• মঙ্গলবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৩, ১৯ আশ্বিন ১৪৩০  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন

সর্বশেষ :

sonargao

অন্যরকম প্রেম

  রহমান মৃধা

৩০ অক্টোবর ২০২২, ১৩:৪৪
অন্যরকম প্রেম
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা ও তার সহধর্মিণী মারিয়া (ছবি : সংগৃহীত)

সে এক নতুন দেশ, তিন যুগ আগের কথা। অথচ শরতের মতো জীবনের ফেলে আশা দিনগুলো হৃদয়ে এখনো ভ্রমণ করে। আমি আবার ভালো-মন্দ সবকিছু শেয়ার করতে পছন্দ করি। বিদেশে শিক্ষা গ্রহণ করতে এসেছি, তার আর শেষ নেই। পুঁথিগত শিক্ষার বাইরেও যে চমৎকার একটি জগত আছে সেটা এখনও উপলব্ধি করি। যাইহোক হঠাৎ সেদিন (ত্রিশ বছর আগের ঘটনা) গিয়েছিলাম সাবিনার বাড়িতে। সাবিনার সংসারে স্বামী রয়েছে।

আমার পরিচয়, আমি সাবিনার বয়ফ্রেন্ড। সাবিনার স্বামীও আমার আগমনে ভীষণ খুশি। সাবিনার সুন্দর একটি সংসার। সবকিছু দেখে ভালোই তো মনে হচ্ছে? হ্যান্ডসাম স্বামী, বাড়ি, গাড়ী কিছুরই অভাব দেখছিনা। বন্ধু, বান্ধবী সবই আছে, ইচ্ছে করলে অন্য ছেলের সঙ্গে মেলামেশা করতে পারে, কিন্তু তা না করে আমার জন্য কেন এত অপেক্ষা এত প্রতীক্ষা? প্রশ্নটি এসেছিল সেদিন ক্ষণিকের তরে। পুরো বাড়ির সবাই আনন্দে আত্মহারা আমি এসেছি। সত্যি মনে হচ্ছে বন্ধু এসেছে বহুদিন পরে। সাবিনার স্বামী গেস্ট রুমে, আমি সাবিনার বেডে ঘুমাবো তার সঙ্গে।

স্বামী-স্ত্রী হিসেবে সামাজিক যেসব দায়ভার রয়েছে সবকিছুই ঠিকঠাক মতো চলছে, কোনো রকম গোলমাল বা মন খারাপের কিছুই দেখছিনা! আমিই শুধু মাঝে মধ্যে অন্যমনস্ক হয়ে পড়েছি যা জন এবং সাবিনা লক্ষ্য করেছে। জন বলেই ফেললো সাবিনার সামনে “রহমান, তোমার জন্য জানো আমরা কত দিন অপেক্ষা করে আছি? সাবিনার হৃদয় ঘিরে তুমি যে ভালোবাসার স্মৃতি সৌধ তৈরি করেছো সেই স্মৃতি সৌধে তো আর কেউ কখনও ঢুকতে পারবে না, তুমি তোমার সাবিনাকে প্রাণ ভরে অনুভব কর প্লিজ।”

সাবিনা তো এসেছিল অল্প সময়ের জন্য স্বল্প সময়ের প্রেমে। সে প্রেম তো বেশি দিন টেকেনি। আমরা দুজনে এখন ভিন্ন জগতে দুটো ভিন্ন মানুষের সঙ্গে বসবাস করছি। ভালোই তো আছি, তারপরও কেন সেই বয়ফ্রেন্ড হতে মন চায়? যাইহোক সকালে সাবিনা শহরে কী কাজে গেল, আমি জনের সঙ্গে বাড়িতে, এ কথা সে কথা বলাবলি হচ্ছে।

হঠাৎ জন প্রশ্ন করলো, “রহমান তুমিও কি সাবিনাকে আগের মতো ভালোবাসো?” আমি পারলাম না কিছু লুকোতে। মনের মধ্যে যে সত্য কথাটি লুকিয়ে ছিল হুট করে বের হয়ে গেল। বললাম, আগের মতো কীভাবে ভালোবাসবো বলো? সে তো এখন তোমার স্ত্রী, আমি তো তার বয়ফ্রেন্ড। জন উত্তরে বললো, কিন্তু সাবিনা তো শুধু তোমাকেই ভালোবাসে? সে তো জানতে পারলে ভেঙ্গে পড়বে যে তুমি তাকে সেই আগের মতো ভালোবাসো না।

আমি বললাম দেখো আমি ভাগাভাগি পছন্দ করি না, আমার প্রেম, আমার ভালোবাসা, আমার স্ত্রী সবই আমার কিন্তু এখন সে তোমার, তবে হৃদয়ের মাঝে কিছুটা জায়গা দখল করে আছে সেই প্রথম দেখার স্মৃতি এবং সে সময়ের সেই প্রীতি। জন উত্তরে বললো, আমি সত্যি চাই তুমি সাবিনার সেই অসম্পূর্ণ স্মৃতি আর প্রীতিটুকু পূর্ণ করে দাও যা আমি আজও পারিনি দিতে। আমি বললাম, তা কী করে সম্ভব? সে তো এখন তোমার। জনের মনটি মলিন হয়ে গেল, মনে হলো দিনে দুপুরে তার মাথার উপরে বজ্রপাত পড়েছে। বললাম মন খারাপ করছো কেন?

জন শুধু বললো, সম্ভব যখন না তাহলে কেন সেটা নিয়ে বছরের পর বছর ঘুরে বেড়াচ্ছো, কেন সেটা ধরে রেখেছো? হয় সেটা ধরে রাখো নাহলে ছাড়ো, আমাকে কষ্ট দিও না প্লিজ। আমাদের কথা শেষ হতেই সাবিনা ফিরে এসেছে। আজ আমার জন্মদিন সে জানে আমি কী খেতে পছন্দ করি। জন রান্না করে ভালো, সে তার স্ত্রীর বয়ফ্রেন্ডের পছন্দের খাবার রান্না করবে। সাবিনার মনে কী আনন্দ, জীবনের সব কিছু আজ তার! আমি এমন একটি সময় জীবনে দেখবো ভাবতেও পারিনি। বিয়ে হয়নি তো কী হয়েছে, আমি তো এখনও তার পরম প্রিয় বন্ধুই রয়েছি।

আমাদের ভালোবাসায় তখন যেমন ছিল না দৈহিক সম্পর্ক, গতকাল যে আমি তার বেডে ঘুমিয়েছি, তখনও ঠিক একই অবস্থা। কিন্তু জন হয়তো সেটা জানে না এটাই ছিল আমার বিশ্বাস। আমি মনে মনে জনকে কাপুরুষ ভেবেছি, মনে মনে ঘৃণা করেছি এই ভেবে সে কিভাবে পারলো তার স্ত্রীকে আমার সঙ্গে থাকতে দিতে, শালা মনে হয় সাবিনাকে ভালোবাসে না! আমার মতো ঠিকই অন্য কারো প্রেমে ডুবে আছে ইত্যাদি।

আমি যন্ত্রণার মধ্যে আছি, সাবিনা বুঝতে পেরেছে আমার মন ভালো নেই, সে একটু অভিনয় করছে। মনে হচ্ছে কিছুই হয়নি সব ঠিকঠাক আছে। আমরা সবাই একসঙ্গে ডিনার শেষ করলাম। রাতের ট্রেনে আমাকে ফিরতে হবে স্টকহোমে। বিদায় বেলায় সাবিনা এবং আমি দুজনে দুজনাকে অনেকক্ষণ জড়িয়ে ধরে ছিলাম, তার বুকের মধ্যে ধড়পড় করছিল, টের পেয়েছিলাম। প্রেমে ছিল বড় ভুল এটাই ছিল সেদিনের সেই বিচ্ছেদের কারণ। আমি ছিলাম লাজুক। কখনও সহজ করে বলতে পারিনি আমি তাকে ভালোবাসি, সাবিনা উপলব্ধি করতো সেটা কিন্তু সেও সেদিন সাহস করে বলেনি, যদি বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়, এই ভয়ে!

জন আমাকে ট্রেনে তুলে দিতে এসেছে। সাবিনা বাড়িতেই থেকে গেলো। যেতে যেতে পথে জন বলেছিল “রহমান, আমি সব জানি এবং শুনেছি সাবিনার থেকে তোমাদের কথা। আমি এও জানি তোমরা কতো কাছের মানুষ, এতটুকু বিশ্বাস আমার আছে। সাবিনার বিছানায় তোমাকে ঘুমুতে দিয়েছিলাম পরীক্ষা করার জন্য নয়, শুধুমাত্র ভালোবাসার প্রতি ভালোবাসা দেখাতে। আমি চেয়েছিলাম সাবিনা তোমার সঙ্গে যেন পুরো সময়টি কাটাতে পারে। আমিও সাবিনাকে ভালোবাসি, তুমি আমার প্রতি আস্থা রেখো, আমি তোমার প্রিয় বান্ধবীকে সারা জীবন যতনে রাখিব ধরিয়া।

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট) ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড