• বুধবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৩, ২০ আশ্বিন ১৪৩০  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন

সর্বশেষ :

sonargao

বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি এবং কূটনৈতিকদের ভূমিকা

  রহমান মৃধা

০৭ আগস্ট ২০২২, ১৪:৫২
বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি এবং কূটনৈতিকদের ভূমিকা
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

গোটা বিশ্বের পরিস্থিতি অতীতের চেয়ে খারাপ হয়েছে বেশি। অনেক কারণ হয়তো নিহিত আছে অবনতির পেছনে? সবগুলো কারণ আলোচনা করা আমার উদ্দেশ্য নয়। নৈতিকতার অবনতির ক্ষেত্রে দেশি এবং বিদেশি কূটনীতিকদের ভূমিকা নিয়ে মূলত আলোচনা করব। দরিদ্র দেশগুলোতে বিদেশি কূটনীতিকরা সে দেশের সরকার প্রদত্ত নানারকম অনৈতিক সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে থাকেন।

তারা নানারকম দুর্নীতিতেও লিপ্ত থাকেন। সরকারও উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদের বশে রাখার চেষ্টা করেন। সরকার যখন মানবাধিকারের লঙ্ঘন' ঘটায় তখন বিদেশি কূটনীতিকরা উদাসীন থাকেন, দেখেও না দেখার ভান করেন। কূটনীতিকদের এই উদাসীনতা মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির অন্যতম প্রধান কারণ।

মানবাধিকার বিশ্বের বিশেষ কোনো দেশ বা জাতির বিষয় নয়। এটি সমগ্র মানবজাতির বিষয়। মানুষ মাত্রই সকলের কিছু অধিকার থাকে। এসব অধিকার জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত। কাজেই বিদেশি কূটনীতিকরা যখন একটি দেশে কর্মরত থাকেন তখন সে দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির উপর তীক্ষ্ণ নজর রাখা তাদের দায়িত্ব এবং এ দায়িত্ব তারা যথাযথভাবে পালন করছেন বলে তাদের নিজ নিজ দেশের সরকারকে অবহিত করেন। কিন্তু তারা বাস্তবে এ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করছেন বলে মনে হয় না।

এটি মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যেমন তারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন না করে তিন বছর বা পুরো মেয়াদ বিলাসবহুল জীবনযাপন করতেই বেশি পছন্দ করেন এবং মেয়াদ শেষে সেখান থেকে বিদায় নিয়ে নতুন জীবনের সন্ধানে অন্য কোথায়ও যোগদান করেন। পাশ্চাত্যের বেশির ভাগ কূটনীতিক দরিদ্র দেশে এসে তাদের নিজ নিজ পরিবারের নিরাপত্তা নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সরকারের পেছনে লেগে নিজেদেরকে সরকার প্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা কিংবা জীবনের ঝুঁকি তারা নিতে চান না।

অন্য দিকে যে সমস্ত দেশে গণতন্ত্র এবং জনগণের জীবনের নিরাপত্তার অভাব, সরকার দুর্নীতিগ্রস্ত, সে সকল দেশের সরকার কূটনীতিকদের সন্তুষ্ট করে, বহির্বিশ্বের চোখকে ফাঁকি দিয়ে, অব্যাহতভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে চলে। আমার এ মন্তব্যের সত্যতা যাচাই করার পক্ষে সঠিক তথ্য পাওয়া হয়তো কঠিন হবে। তবে কিছুটা সংকেত পাওয়া যেতে পারে যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের প্রধান রেনশে তিরিঙ্কের বক্তব্য আমরা পর্যালোচনা করি।

তিরিঙ্ক বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতির তীব্র সমালোচনা করেছেন। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো, তিরিঙ্ক তাঁর বক্তব্যে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনে যে বিষয়গুলো সবচেয়ে বেশি কাজ করছে, সে সব বিষয়ে আক্ষরিক অর্থে একটি শব্দও বলেননি। তিরিঙ্কের এড়িয়ে যাওয়া শব্দগুলো হলো; গুম, বিচারবহিৰ্ভূত হত্যা, যথেচ্ছ গ্রেফতার, রাষ্ট্র পরিচালিত টর্চার (নির্যাতন), বিরোধীদের উপর ভয়াবহ দমনপীড়ন, গণমাধ্যমের উপর সেন্সরশিপ, বাকস্বাধীনতা হরণ, নির্বাচনে কারচুপি ইত্যাদি।

অথচ এগুলোর প্রত্যেকটি বাংলাদেশে অত্যন্ত মারাত্মক মাত্রায় ঘটে চলেছে। রিস্কের বক্তব্যের আগে হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচের বক্তাও উপরের কথাগুলো পরিষ্কারভাবে উল্লেখ করেছেন। তিরিঙ্ক তাঁর বক্তব্যে একবারের জন্যও হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচের বক্তব্যে আলোচিত বিষয়গুলো উল্লেখ করেননি। এই দুই বক্তার কথা শুনে মনে হবে, হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ এবং ইইউ ভিন্ন দুটি দেশ নিয়ে কথা বলেছে।

তিরিঙ্ক কৌশলের আশ্রয় নেওয়ায় তাঁর বক্তব্যে প্রকৃত চিত্র উঠে আসেনি। বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি আজকের এই শোচনীয় অবস্থায় আসার আংশিক কারণ ইইউ এবং অন্যান্য উদার-গণতান্ত্রিক (লিবারেল ডেমোক্রেটিক) দেশগুলোর কূটনীতিকদের নীরবতা।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের অনেক দেশের মানবাধিকারের অবনতির জন্য তারা দায়হীন হতে পারেন না। তাঁরা নিজেদের ক্ষমতা ও প্রভাব ব্যবহার করে সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন করা পদক্ষেপগুলোকে সতর্ক করতে ব্যর্থ হয়েছেন, এটা বলা যেতে পারে। যেহেতু কূটনীতিকগণ এ কাজে ব্যর্থ তাই দরিদ্র দেশের সরকার কোনো চাপ অনুভব করেনা এবং ফলস্বরূপ ভেবে নিয়েছে, এভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘন করে গেলেও তাদের কোনো ফল ভোগ করতে হবে না।

পৃথিবীর অনেক দেশের মানুষ প্রতিবাদ করলেই বা নিজস্ব মত প্রকাশ করলেই আটক হওয়ার আতংকে ভুগছে। এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। অনেক ক্ষেত্রে কূটনীতিকদের মৌনতাকে সম্মতির গ্রিন সিগন্যাল হিসেবে নিয়ে সরকার অবাধে গুম, বিচার বহির্ভূত হত্যা, যথেচ্ছ গ্রেফতার ও অন্যান্য ভয়াবহ মানবাধিকার লঙ্ঘন চালিয়ে যাচ্ছে।

যতক্ষণ না তারা প্রকাশ্যে উদ্বেগ জানায় এবং সহযোগিতা বন্ধের হুমকি দেয়, ততোক্ষণ পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতি হবে না এবং সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন থেকে নিজেদের বিরতও রাখবে না। লোকচক্ষুর আড়ালে কূটনীতিকরা গোপনে নিজেদের উদ্বেগ সরকারকে জানালেও এর কোনো মানে হয় না। প্রকাশ্যে বারবার প্রতিবাদ না করলে পরিস্থিতি মোটেও বদলাবে না। এবং সেক্ষেত্রে মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতির দায় তাদের ওপর অনেকখানি বর্তাবে।

এ ছিল আমার রিফ্লেকশন ঘটনার প্রেক্ষিতে। অন্যদিকে মনে রাখতে হবে কূটনীতিকরা সব সময়ই তার নিজের দেশের সুযোগ সুবিধাগুলোই আগে দেখে এবং তার জন্যই তাদেরকে চড়া বেতন দিয়ে তার দেশের সরকার বিশ্বের অনেক দেশে বসিয়ে রেখেছে। আমরা দরিদ্র দেশ বলে সারাক্ষণ স্যার বা হুজুর বলে চলতে পারি না।

আমাদের স্বার্থ উদ্ধারে তাদেরকে অবশ্যই সঠিকভাবে ব্যবহার করা শিখতে হবে। এখন প্রশ্ন কে পারবে সেই কাজ করতে? কে পারবে বানরের গলায় মালা পরাতে? যদি আমি নিজ দেশের কথা বলি তবে বাংলাদেশ সরকার বিশেষ করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এ কাজে মনোযোগী হতে হবে। দুঃখের বিষয় তারা সে কাজ সঠিক ভাবে করতে পারছে না, নানা কারণে, দুর্নীতি তার মধ্যে অন্যতম।

পাশের দেশ ভারতের সঙ্গেই আমরা আমাদের যে ন্যায্য অধিকারগুলো যেমন তিস্তার পানি বণ্টন, তারই সঠিক সমাধান করতে আজও পারিনি। উচিত হবে বাংলাদেশের যতোখানি সম্ভব ভালো মতো ব্যারিকেড দিয়ে সম্পূর্ণরূপে বাংলাদেশকে ঘিরে ফেলা, যাতে করে বর্ষার সময় ভারত থেকে কোনো অতিরিক্ত পানি বাংলাদেশে না ঢুকতে পারে। পাশাপাশি আমাদের দেশে বৃষ্টি এবং বন্যার ফলে যে পানি জমে সেটা যদি ধরে রাখতে পারি তাহলে ভারতের উপর নির্ভর করা দরকার হবে না। আর সেটা পেতে দরকার নদী নালাকে গভীর করা এবং তার দুই পাশ মজবুত করে বাঁধা, যাতে নদী ভাঙ্গন নিয়ন্ত্রণ করা এবং পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব হয়।

সেক্ষেত্রে অবশ্যই চীন সরকারের সাহায্য নিয়ে তাদের সঙ্গে মিতালী তৈরি করা শ্রেয়। তাতে বাংলাদেশ স্বস্তিতে থাকতে পারবে, একই সাথে আমরা সোনার বাংলার ভৌগলিক মানচিত্রকে সুজলা সুফলা শস্য শ্যামলাময় করে তুলতে পারব। এখন দরকার বিশ্ব কূটনীতিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ এবং সেটা পেতে হলে দরকার দক্ষতার পরিচয় দেওয়া এবং সেটা শুধু কথায় নয়, কাজে পরিণত করতে হবে। আমার প্রশ্ন কী অবস্থা আমাদের কূটনীতিকদের? কী মিশন, ভিশন এবং পলিসি নিয়ে তারা দেশের জন্য কাজ করছেন? তাদের নীরবতা যে বাংলাদেশের পরিস্থিতির অবনতির অন্যতম কারণ হতে পারে সেটা ভুলে গেলে চলবে কি?

লেখক : সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড