• বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ২০ আশ্বিন ১৪৩০  |   ২৬ °সে
  • বেটা ভার্সন

সর্বশেষ :

sonargao

অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই হবে

  রহমান মৃধা

২০ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৬:১২
অন্যায়ের প্রতিবাদ করতেই হবে
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

‘তোমার ভয় নেই মা- আমরা প্রতিবাদ করতে জানি!’ এই গানটির রচয়িতা বিখ্যাত গীতিকার গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার। তার এই গানে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ গভীরভাবে উদ্বুদ্ধ হয়েছিল, আর হৃদয় মথিত করেছিল একাত্তরের মুক্তিযোদ্ধা আর মুক্তিকামী বাঙালিদের।

শুধু তখনই নয়, ৫১ বছর ধরে একই মহিমায় কোটি সহস্র মুখে গাওয়া হচ্ছে এই গান। এই গানে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ একাকার হয়ে যায়। দেশ স্বাধীন হয় পৌঁছে যায় গানটি আমাদের প্রাত্যহিক প্রতিরোধের আঙিনায়ও।

দেশকে স্বাধীন করার পর আমাদের আসল কাজটি করার কথা ছিল তাকে সুন্দর করে সোনার বাংলায় পরিণত করা। তা করতে এখন যুদ্ধ অস্ত্র নয় প্রয়োজন কুশিক্ষাকে দূর করার অস্ত্র, জ্ঞান অর্জনের অস্ত্র আর এ অস্ত্রের নাম সুশিক্ষা।

মানুষ মীরজাফর হয়ে জন্মগ্রহণ করেনা, জন্মের পরে মীরজাফরে পরিণত হয়। পৃথিবীর পুরনো ইতিহাস তুলে ধরলে মানুষ লজ্জা পাবে, কিন্তু দানব লজ্জা পাবে না। দানব দেখতে কেমন? তারা দেখতে অবিকল মানুষের মত, তবে স্বভাব-চরিত্রে তারা মানুষের থেকে ভিন্ন।

পরিবারের প্রতিচ্ছবিই একটি দেশের ছবি। পরিবারের বড়রা ছোটদের জন্য কম-বেশি কিছু করে। আবার অনেকে তাদের নিজেদেরকে নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। বাবা-মার দায়ভার কিছুটা কমাতে বড়রাই সবসময় এগিয়ে আসে। ছোটদের জন্ম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভোগের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে এরও ব্যতিক্রম আছে।

যে পরিবারের লোকসংখ্যা বেশি সেখানে যৌথ দায়ভার অনেক, তবে কারও জন্ম শুধু দিতে আবার কারও নিতে। একই পরিবার অথচ এমনও উদাহরণ রয়েছে যেখানে কেউ শুধু পরিবারের অশান্তির সৃষ্টি এবং মান-মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করতেই ব্যস্ত। মনে হয় তাদের জন্মই শুধু সংসারে অশান্তি সৃষ্টি করা।

বাংলাদেশে হাজারও পরিবার রয়েছে যেখানে একজনই যথেষ্ট বাকি দশজনকে অশান্তিতে রাখার জন্য। দুঃখের বিষয় লজ্জা-শরমের কারণে এসব কথা খোলামেলা আলোচনা হয় না। একইসঙ্গে পরিবারের আশেপাশে রয়েছে অনেক কালপ্রিট যারা সবসময় চেষ্টা করে কিভাবে একটি সংসার নষ্ট করা যায়। অনেকে আবার বেশ আনন্দ উপভোগ করে যখন কোনো পরিবারে অশান্তি দেখা দেয়।

বাঙালির ইতিহাস যেমন আমরা দেখেছি মীরজাফর ছিল সিরাজউদ্দৌলার আপন খালাতো ভাই, তা সত্ত্বেও সে বেঈমানি করেছে সিরাজের সঙ্গে। খন্দকার মোস্তাক জাতির পিতার সঙ্গে বেঈমানি করেছে। এমন নজির অনেক পরিবারেও রয়েছে।

কি কারণ থাকতে পারে তা কি আমরা জানি বা জানতে কখনও চেষ্টা করেছি? অনেক সময় দেখা যায় কাউকে তার জীবনের পুরো দায়ভার নিয়ে তাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে অথচ সেই পরবর্তীকালে বড় বেঈমান হয়েছে।

এ ধরনের বেঈমানরা বিবেকের ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে। উপকারের বিনিময়ে এরা নিমকহারাম হয়। কারণ ভালো কিছু করার মত মনমানসিকতা এদের থাকে না। এরা নিজ স্বার্থে অন্ধ হয়ে যায়।

এরা জানে প্রতিদান কোনদিন শোধ দেয়া সম্ভব হবে না। তাই এরা গুলি খাওয়া বাঘের মত বা পাগলা কুকুরের মত হন্যে হয়ে খোঁজে, কীভাবে উপকারকারীর ছোটখাটো দোষ ত্রুটি বের করে তার নামে কুৎসা রটানো যায়।

যারা সামান্যতম লেখাপড়া করেছে তারা নিশ্চয় জানে নীচের কবিতাটি ‘শৈবাল দিঘিরে বলে উচ্চ করি শির, লিখে রেখো, এক ফোঁটা দিলেম শিশির’।

পরিবার, সমাজ বা দেশে এ ধরনের লোক আগেও ছিল এখনো রয়েছে, যারা এই এক ফোটা শিশিরের কারণে দিঘির জীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। অকৃতজ্ঞ মানুষ এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি করে থাকে সচরাচর।

বাংলাদেশের একটি দরিদ্র পরিবারকে টেনে উপরে তুলতে যে কত কষ্ট, কত ত্যাগ জড়িত তা শুধু তাঁরাই জানে যারা এই কঠিন কাজটি সম্পন্ন করেছেন। এ কাজ করতে দরকার সততা, নিষ্ঠা, দক্ষতা, হৃদ্যতা, ভালোবাসা ইত্যাদি।

অন্য দিকে তাকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করা বা টেনে নীচে নামানো খুবই সহজ কাজ। তাই ব্যর্থ এবং স্বার্থপর পরিবারের কলঙ্ক যারা তারাই এই সহজ পথটি বেছে নেয়। বলা যেতে পারে এটা এমন একটি সহজ কাজ যা তুলনা করা যেতে পারে এক কলস দুধের মধ্যে একফোঁটা গোচুনা ঢেলে দেয়ার মত। সামান্য এক ফোটা গোচুনাই যথেষ্ট পুরো দুধকে নষ্ট করতে।

আমি এর আগে লিখেছি পচা আমটাকে সরাতে হবে। কারণ একটি পচা আমই যথেষ্ট এক ঝুড়ি আমকে নষ্ট করতে। ঠিক একইভাবে একজন দুষ্ট লোকই যথেষ্ট একটি পরিবার, সমাজ এমনকি একটি দেশকে ধ্বংস করার জন্য, অর্জিত বিজয়কে নস্যাৎ করার জন্য।

কাজেই এই কঠিন এবং জটিল সময়ে আমাদের অঙ্গীকার হোক দুর্নীতিবাজ, চরিত্রহীন, কুলাঙ্গার ও অকৃতজ্ঞদের কবল থেকে পরিবার, সমাজ ও দেশকে রক্ষা করা। মানবের চেহারাবিশিষ্ট দানবকে আগাছার মত পরিষ্কার করতে হবে, কারণ সোনার বাংলা গড়তে নিজ এবং নিজ পরিবারকে পরিষ্কার করতে হবে আগে, সুশিক্ষা এবং সুপরিবেশের মধ্য দিয়ে।

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড