• শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩০ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

ঝর্ণা কেমনে হয় যদি নদী-সাগর না ডাকে কভু 

  রহমান মৃধা

১০ নভেম্বর ২০২১, ১১:৫১
ঝর্ণা কেমনে হয় যদি নদী-সাগর না ডাকে কভু 
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা ও তার সহধর্মিণী মারিয়া (ছবি : সংগৃহীত)

সুইডিশ ভাষায় ডগেন্স নিহেটার-এর বাংলা অর্থ হলো আজকের সংবাদ। আমরা সুইডেনে সংক্ষেপে বলি ’DN’, এটা সুইডেনের সবচেয়ে বড় পত্রিকা, দাম ১-১০ ক্রোনার, দাম ভ্যারি করার কারণ মাসে এক দাম, তিন মাসে এক দাম, বছরে একদাম তারপর তরুণদের জন্য অন্য দাম। এখন প্রযুক্তির যুগ, খবর দেখা বা পড়ার মাধ্যমের অভাব নেই। তারপরও বিশ্বের পত্রিকা গুলো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে।

সাংবাদিকদের পাশাপাশি আমরা যারা লিখি, চেষ্টা করি পত্রিকার মাধ্যমে আমাদের লিখাগুলো প্রকাশ করতে। অনেকে সরা সরি নিজের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করে। একটি তথ্য জোগাড় করা বা নতুন কোনো চিন্তাকে সুন্দর করে তুলে ধরা অবসর সময়ে বা পেশা হিসাবে অথবা নেশা হিসাবে, যাই বলি না কেন এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে হৃদ্যতা, সময়, অর্থ এবং কষ্ট। এতকিছুর পর প্রতিদিন একটি খবরের কাগজ বা পত্রিকা বের হয় যার সেলফ লাইফ বড় জোর একদিন।

নিউজের মতো সর্ট টাইম বা স্বল্প সময় খুব কম পণ্যের রয়েছে বাজারে, তারপর যদি সে নিউজ মনঃপূত না হয় তাহলে কেউ সেটা পড়েও দেখবে না। অনেক সময় দেখা গেল শুধু হেডিংয়ের উপর চোখ বুলিয়ে পড়া থেকে সরে গেল, ভেতরে কি আছে সেটাও জানার ইচ্ছে বা সময় হলো না। আজকের নিউজ পরের দিন সেটা চলে যায় গার্বেজে, তবে গুগলের যুগে অনলাইনে নিউজ গুলো আর্কাইভ হয়ে জমা থাকছে, যার ফলে নিউজের অতীত ইচ্ছে করলে জানা সম্ভব।

বাংলাদেশে এখনো ১০ টাকার নিউজ পেপার কিনে পড়ার শেষে পরের দিন কেজি হিসাবে বাজারে বিক্রি করে কিছু টাকা ফেরত পাওয়া সম্ভব যা আমাদের সুইডেনে সম্ভব না, যার জন্য গার্বেজে ফেলা হয় এবং সেটা পরে সরাতে অতিরিক্ত অর্থ অপচয় করতে হয়।

এভাবে হাজার টাকা খরচ করে লেখাপড়ার জন্য বছরের শুরুতে যে বইগুলো কেনা হয়, বছর শেষে সেই বইগুলোই কেজি হিসাবে বিক্রি করা হয় বাংলাদেশে। কিন্তু আমাদের এখানে সরা সরি সেগুলো গার্বেজ চলে যায়।

দরকার ফুরিয়ে গেলে কদর কমে থাকে সবকিছুরই। আমরা স্বার্থপর প্রাণী, ভিখারিকে ৫ টাকা দেওয়ার আগে চিন্তা করি কতটুকু পুণ্য অর্জন হবে।

আরও পড়ুন : সুইডেনে ভূত?

বিনা স্বার্থে কেউ ভিক্ষুককেও ভিক্ষা দেই না। শুধু কি তাই? শিশু না কাঁদলে মাকি তাকে জোর করে বুকের দুধ খেতে দেয়?

আবার দেখেন শুধু ধর্মের কারণে মানুষ হয়ে অন্য মানুষকে ঘৃণা করছি, খুন করছি। অথচ মানুষের মঙ্গলের জন্যই কিন্তু ধর্মের আবির্ভাব হয়েছিল? কি আশ্চর্য, ভাবতেই গা শিউরে উঠে!

এতকিছুর পরও পৃথিবীতে অনেক মানুষ আছে যারা অন্যের বিপদে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। অন্যের দুঃখে দুঃখিত হয়।

এখন যদি বলি আসুন সবাই মিলে একটু হেসে কথা বলি। রাগটাকে কমাই। অহংকারকে দুর করি। যদি সুখী হতে চান তবে প্রত্যাশা কমান ইত্যাদি।

প্রথমেই মন্তব্য হবে উপদেশ দেওয়া লাগবে না নিজের চর্কায় তেল দিন। যদি বলি আপনি কারো জন্য কিছু করে থাকলে সেটা চিরতরে ভুলে যান। কারণ সেটা যতদিন আপনি মনে রাখবেন ততদিন সেটা আপনাকে অহংকারী করে তুলবে।

আবার কেউ যদি আপনার জন্য খুব সামান্য কিছুও করে থাকে, তবে সেটা আজীবন মনে রাখবেন। কারণ এটা আপনাকে বিনয়ী ও কৃতজ্ঞতা সম্পন্ন একজন ভালো মানুষ হিসেবে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করবে। এগুলো শোনার পরে বলবে উনার খেয়ে কোন কাজ নেই, তাই ফালতু কাজে ব্যস্ত ইত্যাদি।

আরও পড়ুন : জীবনের অর্থ খুঁজতে গিয়ে হৃদয়ের অনুভূতি বুঝেছি

আমরা মানুষ জাতি বেশ মজার জীব। ঝড়, বৃষ্টি বা রোধে যে ছাতাটা ব্যাবহার করি হঠাৎ সব থেমে গেলে ছাতাটাও বোঝা মনে হয়। কালি ছাড়া যেমন কলমের মূল্য ফুরিয়ে যায় তখন সেটা হয় আবর্জনা যা পরে গার্বেজে জমা হয়। প্রিয়জনের থেকে পাওয়া চমৎকার একগুচ্ছ ফুলের তোড়া যখন বাসি হয়ে যায় সেটাও পরে ডাস্টবিনে পাওয়া যায়।

অপ্রিয় এবং নিষ্ঠুরতম সত্য হলো, কারও উপকারের কথা আমরা বেশিদিন মনে রাখতে পছন্দ করিনে। কারণ কি জানেন? কারণ হচ্ছে কারও কাছে আপনি ততদিন গুরুত্ব পাবেন, সেটা নির্ভর করে তার জন্য যতদিন কিছু একটা করার সামর্থ্য আছে আপনার, তার উপর। এই যে এতক্ষণ বেশ সময় দিয়ে কিছু কথা লিখলাম, কাল হয়ত কোন এক সংবাদ পত্রে প্রকাশ হবে, পরের দিন সরাসরি চলে যাবে গার্বেজে, এটাই প্রথমে বলেছি।

এখন বলব কিছুটা ভিন্ন ভাবে। মানুষ জাতিকে সৃষ্ট জীব হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। আমাদের দেহের উপরে বসানো হয়েছে বিশাল এক মেমোরি সিস্টেম যা শেষ হবার আগেই আমাদের জীবনের সমাপ্তি ঘটে যাবে বা যাচ্ছে।

শুনেছি মৃত্যু কালে বিখ্যাত বৈজ্ঞানিক আইনস্টাইনের ব্রেন চেক করে দেখা গেছে মাত্র ১০% ব্যবহৃত হয়েছিল। এতে করে এতটুকু বলা যেতে পারে আমাদের ব্রেন সত্যিকার্থে বিশাল একটি গার্বেজ, বায়োলজিক্যাল গার্বেজ। এর ধরণ ক্ষমতা এতো বেশি যে আমরা মরে গেলেও ১০%-এর বেশি খরচ করতে পারব না। অতএব, বলতে চাই ‘যেখানে দেখিবে যা পড়ে দেখিবে তা জানলেও জানতে পারো কিছু অমূল্য তথ্য।’

আরও পড়ুন : দেখা হয়েছিল পূর্ণিমা রাতে

হ্যাঁ বাংলাদেশে নিউজ পরের দিন গার্বেজে বা কেজি হিসাবে বাজারে বিক্রি হয় ঠিকই তবে হৃদয়ের গার্বেজেও সেটা আর্কাইভ হয়ে বয়ে চলেছে (নদীর মত সাগর থেকে মহাসাগরে) অতীতের প্রজন্ম থেকে শুরু করে বর্তমান এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মে। আমাদের শেষ হবে, শেষ হবে না খবরের, কারণ খবরের আরেক নাম গতি, যা চলছে চলবে…

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

ওডি/কেএইচআর

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড