্জ, আমার বিশ্বাস তোমরা পারবে আমার জন্য কিছু করতে। আমি ঢাকা মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষকে এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার জন্য অশেষ ধন্যবাদ জানাই। আর যারা আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের প্রতিও রইলো ভালোবাসা। আমার জন্যে দোয়া কর যাতে সুস্থ হয়ে উঠি।

লেখক : তাসকিয়ার পক্ষ থেকে আমি, মো. গোলাম সারোয়ার সাইমুম, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড