মাহবুব নাহিদ
নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়া একটা ইটের স্তুপের মতো। যদি নীচের একটা ইট ফেলে দেওয়া হয় তাহলে দেখা যাবে আস্তে আস্তে সবগুলো পড়ে যাবে। যদিও নীচের ইট ফেলা খুব কঠিন কিন্তু ফেলতে পারলে সব পড়ে যায়। এখন সেই ইট ফেলার মতোই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধিতে ইট ফেলার মতোই কাজটা যে করে সে ঝুঁকিতে থাকে। এখন সেই ঝুঁকি কার? যে বাড়ায় তার নাকি যাদের বাড়ে তাদের সেটা নিয়ে গবেষণা দরকার। তবে আগে ইটের স্তুপের বিষয়টা ঠিক করে নেই৷ ইটের স্তুপের মতোই কোনো একটা কিছুর দাম বাড়লে অন্য সকল কিছুর দাম বাড়তেই থাকবে। এখন সেই একটা জিনিস যদি স্তুপের নীচের ইটের মতো তাহলে তা অতি ভয়ানক। তার মানে তেল কিংবা অন্যান্য সকল জ্বালানী হচ্ছে এখানের সেই নীচের ইট যেটা পড়লেই শেষ। অর্থাৎ জ্বালানির দাম বাড়ার সাথে সাথে আস্তে আস্তে সবকিছুর দাম বাড়বে।
আমাদের এখন বড় সমস্যা হচ্ছে মানুষের উপার্জন তো বাড়ছে না, কিন্তু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে। এখন জিনিসত্রের দাম বাড়লে যেটা করতে হয় সেটা হচ্ছে আমাদের ভোগ করা কমাতে হবে। আগে দুইবেলা মাছ খেতাম, এখন এক বেলা খেতে হবে, সামনে আরো কমাতে হবে। সময় দিন যত যাবে ততই আরো খারাপ হবে হয়তো। এখন মানুষের এমন অবস্থা হয়েছে যে যার কাছে যা টাকা পয়সা আছে তা না খেয়ে বরং জমিয়ে রাখাই শ্রেয়। কিন্তু সেই টাকা আবার ব্যাংকে রাখাও বিপদের কারণ হতে পারে। কখন যে ব্যাংক থেকে পাখি হয়ে সব উড়ে যায় তার নিশ্চয়তা নেই। একটা বিষয় আবার স্পষ্ট যে আমাদের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মাথাপিছু আয় হিসাবের নিয়মটাই তো একটা বড় গলদ। দশজনের মধ্যে নয়জনের কাছে আছে দশ টাকা আর একজনের কাছে আছে নব্বই টাকা, তাহলে মাথাপিছু আয় হবে ১০ টাকা কিন্তু আসলে কি সবার পকেটে সেই টাকা আছে? মাথাপিছু হিসাব করে যে এখন লাভ নেই তা সবাই বোঝে। গরীব আরো গরীব হচ্ছে এটাই বাস্তব।
এখন আমাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে আর সেখানে সৌখিন কোনো কিছু তো অনেক পরের বিষয়। দেশের অর্থনৈতিক খাতে অবদান রাখে এমন সব সেক্টরকে বাঁচানোর জন্য প্রণোদনা হোক বা দাম বাড়িয়ে হোক সাহায্য করা হয়। পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনকে বাঁচানোর জন্য দাম বাড়ানোর অনুমতি দেওয়া হলো।
সকল সেক্টরেই দাম বাড়ানোর সুযোগ আছে কিন্তু কিছু অসহায় জগত আছে যাদের আসলে সেই সুযোগটা নেই। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বই। একাডেমিক বই বাদে বর্তমানে সৃজনশীল বই যারা প্রকাশ করে তারা খুবই অসহ্য জীবন যাপন করছে। একে তো পরপর দুইটি ফ্লপ বইমেলা গেল তাদের। এখন যেভাবে বইয়ের প্রডাকশন খরচ বেড়েছে তাতে বইয়ের দাম মাসে মাসে দ্বিগুণ করতে হবে।
কাগজ, বাঁধাই, প্লেট, কভার সবকিছুর দাম বেড়েছে। এমনকি এসব খরচ ২০২১ সালে যা ছিল তার চেয়ে এখন দ্বিগুণের বেশি হয়ে গেছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তা তিনগুণ ছুঁই ছুঁই অবস্থা। কিন্তু দাম?
একজন প্রকাশকের কাছে শুনলাম একটা বই ২০১৮ সালে যা মুদ্রিত মূল্য ছিল তা একই রয়েছে। দাম বাড়ানো সম্ভব হয়নি। দাম বাড়ানো হলে মানুষ যদি বই না কেনে? বই তো আর ভাত না যে খেতেই হবে। বই কখনোই আমাদের পেটের ক্ষুধা মিটাতে পারে না। বই হচ্ছে মনের খোরাক। যখন পেটে ভাত থাকবে না তখন বই পড়ার ইচ্ছা কোথায় পালিয়ে যাবে তার কোনো ঠিক নেই। বই ব্যবসার সাথে যারা জড়িত তারা খুব একটা ভালো অবস্থায় নেই, করোনা এমনিতেই তাদের নিঃস্ব করে দিয়ে গেছে, সামনে হয়তো আরো খারাপ সময় আসছে।
দেশের বর্তমান যা পরিস্থিতি তাতে আগামী বইমেলাও পড়ে যাবে সংকটে। বইমেলা হওয়া তো অনেক দূরের কথা বই বিক্রির অবস্থা কোথায় দাঁড়ায় তা সন্দিহান। বই পড়ে হয়তো আমাদের পেটের ক্ষুধা মেটে না কিন্তু বই বিক্রি করে প্রকাশক-পরিবেশকদের পেটের ক্ষুধা মেটে। এটাই তাদের রুটিরুজি। এই দিকটায় একটু নজর দেওয়া উচিত।
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড