• বৃহস্পতিবার, ০১ জুন ২০২৩, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩০  |   ৩৪ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

যদি বলি- ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই দেশকে রসাতলে দিচ্ছে’! 

  রহমান মৃধা

২২ এপ্রিল ২০২২, ১৩:০৩
যদি বলি- ‘ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই দেশকে রসাতলে দিচ্ছে’! 
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধার ‘আমার বাংলাদেশ’ ও ‘জাগো বাংলাদেশ’ বইয়ের প্রচ্ছদ (ছবি : সংগৃহীত)

সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রবাসীদের সঞ্চিত সম্পদের উপর শতভাগ দায়িত্ব পালন করবে এবং কোনো রকম সমস্যা হলে সক্রিয়ভাবে তার সমাধানে কোনো রকম গাফিলতি করবে না। জমির মালিক দীর্ঘদিন দেশের বাইরে থাকার ফলে মালিকের জমিটি নিচের বর্ণনা অনুযায়ী সরকারের নামে পরচা কাটা হয়েছে। প্রবাসী বিষয়টি জানতে পেরে তার জেলার ডিসি মহোদয়কে চিঠি লিখে জানিয়েছে। ডিসিকে ফোন করেছে কয়েক বার এবং ডিসি বারবারই পরবর্তী সময়ে ফোন করতে বলেছেন। কারণ চিঠিখানা ডিসি মহোদয়ের পড়ার সময়টুকু নাকি এখনো হয়নি।

শেষবার ফোন করলে একই উত্তর : চিঠি পড়া হয়নি। তবে সঠিক তথ্য না জেনেই ডিসি মহোদয় ভিকটিমকে দুটি শর্ত দিয়েছেন‌ :-

শর্ত ১ : ডিসির নামে কেস করতে হবে,

শর্ত ২ : ডিসিকে কিছু অর্থ দিয়ে জমিটি কিনে নিতে হবে, এর ফলে জমি ভোগ করা যাবে তবে কোনোদিন বিক্রি করতে পারবেন না।

ভিকটিম শুধু প্রশ্ন করেছেন, জমি আমার, দখলে গেল আপনার, এখন নতুন করে কিনব, তারপরও বিক্রি করতে পারব না, বিষয়টি কেমন হয়ে গেল না? এটাই কি তাহলে শতভাগ দায়িত্ব পালন এবং প্রতিশ্রুতি?

এখন প্রশ্ন হতে পারে দেশে যেখানে প্রতিদিন হাজারও খুন, দুর্নীতি, রাহাজানি, হয়রানি, ধর্ষণ হচ্ছে অথচ বিচার পাবার সুযোগ নেই সেখানে এটা কি কোনো ঘটনা হলো? আমি মনে করি এটাই বড় ঘটনা কারণ আমরা যদি একজন ডিসির মতো দায়িত্বশীল প্রশাসক থেকে এমনটি আচরণ পাই তাহলে ভাবুন সাধারণ প্রশাসনের অবস্থা। ভাত রান্না করার পর সব ভাত টিপে দেখা লাগে না দুই একটা দেখলেই বোঝা যায় ভাত সিদ্ধ হলো কি-না!

ইদানীং আর্মি প্রশাসনের অনেকেই চাকুরিচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়েছে। বিদেশে বসে দেদারছে দেশের বদনাম রটাতে উঠেপড়ে লেগেছে। ভাবখানা এই তারা বিরাট ক্ষমতার অধিকারী এবং দেশের অভ্যন্তরীণ সব খবরই রাখে। অন্য দিকে যখনই প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা চাকুরিচ্যুত হচ্ছেন বা অবসরে যাচ্ছেন তৎক্ষণাৎ যে কোনো ব্যক্তি মালিকানার অধীনে চাকরি নিয়ে দেশের সম্পদকে লুটপাট করে মালিককে দুর্নীতিগ্রস্ত করছে এবং নিজেদেরকে অর্থনৈতিকভাবে প্রভাবশালী করছে।

আরও পড়ুন : জবাবদিহি না থাকলে যেমনটা হয়

কয়েকদিন আগে একটি খবরে দেখলাম ঠিকাদার নাসির উদ্দিন হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে রূপালি এবং অগ্রণী ব্যাংক থেকে। নাসির উদ্দিনকে যারা সাহায্য করেছে এসব অপকর্মে, তারা অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার। দেশের টাকায় দীর্ঘদিন ধরে যাদেরকে সব ধরণের সুযোগ সুবিধা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে দেশকে বহিঃশত্রু এবং অভ্যন্তরীণ দুর্যোগ থেকে রক্ষা করার জন্য, তারাই এসব দুর্নীতিতে জড়িত। এমনকি এরাই জাতির পিতাকে পর্যন্ত খুন করেছে।

দেশকে সম্পূর্ণভাবে রসাতলের দিকে নিতে সবধরনের চেষ্টা চলছে। এটা একটি অপ্রিয় সত্য কথা। শুনলে কেউই খুশি হবে না তাই এসব কথা বলা বা লেখা যাবে না। এ বিষয়গুলো কিন্তু জনগণের প্রতিনিধিদের নজরে পড়ছে তবে তারা কিছু করছে না। কারণ তারাও তো নানাভাবে লুটপাট করছে। যদি সত্যিকারার্থে জনগণের প্রতিনিধি থাকত তবে এমনটি হতো না। লক্ষ লক্ষ ইনোসেন্ট জনগণের রক্তে দেশ স্বাধীন হয়েছে অথচ তাদের সাথে বেঈমানি?

আমরা বেশিরভাগ সময় রাজনীতিবিদদের দোষারোপ করি কিন্তু কখনো কি ভেবেছি যারা দেশের সঙ্গে বেশি বেঈমানি করছে তারা সর্বকালের সুবিধাবাদী সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা? সময় এসেছে এদের উপর তদন্ত করা, খুঁটিয়ে দেখা এদের ইনকামের সোর্স। অন্য দিকে কিছু কিছু মৌলবিদের অত্যাচারে দেশে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ইচ্ছা মতো হাদিসের দোহাই দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করা থেকে শুরু করে সারাক্ষণ মানুষের মধ্যে ভয় ঢুকানোই বর্তমানে তাদের প্রধান কাজ হয়েছে।

সারাক্ষণ কী করতে হবে, কী না করতে হবে, শুধু এসব কথাই বলা হচ্ছে অথচ করা হচ্ছে না তার কিছুই। ধর্মের মূলমন্ত্র যেটা সেটা কেউ করছে না সবাই শুধু বলছে এটা কর সেটা কর ইত্যাদি। বলার মানুষের অভাব নেই দেশে, অভাব কেবল করার মানুষের। ফেসবুক খুললেই আজাব এবং গজবের কথা ছাড়া অন্য কিছু শুনি না। অথচ প্রতিদিন, প্রতি ঘণ্টা, প্রতি মিনিট, প্রতি সেকেন্ড, প্রতি মুহূর্ত আল্লাহ পাক রাব্বুল আল-আমিনের রহমতে বেঁচে আছি। সেটা কি যথেষ্ট নয় যে আল্লাহ রহমানের রাহিম আমাদের ভালোবাসেন!

বেঁচে থাকাটাই যে বড় আশীর্বাদ তাকি এখনো বোধগম্য হয়নি আমাদের? ভয়, আতঙ্কের মাধ্যমে আল্লাহকে স্মরণ করা বা সিজদা করা এ কেমন ধর্ম প্রচার? বন্ধ করা হোক জালেমদের এসব ভণ্ডামি। আল্লাহকে ভালেবাসতে চাই, তার নির্দেশ আনন্দের সঙ্গে পালন করতে চাই, তাঁর রহমতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই মন থেকে, দোজখে যাবার ভয়ে নয়।

আরও পড়ুন : নোংরা রাজনীতিই পৃথিবীর অশান্তি

পৃথিবীর নিয়মকানুনের সঙ্গে আধ্যাত্মিক নিয়মকানুনকে মেশানোর ফলে আমরা পথভ্রষ্ট হতে চলেছি। ইসলাম, আল্লাহ, রাসুল এবং ইসলামের সঠিক মর্যাদা ধরে রাখতে হলে ওয়াজ নয়, জ্ঞান অর্জন করতে হবে এবং তার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। অন্যকে হেদায়েত করার ধান্ধাবাজি ছেড়ে নিজে হেদায়েত হোন, সমাজের জন্য ভালো কিছু করুন, কুরআনের নিয়মানুযায়ী চলুন, যদি সত্যকার ভাবে আল্লাহকে ভালোবাসেন।

দোহাই, হাজার হাজার মানুষকে জড় করে ইসলামের নামে অশান্তি তৈরি করবেন না। খুব হয়েছে এবার ক্ষান্ত হোন।যদি সমাজের জন্য সত্যিই কিছু করতে চান তবে দুর্নীতিমুক্ত সমাজ তৈরি করতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করুন। কাজ করুন, খাজনা দিন, ধর্ষণ বন্ধ করুন, দুর্নীতি মুক্ত থাকুন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করুন। যেমন সরকার সফল নাকি বিফল, এর বিচারের মালিক দেশের জনগণ। আর জনগণ তা পাশ্চাত্যে যেমন বিচার করে ভোটাধিকারের মাধ্যমে।

বাংলাদেশে জনগণের ভোট সরকারের পক্ষে যাবে না বলেই সরকার জনগণকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করেছে। কারণ সরকার সত্য জানতে ভয় পায় আর সেই জন্যেই জনগণের ভোটাধিকার হরণ করা হয়েছে। যেখানে ভোটের অধিকার নেই, সেখানে গণতন্ত্র থাকে কিভাবে? কিন্তু এর জবাবদিহিতা নেই বলে জনগণ সকল অধিকার থেকে বঞ্চিত। যে সরকার জনগণের মনের ভাষা বুঝে না, সে সরকার জনগণের সরকার হয় কীভাবে?

এসব বিষয়ে পারলে ওয়াজ করুন। আল্লার দোহাই লাগে ভয় এবং আতঙ্ক দেখিয়ে ইসলাম প্রতিষ্ঠা করা থেকে বিরত থাকুন। ভয় নয় ভালোবাসা হোক আল্লাহ পাক রাব্বুল আল-আমিনকে স্মরণ করার মূলমন্ত্র। তার নাম লয়ে চন্দ্র-তারা অসীম শূন্যে বিরাজমান। রবি হতে গ্রহে ঝরছে তার করুণা এবং ভালোবাসা। সেগুলোকে ভালোবাসা দিয়েই শুধু অনুভব করতে হবে, কারণ ভালোবাসায় রয়েছে শুধু ভালোবাসা।

এ ছিল কিছু অপ্রিয় সত্য যা উপরে তুলে ধরেছি, বুঝতে সহজ হবে কেন হেডিংয়ে লিখেছি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই দেশকে রসাতলে দিচ্ছে।

দেশের আইনে ফাঁক থাকায় বেআইনই আইনের হাত ধরে চলছে, তারপরও কিছু বলা বা লেখা যাবে না। কিছুদিন আগে দেখলাম সংসদে আইনমন্ত্রী ঠিক মত কথা বলতে পারছেন না, পরে বললেন তাকে পানি খাইয়ে দিয়েছে। সংসদে এ ধরণের ঘটনা অথচ কিছু বলা যাবে না!

আরও পড়ুন : দেখা হয়েছিল পূর্ণিমা রাতে

পুলিশ এবং প্রতিরক্ষা প্রশাসনে চলছে অনিয়ম। কিছু বলা বা লেখা যাবে না। অপ্রিয় সত্যকে তুলে ধরা যাবে না। দুর্নীতি হবে কিন্তু কিছু বলা যাবে না। মৌলবিদের ধর্মের উপর নানা ধরণের বিশ্লেষণ এবং দ্বিমত সত্ত্বেও কিছু বলা যাবে না। সরকারের ভুলত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করা যাবে না। সংবাদপত্রগুলো সত্য খবর প্রকাশ করতে পারবে না। করলে প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যাবে। এমনটি ধারণা জনগণের সত্ত্বেও রাষ্ট্র চলছে তার গতিতে।

লেখক : সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

ওডি/কেএইচআর

(মতামত পাতায় প্রকাশিত লেখা একান্ত লেখকের মত। এর সঙ্গে পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।)

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড