• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৯ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

মরার সময়ও নেই

  রহমান মৃধা

০৯ ডিসেম্বর ২০২১, ১৬:১৭
মরার সময়ও নেই
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

মাত্র ১৮ বছর বয়সী একজন সুন্দরী সুইডিশ মেয়ে কীভাবে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে জড়িত হলো আর কে বা কারা তাকে অনুপ্রাণিত করল? কিছুক্ষণ টিভির পর্দায় কথোপকথনের পর অনেক কথা একের পর এক জানা গেল। আমার ভাবনা থেকে ঘটনার উপর আলোকপাত করার আগে জেনে নিই আইএস কি? ইসলামিক স্টেটের বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দুর্ধর্ষতম জঙ্গি সংগঠন।

২০১৪ সালের শুরুতে সংগঠনটির নাম ছিল ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট (আইএসআইএল)। পরে এর নাম পরিবর্তন করে সংক্ষেপে আইএস রাখা হয়। ইরাক ও সিরিয়া দুই দেশে সুন্নিদের বঞ্চনাকে পুঁজি করে আইএসের বিস্তার ঘটতে থাকে। মূলত ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন বাহিনীর হামলা শুরু হলে এর বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধে যোগ দেন বাগদাদি। ২০১০ সালে আল-কায়েদার ‘ইরাক শাখার’ নেতা হিসেবে আবির্ভূত হন। এই সংগঠন পরে আইএসআইএলে পরিণত হয়। ইরাকে মার্কিন সামরিক অভিযান ও পরবর্তী দখলদারিত্বের পর যে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তারই প্রেক্ষাপটে জন্ম এ সংগঠনের।

বিশ্লেষকরা বলেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অভিনব কৌশল আইএসকে তরুণদের মধ্যে আল-কায়েদার চেয়ে বেশি জনপ্রিয় করে তুলেছে। অনেক বিদেশি তরুণদের মধ্যে মিশন-ভিশন, পলেসি শুরু থেকে জিহাদি করে তোলে। যে চিন্তা এবং ভাবনা এই সুইডিশ মেয়ের মধ্যে গড়ে উঠেছিল সুইডেনে থাকতে তা অঙ্কুরে বিনাশ হয়ে যায় সিরিয়া পৌঁছানোর সাথে সাথে।

পাশ্চাত্য থেকে আসা তরুণদের মধ্যে ৮০ শতাংশই আইএসের সিরিয়া শাখায় যোগ দিয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউরোপীয় অন্যান্য দেশ থেকে আইএসে অনেক তরুণ যোগ দিয়েছে। এদের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও আরব অঞ্চলের যোদ্ধারাও রয়েছে। ২০১৪ সালে ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল অংশ তাদের দখলে যায়। গোষ্ঠী দ্বন্দ্ব কবলিত ইরাকের বিশৃঙ্খল অবস্থা ও সিরিয়ার গৃহযুদ্ধ আইএসের সাফল্যের বড় কারণ। যে এলাকাই এরা দখলে এনেছে, সেখানেই তারা কঠোর শাসন ও নিষ্ঠুরতার প্রমাণ রেখেছে।

বলা হয়, ২০১৪ সালে জিম্মি করে সংগঠনটি দুই কোটি ডলার আয় করে। ইরাক ও সিরিয়া দুই দেশেই সুন্নিদের বঞ্চনাকে পুঁজি করেই আইএসের বিস্তার ঘটতে থাকে। ইরাকে মার্কিন হামলায় সুন্নি সাদ্দাম হোসেনের পরাজয়ের পর সুন্নিরা জাতীয় রাজনীতিতে ক্ষমতাহীন হয়ে পড়ে। আইএসের জঙ্গিরা আল-কায়েদা থেকেই উঠে আসা। আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যুর পর এর মধ্যে বিভক্তি দেখা দেয়। আল-কায়েদার আক্রমণের প্রধান লক্ষ্যবস্তু ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও এর অন্য পশ্চিমা মিত্ররা। তারা যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র বলে পরিচিত সৌদি আরব ও মিশরেরও বিরোধী।

আরও পড়ুন : চ্যালেঞ্জ

কিন্তু আইএসের মূল লক্ষ্য নতুন নতুন এলাকা দখল এবং অতীতের খিলাফতের অনুকরণে একটি ইসলামি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা। তবে ইরাক ও সিরিয়ার বাইরে লিবিয়া, মিশর, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া ও ফিলিপাইনের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের ওপর আইএসের প্রভাব আছে বলে মনে করা হয়। মনুষ্য জাতি যুগে যুগে নানা দৃষ্টিভঙ্গির অনুসন্ধান করেছে।

যেমন: গ্রিক জাতি মানুষের গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি বিজ্ঞান সম্মতভাবে প্রভাবিত করে। এটা অনেকের কাছে খ্রিস্টান দৃষ্টিভঙ্গি যা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে আটকে থাকা মানুষের গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির বিরুদ্ধে। এই মতবাদের অনুসারীদের সাধারণভাবে বলা হয় মৌলবাদী বা রেডিক্যালিজম।

মানুষের গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর আক্রমণের সময়, তারা মূলত ধাক্কা দেয় গ্রিক-খ্রিস্টান ঘাঁটির বিরুদ্ধে। কারণ এ দায়িত্ববোধ, যুক্তিসঙ্গত এবং সততা বিদ্যমান গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গির উপর, মৌলবাদীরা সন্তুষ্ট নয় যার ফলে আক্রমণের প্রসার ঘটায় বিজ্ঞানের রিপোর্ট করা ফলাফলের উপরও। কখনো কখনো মৌলবাদী বা রেডিক্যালিজমের অনুসারীদের আক্রমণের ফলাফল বিশ্বের গণতন্ত্র বিশ্বাসী মানুষের জীবন নাসের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

এখন এই মত-দ্বিমতের ভিন্নতার উপর বিশ্বে মূলত দুটি গ্রুপের জন্ম, একটি ডেমোক্রেসি অন্যটি রেডিক্যালিজম। এখন যারা বর্তমান ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাসী না তারা আইএসে যোগদান করে সেই সংগঠনকে জোরদার করছে। সুইডিশ এই নারী বিশ্বের লাখো লাখো তরুণদের একজন যে সুইডেন ছেড়ে আইএসের সাপোর্টার হিসাবে যোগদান করে।

আরও পড়ুন : মেঘের আড়ালে সূর্য হাসে

উদ্দেশ্য ছিল এক নতুন পৃথিবীর জন্ম দিবে। সেটা সফল হয়েছে কি-না এই মুহূর্তে বলা কঠিন তবে স্বল্প সময়ের মধ্যে সে সিরিয়ায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সাত সন্তানের জন্ম দেয়। পরে স্বামী স্ত্রী দুজনই মৃত্যু বরণ করে ২০১৯ সালে। এতিম বাচ্চাগুলো বাবা-মা ছাড়া হয় যখন ঠিক তেমন একটি সময়ে সুইডেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় তাদেরকে সুইডেনে আনতে। অনেক চেষ্টার পর বাচ্চাদের নানার সহযোগিতায় তারা এখন সুইডেনে বসবাস করছে, তবে এক সঙ্গে নয়, তাদেরকে সুইডেন সরকার বিভিন্ন পরিবারের মধ্যে বণ্টন করেছে পালিত সন্তান হিসাবে। সুইডেনের নিয়মানুযায়ী ভাইবোনদের মধ্যে দেখা সাক্ষাত থেকে শুরু করে যেভাবে যোগাযোগ হবার কথা সেটাও হচ্ছে।

কিছুদিন আগে ইয়ান ফ্লেমিং এর সৃষ্ট কাল্পনিক চরিত্র জেমস বন্ড ছবিটি “মরার সময় নেই” (নো টাইম টু ডাই) দেখেছি। ছবিটির যে অংশটি আমাকে বেশি ভাবিয়েছে সেটা হলো বাবা-মার মর্মান্তিক মৃত্যু সন্তানের জীবনে কীভাবে ছাপ ফেলে। ছবিটি আমাদেরকে তেমন একটি সংকেতও দিয়েছে অন্যান্য বিষয়ের সাথে। সুইডেনের বর্তমান বসবাসরত সাত ভাইবোন সাত পরিবারে আলাদা আলাদাভাবে বড় হবে। এদের মধ্যে অনেকেই সিরিয়ার স্মৃতি সাথে করে নিয়ে এসেছে।

এদের অনেকের হৃদয়ে বাবা-মায়ের স্মৃতি জড়িত রয়েছে। হয়তোবা অনেক দুঃখকষ্টের স্মৃতি সাথে ভালোবাসার স্মৃতি, যাইহোক না কেন যেদিন এই সন্তানগুলো বড় হবে কী হবে তাদের রিয়াকশন, অ্যাকশন ইত্যাদি! আমরা খবর দেখি, খবর দেখে ভুলে যায়, আবার নতুন খবর দেখি কিন্তু রিফ্লেক্ট করি কী সবসময় সব বিষয়ের উপর? আইএস থেকে বর্তমান ইউরোপের বিভিন্ন দেশে হাজার হাজার বাবা-মা ছাড়া শিশুরা ফিরে আসছে নতুন জীবনের সন্ধানে।

আরও পড়ুন : দেখা হয়েছিল পূর্ণিমা রাতে

বর্তমান সমাজ কী প্রস্তুত তাদেরকে সব কিছু সঠিকভাবে দিতে এবং গড়ে তুলতে নতুন প্রজন্ম হিসাবে, যে প্রজন্ম দিবে একটি সুন্দর পৃথিবী? নাকি জেমস বন্ডের মরার সময় নেই ছবির মত নতুন কোনো ভিন্ন দৃশ্য দেখতে হবে!!!

লেখক : সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

ওডি/কেএইচআর

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড