• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

বিদেশে উচ্চশিক্ষা : কেন, কোথায় এবং কীভাবে?

  রহমান মৃধা

১১ নভেম্বর ২০২১, ১৭:১১
বিদেশে উচ্চশিক্ষা : কেন, কোথায় এবং কীভাবে?
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

নহাটাবাসী হতে চাও? মাগুরাবাসী হতে চাও? বাংলাদেশি হতে চাও? বিশ্ববাসী হতে চাও? নাকি সব কিছুর সমন্বয়ে মানুষের মত মানুষ হতে চাও? নাকি যেমন আছ তেমন থাকতে চাও? এই চাওয়াটাও কিন্তু সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত ব্যাপার। শিশুর জন্মে যেমন সে জানেনা তার ভালো-মন্দ, তাইতো শুরু থেকে বাবা-মা এই বিশেষ গুরুদায়িত্বটি পালন করেন ভালোবাসার বন্ধনে।

বাবা-মাকে পাওয়া আমাদের চয়েস নয়, এটা জন্মগতভাবে পাওয়া, কিন্তু শ্বশুর-শাশুড়ি এটা কিন্তু চয়েস, কারণ এখানে আমরা প্রভাব বিস্তার করতে পারি।

একইভাবে জন্ম গ্রহণ করা আমাদের ক্ষমতার বাইরে। কিন্তু জন্মের পরের সময়কে চেঞ্জ করার সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা কিন্তু আমাদের হাতে।

এটার পরিবর্তন করার জন্য আমাদের সার্বিকভাবে চেষ্টা করা দরকার এবং তা পেতে হলে স্ট্রিটিস স্মার্ট হতে হবে জীবনের শুরু থেকে। আমি এর আগে লিখেছি বিশ্ব নাগরিক হতে হলে কী দরকার?

তার আগে ভাবতে হবে ব্যক্তির চিন্তাধারা কী? আদৌ কী আমি বিশ্ব নাগরিক হতে চাই? নাকি বাবা-মা চান তাই আমি এটা করছি! জীবনের একটি নির্দিষ্ট স্টেজে আমাদের সিদ্ধান্তে আসতে হবে ব্যক্তিগত ভাবে আমি কী চাই!

যখনই এই সিদ্ধান্ত পরিষ্কার তখন কীভাবে মূল লক্ষ্যে পৌঁছতে হবে, সেটাই হবে প্রশ্ন। কিছুটা ফিল্ড স্টাডি করতে হবে কি সুযোগ-সুবিধা আছে বা বাধাবিঘ্ন রয়েছে সে বিষয় জানতে হবে।

ক) এখন যদি আমার গোলস অ্যান্ড অবজেক্টিভস হয় যে বিদেশে পড়তে যেতে চাই, তাহলে শুরু থেকে মাইন্ডসেট করতে হবে যে আমি প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে যাব।

খ) কেন দেশের লেখা-পড়া বাদ দিয়ে বা প্রাথমিক পর্যায়ের লেখা পড়া শেষ করে হঠাৎ বিদেশে পড়াশুনো করার প্রবণতা এলো? দেশে কী সেই শিক্ষার অভাব বা প্রশিক্ষণ নেই যে বাইরে গিয়ে তা অর্জন করতে হবে? নাকি বাবা-মার আর্থিক সচ্ছলতা ভালো এবং একধরণের ফ্যাশন তাই বাইরে পড়তে হবে? এখন ‘ক’ এবং ‘খ’ দুটো ভিন্ন ধরনের গোলস অ্যান্ড অবজেক্টিভস। ‘ক’ গ্রুপের শিক্ষার্থীরা সব সময় কোনো না কোনো ভাবে জীবনের সঠিক পথ খুঁজে বের করে তারা সফল হয়ে থাকে যা ‘খ’ গ্রুপের ক্ষেত্রে তেমনটি নজরে পড়ে না।

আজ বর্ণনা করব ইউরোপে পড়াশুনো করার জন্য কী কী প্রয়োজন এবং কখন বা কোন লেভেলে পড়াশুনো করার সুযোগ-সুবিধা রয়েছে।

বাংলাদেশ থেকে সুইডেনে পড়াশুনো করতে হলে Test of English as a Foreign Language (TOEFL) বা English language teaching for learner success in vocabulary development, oral proficiency, reading, and spelling (IELTS) করতে হবে।

আরও পড়ুন : ঝর্ণা কেমনে হয় যদি নদী-সাগর না ডাকে কভু

প্রতি মাসে কী পরিমাণ সুইডিশ ক্রোনার (১ ক্রোনা = বাংলা ১০ টাকা) দেখাতে হবে। বিস্তারিত জানতে Swedish migration Agency’s Website এ গেলে সব বিষয়ে জানা যাবে এবং গুগলের মাধ্যমে বেশির ভাগ ইনফরমেশন জানার ব্যবস্থা রয়েছে।

নরমালি বিদেশি শিক্ষার্থীরা যখন গেস্ট স্টুডেন্ট হিসাবে সুইডেনে আসে প্রাথমিক পর্যায়ে তারা সুইডিশ হোস্ট ফ্যামিলি পেয়ে থাকে যা বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজ করে।

সুইডিশ হোস্ট ফ্যামিলির সমন্বয়ে এদের কালচার ও ট্র্যাডিশন সম্পর্কে জানার যথেষ্ট সুযোগ হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীর আবাসিক ব্যবস্থা খুবই সুন্দর এবং সুইডিশ ছাত্র-ছাত্রীরা সব সময় সাহায্যের হাত বাড়িয়ে থাকে।

সুইডেন ছাড়াও ইউরোপের অনেক দেশে ওয়ার্ক পারমিটের সুযোগ রয়েছে যার কারণে নিজের দায়িত্বে কাজ খুঁজে পেলে পড়াশুনো বা থাকা-খাওয়ার খরচ জোগাড় করে নিজের পায়ে দাড়িয়ে লেখা-পড়া ম্যানেজ করা সম্ভব। যারা সত্যিকারে মোটিভেটেড তাদের পক্ষে এটা সম্ভব।

বাংলাদেশের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী ইউরোপে আসার পরও আন্ডার গ্রাজুয়েট লেভেলে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ লাভ করতে পারছে না বিধায় তারা কর্মের সমন্বয়ে কোনরকম লেখাপড়া করে বিদেশে সেটেল হবার চেষ্টাই কঠিন পরিশ্রম করে চলছে এবং কোনো না কোনোভাবে তারা ম্যানেজ করছে। আন্ডার গ্রাজুয়েট লেভেলে যারা পড়াশুনা করতে এসেছে এদের মধ্যে খুব কম শিক্ষার্থীই বলতে হবে উচ্চশিক্ষাই শিক্ষিত হতে পেরেছে।

বাংলাদেশ থেকে মাস্টার্স শেষ করে যারা স্কলারশিপ বা বৃত্তি পেয়ে বিদেশে পড়াশুনোর জন্য এসেছে এদের বেশিরভাগই প্রশিক্ষণ শেষ করে দেশে ফিরেছে বা এখানে থাকার ব্যবস্থা করে নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ে বা ভালো কোনো প্রতিষ্ঠানে কর্ম নিয়ে। কিছু ব্যতিক্রম রয়েছে তা হল যদি কারো আত্মীয় বা ভালো গার্ডিয়ান থাকে বিদেশে এবং তারা যদি স্পন্সর করে সঙ্গে গাইড দিতে পারে শতভাগ, তখন আন্ডার গ্রাজুয়েটেও পড়া সম্ভব।

এছাড়া যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ পাওয়া যেতে পারে। তবে এদের সংখ্যা খুবই কম। আমার ভাতিজাসহ আরও কিছু ছাত্র কিন্তু ভালো করতে পেরেছে, কারণ আমি এবং আমার বড় ভাই তেমনটি দায়িত্ব নিতে পেরেছিলাম বলে।

তাদের সঙ্গে শর্ত ছিল তারাও একদিন আমাদের মত করে আলোর ফেরিওয়ালা হবে এবং অন্যকে বিদেশে পড়তে আসার জন্য সাহায্যের হাত বাড়াবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা তাদের কথা রাখেনি।

আরও পড়ুন : জীবনের অর্থ খুঁজতে গিয়ে হৃদয়ের অনুভূতি বুঝেছি

তবে হ্যাঁ তারা সবাই লেখা-পড়া শিখে আর্থিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশ থেকে বিয়ে করে আর কিছু না করুক আরেকটি পরিবারের হাত ধরেছে। আমার লেখাতে আমি স্পেসিফিকভাবে ইউরোপের শিক্ষার নিয়ম কানুনগুলোই তুলে ধরেছি।

এখানে আমেরিকা বা কানাডার বিষয় কিছু উল্লেখ করিনি যা হয়ত পরের লিখাতে জানাব।

বাংলাদেশ থেকে সাত সাগর আর তেরো নদী পাড়ি দিয়ে যদি কেউ সত্যিকারে স্বপ্ন দেখে থাকে যে সুশিক্ষার জন্য বিদেশে গিয়ে মানুষের মত মানুষ হবে। আশাকরি সে স্বপ্ন যেন জাগ্রত অবস্থায় সে দেখে, তাহলে তা বাস্তবে রূপ দেওয়া সম্ভব হবে। মাতৃভূমি ছেড়ে অন্য দেশেই যখন থাকব তা যদি মাতৃভূমির চেয়ে ভাল না হয়, তাহলে মাতৃভূমি ছাড়া ঠিক হবে বলে আমি মনে করি না। কারণ বিদেশে ভালো থাকতে না পারলে দেশের কথা ভাবা বা দেশের জন্য ভালো কিছু করা সম্ভব হবে না।

শুধুমাত্র মনকে বোঝানো যাবে যে অন্যের ধ্বংস না করে বিদেশে এসে পাড়ি জমানো হয়েছে বেঁচে থাকার জন্য। আগের তুলনায় বর্তমানে বিশ্বায়নের অর্থনীতিতে অনেক রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে, সাহসী নেতৃত্ব ও কৌশলে বাংলাদেশ প্রতিনিয়ত এগিয়ে চলেছে। কিন্তু নারী নির্যাতনের ঘটনা বৃদ্ধি, বিভিন্ন ছুতানাতায় সাম্প্রদায়িক সহিংস ঘটনা মানবিক, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্র বাংলাদেশ এবং সরকারের সার্বিক উন্নয়ন প্রশ্নবোধক চিহ্নের সামনে আজ দাঁড়িয়ে আছে।

ক্ষমতাসীন এ সরকার একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার, সপরিবারে জাতির পিতা সহ জেলখানায় জাতীয় চার নেতা হত্যার বিচার করতে সক্ষম হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস, এই সরকার পারবে বাংলাদেশের নাগরিক হিন্দু ও আদিবাসীদের ওপর সংঘটিত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বন্ধ করে একটি অসাম্প্রদায়িক, মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে।

বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে কাজটি জটিল ও কঠিন হলেও তা করতে হবে। একটি মানবিক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে শিক্ষাব্যবস্থা ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।গর্হিত সব অপরাধের বিচার হবে এমন সংস্কৃতি, এমন বিশ্বাস গড়ে তুলতে হবে জাতি-ধর্ম-শ্রেণি নির্বিশেষে সব নাগরিকের মনে। প্রত্যয়ী বাংলাদেশ রাষ্ট্রে সব নাগরিক নিরাপদ বোধ করবে।

যদি কেউ এসব সমস্যাকে ঝামেলা বলে মনে করে এবং জন্মভূমি, ছাড়তে চায় তাহলে ঠিক হবে না। যাই কিছু করি না কেন, যেখানেই থাকি না কেন, মনে রাখতে হবে জীবনের মূল্য কী এবং আমার কন্ট্রিবিউশন সমাজের জন্য কী? যেখানেই শিক্ষা প্রশিক্ষণ হোক না কেন তা যেন সুশিক্ষা হয়।

আরও পড়ুন : দেখা হয়েছিল পূর্ণিমা রাতে

সেই সুশিক্ষা যেন মনের দরিদ্রতা এবং কলুষতা দূর করে। এই সচেতনতা যদি থাকে তবেই হবে পৃথিবীতে জন্মের এবং বেঁচে থাকার সার্থকতা। সব সময় মনে রাখতে হবে মানুষের মাঝে আমি বাঁচিবার চাই।

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

ওডি/কেএইচআর

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড