জবি প্রতিনিধি
কোটি কোটি বাঙালির স্বপ্নের অবকাঠামো পদ্মা সেতু। একসময় বাংলাদেশিদের কাছে যা স্বপ্ন ছিল, আজ তা বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতু আজ দৃশ্যমান। দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন উদ্ভোদন এর অপেক্ষায়। তবে পদ্মা সেতু নির্মান যতটা সহজে অনুমেয় এর পেছনের ইতিহাস ততটা সহজ ও সাবলীল নয়। শত বাধা উপেক্ষা করে বাস্তবে রূপ নিয়েছে স্বপ্নের সেতু।
পৃথিবীর যেকোন উন্নয়নশীল দেশে বৃহৎ অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য আন্তজার্তিক কোন প্রতিষ্ঠান কিংবা অন্য কোন দেশ থেকে ঋণ নেওয়া হবে এমনটাই স্বাভাবিক। পদ্মা সেতু নির্মানের জন্যেও প্রথমে তাই বিশ্বব্যাংকের দারস্থ হয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু তথাকথিত দুর্নীতির অভিযোগ তুলে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিতে অস্বীকার করে। যেকোন দেশের মেগা প্রকল্পের শুরুতে এমন ধাক্কার পর সে প্রকল্প সাধারণত বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু বাঙালি যে কারো কাছে মাথা নত করার জাতি নয়। এ যেন বঙ্গবন্ধুর সেই ভাষণের প্রতিরূপ "সাড়ে সাত কোটি বাঙালিকে দাবায়ে রাখতে পারবা না"। তেমনি বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় সাহসের মাধ্যমে কোনপ্রকার বৈদেশিক ঋণ ব্যতীত সম্পুর্ন দেশের নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মান সম্ভব হয়েছে। সকল চ্যালেঞ্জকে মোকাবিলা করে প্রধানমন্ত্রীর উপহার এই স্বপ্নের পদ্মা সেতু দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জনগণের জন্য ভাগ্যের দুয়ার খুলে দিয়েছে।
এ অঞ্চলের মানুষের যাতায়াতের জন্য লঞ্চ, স্পিডবোট ও ফেরি ছিল নদী পার হওয়ার মাধ্যম এবং রাজধানী ঢাকা শহরের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য এসব যানের কোন বিকল্প ছিল না। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য লঞ্চ ও ফেরিগুলো ছিল সময় ক্ষেপণের যান, কারণ নদী পার হওয়ার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। এছাড়া পিনাক-৬ সহ বিভিন্ন লঞ্চ দুর্ঘটনার মাধ্যমে হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানীর কথাও ভুলে যাবার নয়। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর মাধ্যমে এ সকল সমস্যার অবসান হবে।
পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে গোটা দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। নিরবিচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগের কারণে সময়ের পাশাপাশি কমাবে পণ্য পরিবহনের খরচও। স্থানীয় অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলেছেন, যাতায়াতে নদীর সহজলভ্যতা, আকাশ পথ আর এখন পদ্মা সেতুর কারণে ফেরী বিহীন সড়ক ব্যবসা বাণিজ্যে আমূল পরিবর্তন ঘটাবে। এছাড়া পদ্মা সেতুর মাধ্যমে কলকাতার সাথে দেশের দক্ষিণবঙ্গের যোগাযোগ সহজ হবে। ফলে বদলে যাবে দক্ষিণাঞ্চল।
বর্তমান সরকারের নেওয়া একাধিক মেগা প্রকল্পের উন্নয়নের সাথে স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর পরই বদলে যাবে একসময়ের অবহেলিত দক্ষিণাঞ্চলের চিত্র। একদিকে দক্ষিণাঞ্চলের মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নসহ ব্যাপক উন্নয়ন, অন্যদিকে সারাদেশের সাথে ফেরীবিহীন যোগাযোগব্যবস্থা চালু হবে। যার মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন বৃদ্ধি ও দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি সম্ভব হবে।
জাতীয় সংসদের বরিশাল–৪ আসনের সংসদ সদস্য পংকজ নাথ বলেন, পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি ধর্মীয় সংখ্যলঘুদের দেশান্তর ও জঙ্গীবাদ কমবে এবং পদ্মা সেতু চালু হলে প্রায় দুই কোটি মানুষের কর্মসংস্থান হবে। সামগ্রিক ভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক, ধর্মীয় সকল দিক দিয়ে দেশের পরিবর্তন ঘটবে।
সেতু তৈরির প্রথমদিকে নানা সমালোচনা থাকলেও দেশনেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় সংকল্পের মাধ্যমে আজ সকল সমালোচনার ঊর্ধ্বে গিয়ে পদ্মা সেতু বাঙালির গর্বের বিষয়ে পরিণত হয়েছে।
এ আর আব্দুল রায়হান শিক্ষার্থী, নৃবিজ্ঞান বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদক: মো. তাজবীর হোসাইন
নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড