মাহবুব নাহিদ
বেশ কিছুদিন ধরেই কমলাপুর রেল স্টেশনে আন্দোলন করে যাচ্ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি। আসলে এই আন্দোলন রনির একার না। এই আন্দোলন বাংলাদেশের কোটি মানুষের। যারা ট্রেনে যাতায়াত করে তারা খুব ভালো করেই জানে যে কতটা দুর্ভোগ পোহাতে হয় মানুষের। নানানভাবে, নানান বিষয়ে আছে এই অসঙ্গতি। একটার কথা বলতে শুরু করলে সময় ফুড়িয়ে যাবে, কাগজ শেষ হয়ে যাবে কিন্তু কথা শেষ হবে। বাংলাদেশের আপামর মানুষের প্রাণের দাবি নিয়ে কমলাপুরে আন্দোলন করছে মহিউদ্দিন রনি। এর সাথে সায় আছে সকল মানুষের যারা ট্রেনে যাতায়াত করে।
প্রথমেই আসা যাক, টিকেট কাটার বিষয়ে। ট্রেনের টিকেট যে মাফিয়াদের দখলে এটা আমরা সবাই জানি। কিন্তু এর আগে যখন ই-সেবা দিয়ে টিকেট কাটা হতো তখন মানুষ অনলাইনে কিছু টিকেট কাটতে পারতো কিন্তু যখনই এটা সহজ ডট কমের কাছে গেল তখন অনলাইনে টিকেট পাওয়াই হয়ে গেল বন্ধ! সাইটে ঢোকার পর কিছুক্ষণ আপনাকে ধন্যবাদ জানাবে আর বলবে আপনি নাকি গুরুত্বপূর্ণ তাদের কাছে কিন্তু টিকেট আর পাবেন না। এই সমস্যা দ্রুতই সমাধান না হলে বড় বিপদ এসে যেতে পারে। এমন হাজারো রনিরা যখন রাস্তায় নেমে আসবে তখন তা সামলানো মুশকিল হয়ে যাবে।
এছাড়াও টিকেট ছাড়া যখন মানুষ যাতায়াত করে তখন তাদের কাছ থেকে অনেক সময়ই বেশি টাকা নেওয়া হয়। যদিও টিকেট ব্যতীত যাতায়াত করা উচিত নয়। কিন্তু যদি সে যাতায়াত করে তাহলে তার থেকে ন্যায্যমূল্য নিতে হবে। অথবা যদি তাকে জরিমানা করে সেটাও আলাদা বিষয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে টাকা নিয়ে কোনো টিকেট দেন না টিটিই। এক্ষেত্রে তিনি বলেন, আপনাকে স্টেশন থেকে বের করার ব্যবস্থা আমার। তার মানে বোঝা যায়, স্টেশনের লোকেরাও এর সাথে জড়িত।
টিকেটের পরেই যে বিষয়টা আসে সেটা হচ্ছে, ট্রেনের সময়। প্রায়শই দেখা যায় ট্রেন শিডিউল বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়। এটা আসলে অনেক সময় কিছুই করার থাকে না। আমাদের দক্ষিণবঙ্গ এবং উত্তরবঙ্গের দিকে যত ট্রেন যায় তা টঙ্গী স্টেশন পার হবার পর এক লাইন ধরে যেতে হয়। অর্থাৎ রাস্তা একটা আর সেটা দিয়েই আসা যাওয়া। অনেক সময় কোনো একটা ট্রেন একটু দেরি করলেই দাঁড়িয়ে অন্যদের জায়গা দিতে দিতে তার অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। যতদিন না ডাবল লাইনের রাস্তা হচ্ছে ততদিন এই সমস্যা সমাধান একদম সম্ভব না।
এরপর আসা যাক, রেলওয়ের গাড়ি এবং রাস্তার মান। আমাদের দেশের অনেক ট্রেনের অবস্থা নাজুক, রাস্তার অবস্থা তো আরো বেহাল। বিভিন্ন সময়ে এই রাস্তার কারণে, নাট বল্টু না থাকার কারণে দুর্ঘটনা হচ্ছে। কিন্তু দুঃখ লাগে এই রাস্তাঘাটের পিছনেই নাকি খরচ বহির্বিশ্বের অনেক দেশের চেয়েই বেশি। রেলক্রসিংগুলো একেকটা মরন ফাঁদ। যতগুলো বৈধ রেল ক্রসিং আছে তার চেয়ে অবৈধ রেল ক্রসিং যেন বেশি। এসব জায়গায় গেটম্যান তো দূরের কথা। অনেক জায়গায় গেটই নাই।
আবার অনেক স্টেশনেই দেখা যায় ট্রেন এসে দাঁড়ালে স্টেশনের প্লাটফর্ম আর ট্রেনে দরজার মাঝে আকাশ পাতাল দূরত্ব! এটাও দুঃখজনক। শিশু কিংবা বয়স্কদের জন্য ওঠা একদম কঠিন হয়ে যায়। আর সাথে মালামাল থাকলে তো জোয়ানরাও উঠতে পারে না।
এ তো গেল কর্মকর্তাদের কথা। আমরা যারা ভ্রমণ করি, এই অব্যবস্থাপনার পিছনে আমাদেরও দায় আছে। বিনা টিকেটে ভ্রমণ করা অনেকের কাছেই একটা প্যাশন কিংবা ফ্যান্টাসির মতো। এটাকে অনেকেই অপরাধ মনে না করে মনে করে যোগ্যতা। এরপর মালামাল নষ্ট করায় তো আমাদের জুড়ি নেই৷ ট্রেনে লাইট ফ্যান বদনা সোপকেস খুলে নিয়ে যাওয়া আমাদের নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা! আর লাইনের নাট বল্টু পাত খোয়া তো আমাদের নিজেদেরই সম্পত্তি। এটা যে আমাদেরই সম্পদ আর এর রক্ষণাবেক্ষণের দায় যে আমাদেরও আছে তা আমরা বুঝি না, বুঝতে চাই না।
তবে মানুষের কথা বলে কর্তৃপক্ষের গাফেলতি আড়াল করার সুযোগ নেই। আর এই মাফিয়াদের থেকে রেলকে মুক্ত করারও কোনো ব্যতিক্রম নেই।
মাহবুব নাহিদ : লেখক ও কলামিস্ট
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড