রহমান মৃধা
ছোটবেলায় বাংলাদেশে দেখেছি আকাশে প্রচণ্ড মেঘ হতো, তার পর শুরু হতো বিশাল গর্জন-তর্জন। মনে হতো অসম্ভব কিছু একটা ঘটে যাবে। পরে দেখা যেত তেমন মারাত্মক কিছু ঘটেনি। আবার অনেক সময় রাস্তা ঘাটে দেখেছি, যে কুকুরগুলো বেশি চিল্লাচিল্লি করত তারা ওই চিল্লাচিল্লি বা ঘেউ ঘেউ ছাড়া আর কিছু করেনি। তাদের ক্ষমতার মাত্রা ঘেউ ঘেউয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। গ্রামে একটি প্রবাদ বাক্য ছিল অতীতে যেমন বলা হতো- ‘সেজে-গুঁজে বিয়ে হয় কিন্তু কাইজে হয় না।’
কাইজে কী? গ্রাম-গঞ্জে দুটি দলের মধ্যে ঝগড়া বাধলে উভয় পক্ষ ঢালশড়কি, রামদা, লাঠিসোটা ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হতো, এই সংঘর্ষকে আঞ্চলিক ভাষায় কাইজে বলে, বিশেষ করে মাগুরা-নড়াইল এলাকায়। আজকাল দেশের মানুষ লেখাপড়া শিখে শিক্ষিত হয়েছে, গ্রামের বা আঞ্চলিক ভাষা বলতে বা শিখতে শরম পায়। আমি আবার সেই ছোটবেলার স্মৃতি ভুলতে পারিনি, তাই মাঝেমধ্যে গ্রামের ভাষা চলে আসে লেখার মাঝে।
গ্রামের কথা থাক বরং একটু বিশ্বের কথা নিয়ে আলোচনা করি। এই মুহূর্তে পৃথিবীর রংতামাশা দেখে কিছুই বুঝতে পারছিনে! কখন কে কী ঘটায় ফেলে এমন একটি ভাব। ছোটবেলায় দেখেছি ঝগড়াঝাঁটির সময় কিছু লোক মধ্যস্থতা করতেন তাদেরকে বলা হতো মাতব্বর। আবার কিছু লোক উস্কানি দিতেন তাদের বলা হতো দালাল। বর্তমানে শিক্ষার সুবাদে ভাষার মোডিফিকেশন হয়েছে তাই মাতব্বরকে বলা হয় লিডার আর দালালকে বলা হয় কূটনীতিবিদ।
এখন প্রকৃত মাতব্বর বা লিডার পাওয়া দুষ্কর হলেও কূটনীতিবিদের অভাব নেই, যার ফলে এরা একে অপরকে উস্কানি দিয়ে বাজার গরম রাখে, মানে বিশ্বে সারাক্ষণ অশান্তি অব্যাহত রাখতে ওতপ্রোতভাবে জড়িত রয়েছে।
বিশ্বের বর্তমান পরিস্থিতি অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়েছে। কেউ না খাওয়াইয়ে মারছে, কেউ না খেয়ে মরছে। এক দিকে মহামারি করোনা ভাইরাস, অপর দিকে যে কোনো সময় বিশ্বযুদ্ধ বাধার সম্ভাবনা উক্রাইনকে নিয়ে। উক্রাইন ইস্ট ইউরোপের এক মজার দেশ। এ দেশে অনেক কিছুর মধ্যে রয়েছে যেমন ভালোবাসার সুড়ঙ্গ পথ, যা আবার প্রকৃতির এক বিস্ময়কর তুলির টান।
এক অসাধারণ ‘Tunnel of love’ যা হয়তো না দেখলে বিশ্বাসযোগ্য হবে না। এক সবুজে মোড়া সুড়ঙ্গ পথ আছে ক্লেভন টাউন, উক্রাইনে। আশ্চর্যের বিষয় হলো যে এই সুড়ঙ্গ পথ কোনো মানুষ নির্মাণ করেনি, সবুজ গাছেরা নিজেরাই একটু একটু করে বাড়তে বাড়তে এক নিখুঁত খিলান বানিয়েছে। এই পাঁচ কিলোমিটার লম্বা সুড়ঙ্গের আদর্শ আকর্ষণের এই জায়গাটিতে প্রেমিক-প্রেমিকরা ছাড়াও বহু মানুষ এই সৌন্দর্যের অনুভূতি নিতে এবং দেখতে আসে।
আরও পড়ুন : সূর্য উঠার আগে
তাহলে কি রাশিয়া নতুন করে সুড়ঙ্গের প্রেমে পড়েছে, যে পুরো উক্রাইনই তাদের দখলে নিতে চায়? উক্রাইন অতীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল। পরে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গেচুরে ছোট বড় অনেক দেশে পরিণত হয়েছে। উক্রাইন তার মধ্যে একটি। উক্রাইন ন্যাটো জোটের সঙ্গে যোগ দিতে চায় কিন্তু রাশিয়া সেটা মেনে নিতে পারছে না। এ দিকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) এবং অ্যামেরিকা পছন্দ করছে না উক্রাইনের ওপর রাশিয়ার চাপ সৃষ্টি করাকে।
পুতিন ইউক্রেন আক্রমণ করার পেছনে যে অজুহাত সৃষ্টি করেছেন তা শুধু পশ্চিমাদের উস্কানি দেবার প্রবণতা মাত্র। তাছাড়া পুতিন হয়তো ভাবছেন, এতে নিজ দেশের মানুষের কাছেও তার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেড়ে যাবে। রাশিয়া তার গৌরবময় প্রাধান্য ফিরি পেতে এ অঞ্চলে ভীতি প্রদর্শন ও সামরিক শক্তি প্রয়োগ করতে চাইছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
২৫ বছর যাবত ইউক্রেন, জর্জিয়া, মলদোভা, এমনকি ন্যাটোতে যোগ দেওয়া সাবেক সোভিয়েতভুক্ত এস্তোনিয়া, লাটভিয়া ও লিথুয়ানিয়ায় মার্কিন প্রভাব কমানোর জন্য রাশিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইউক্রেন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় যাতে রাশিয়া পশ্চিমাদের কাছ থেকে বেশি গুরুত্ব পায়, সে জন্য পুতিন পশ্চিমাদের দেখাতে চান, ন্যাটোর মতো তাদেরও একটি সামরিক জোট রয়েছে। এ কারণেই তিনি সিএসটিও জোটের সেনাদের কাজাখস্তানে পাঠিয়েছেন ইত্যাদি।
চলছে কূটনীতিবিদের বৈঠকের পর বৈঠক। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট করে বলেছেন রাশিয়া তার ঘরের পাশে ন্যাটো সামরিক জোটের নতুন কোনো তৎপরতা কোনোভাবেই সহ্য করবে না। আমেরিকা এবং ন্যাটো জোট রুশের এই বার্তা অগ্রাহ্য করলে ইউরোপকে আবারো "যুদ্ধের দুঃস্বপ্ন" দেখতে হতে পারে। সুইডেন, ফিনল্যান্ড তাদের সীমান্তে সশস্ত্র বাহিনী নিয়োগ দিয়েছে। জনগণের মধ্যে কিছুটা আতঙ্কের ছাপ পড়েছে।
আরও পড়ুন : দেখা হয়েছিল পূর্ণিমা রাতে
এ দিকে প্রতিদিন সুইডেনে করোনা মহামারিতে পঞ্চাশ হাজারের মতো মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। ভয়ভীতির শেষ নেই, কী হবে, কী না হবে, এটাই এখন প্রশ্ন? হাসপাতালে পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা নেই, ডাক্তার, নার্স থেকে শুরু করে অন্যান্য কর্মীরাও আক্রান্ত হচ্ছে, ফলে সেবা দেওয়ার লোকের সমস্যা। সমস্ত সমস্যা মিলে ক্রাইসিস সিচুয়েশন, ঠিক তেমন একটি সময় রাশিয়ার হুঁশিয়ারি সংকেত ‘ইউরোপ আক্রমণ’ এই হচ্ছে বিশ্বের তথা ইউরোপের বর্তমান পরিস্থিতি। Hello Bangladesh, tell me how are you doing?
লেখক : সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।
ওডি/কেএইচআর
সম্পাদক: মো: তাজবীর হোসাইন
সহযোগী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া
সম্পাদকীয় কার্যালয়
১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।
যোগাযোগ: 02-48118241, +8801907484702
ই-মেইল: [email protected]
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড