• বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১  |   ৩১ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

কৌতূহলের ছলে হলেও একবার ভেবে দেখো

  রহমান মৃধা

০৭ নভেম্বর ২০২১, ১৩:৩৭
কৌতূহলের ছলে হলেও একবার ভেবে দেখো
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

স্রষ্টার সৃষ্টিতে রয়েছে রহস্য। তবে এই রহস্য উৎঘাটন করার জন্য যে জিনিসটির সবচেয়ে বেশি দরকার তা হলো কৌতূহল। কৌতূহল থাকা দরকার জীবনে। সৃজনশীল মানুষের জীবনে কৌতূহল বেশি। যার কারণে তারা সব সময় নতুন কিছু জানতে চায়। আর নতুন কিছু জানতে গিয়ে নতুন কিছু শিখে ফেলে।

গবেষকরা গবেষণা করে নতুন কিছু তথ্য, প্রযুক্তি বা উপাদান আবিষ্কার করে। মানুষ যা আবিষ্কার করেছে তা জানা ও শেখার মাধ্যমেই কিন্তু সম্ভব হয়েছে।

একটি ছোট্ট শিশুর জন্মের শুরুতে সে পৃথিবীর সব কিছু সম্পর্কে কৌতূহল দেখায়। তার শিশুকালটা full of curiosity-তে পরিপূর্ণ। তাকে সারাক্ষণ নজরে রাখতে হয়। কারণ সে এটা ধরে, ওটা ফেলে, সেটা ছিঁড়ে ফেলে ইত্যাদি। জীবনের শুরুতে শিশুর ব্রেনে রয়েছে ‘brand new unused space.’ সেই ‘unused space’-কে পরিপূর্ণ করতে হবে জীবনের পুরো সময় ধরে। এখন এই ‘unused space’ পরিপূর্ণ করতে গিয়ে যদি শুধু garbage ঢুকানো হয় যাচাই বাছাই ছাড়া, তাহলে তা পরে ‘sort out’ করা কঠিন। যার কারণে হয়ত অনেকে পথভ্রষ্ট হয়ে হারিয়ে ফেলে জীবন চলার সরল এবং সহজ পথ।

সহজ এবং সরল পথ পেতে সহজ এবং সরল চিন্তা চেতনার দরকার। আমি আজ তার ওপর কিছু চিন্তা চেতনা তুলে ধরব।

মনে কি পড়ে আমাদের যুগে যখন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক জিজ্ঞেস করতেন ‘তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও?’ উত্তরে সবাই বলত, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই। এখন শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করলে তারা পুলিশ অফিসার, নেতা বা বড় ব্যবসায়ী হওয়ার কথা বলে। আবার কেউ বা লেখাপড়া শেষ করে দেশ ছেড়ে বাইরে চলে যাওয়ার কথা বলে।

কারণ কী? ত্রিশ লক্ষ মানুষের রক্তে দেশ স্বাধীন করা হলো, বহিঃশত্রু তাড়ানো হলো, স্বাধীনভাবে নিজের দেশে গণতন্ত্রের বেস্ট প্রাকটিসের মাধ্যমে দেশকে সোনার বাংলায় পরিণত করব বলে। অথচ আজ এই চিন্তা চেতনা নতুন প্রজন্মের মাথায় কাজ করছে না। তাদের সেই কৌতূহল নেই দেশকে নিয়ে। কারণ তারা প্রযুক্তির যুগে গ্লোবাল সমাজের সঙ্গে নিজেদেরকে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করছে তাদের কল্পনায়।

আবার দেখা যাচ্ছে যাদের একটু সামর্থ্য রয়েছে তারা বিদেশি শিক্ষা, বিদেশি খাবার, বিদেশি পোশাক, বিদেশি গাড়ি ব্যবহার করছে। অনেকে দেশের চিকিৎসা ছেড়ে পাশের দেশ ইন্ডিয়া, সিঙ্গাপুর কিংবা নিউইয়র্ক বা লন্ডনের ডাক্তার দেখাচ্ছে। অথচ ঐসব দেশে গেলে দেখা যাচ্ছে এসব বিদেশি ডাক্তারের অনেকেই বাংলাদেশি। এদের অনেকেই আবার লেখাপড়াও করেছে বাংলাদেশে। কী কারণ রয়েছে যার জন্য এ সব মেধাবী শিক্ষার্থী দেশ ছাড়তে উঠে পড়ে লেগেছে?

আরও পড়ুন : সুইডেনে ভূত?

একজন সদ্য পাশ করা ডাক্তারকে জিজ্ঞেস করলাম আচ্ছা কী কারণে তোমরা সবাই দেশের বাইরে চলে যেতে ব্যস্ত? উত্তরে বলল, ঢাকা শহরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন নেই। কার্বনডাই অক্সাইড নিতে নিতে এখন ব্রেন নর্মালি কাজ করছে না। জানিনে তার কথার মধ্যে সত্যতা কতটুকু! বললাম এই কার্বনডাই অক্সাইডের মধ্যেই তো পুরো লেখাপড়া শেষ করলে গরীবের টাকায়। বিনিময়ে যখন কিছু রিটার্ন দিবে ঠিক তখন দেশ ছাড়ছো? উত্তরে আবার বলল, যে দেশে নিজেদের চিকিৎসাকে উপেক্ষা করে সবাই বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে পারে সেখানে আমাদের দেশে থেকে কী হবে?

ভেবে দেখলাম কথা মিথ্যে নয়। যে দেশে আইন চলে ক্ষমতার প্রভাবশালী এবং প্রশাসনের নির্দেশে; যে দেশ নকল, মাস্তানি, অত্যাচার অবিচার ও দুর্নীতিতে ভরা; যে দেশে পুলিশ, এমপি, মন্ত্রী বা বিসিএস ক্যাডার যখন যা খুশি করতে পারে তখন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ারাই বা কেন করতে পারবে না?

তবে আমার মূল ভাবনা এখানে নয়। আমার মূল ভাবনা আগামী দশ বছর পরের বাংলাদেশকে নিয়ে। আগামী দশ বছর যখন দেখা যাবে দেশে ভালো ডাক্তার নেই, ইঞ্জিনিয়ার নেই, গণতন্ত্রের বেস্ট প্রাকটিস নেই, তাহলে কি আমরা আবার পরাধীন হয়ে যাব? আমরা এখনো কি সেই আগের মত শ্লোগান দেই, 'শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে জ্বালো?’ না, দেই না। কেন দেই না? সম্ভবত এখন ঘরে ঘরে শিক্ষার আলো জ্বলে আছে এবং ভুরি ভুরি শিক্ষা গুদামজাত হয়ে রয়েছে, তাই সেই শ্লোগান দেয়ার প্রয়োজন মনে নেই। তাহলে কেন সুশিক্ষার অভাব? লেখায় এতো সব প্রশ্ন করাও তো ঠিক নয়। আবার প্রশ্ন ছাড়া তো উত্তরও মিলবে না!

গতকাল সুইডিশ টেলিভিশনে এ দেশের নানা সমস্যার উপর রাজনীতিবিদদের তর্ক বিতর্কের একটি অনুষ্ঠান দেখলাম। কী সুন্দরভাবে তারা একসঙ্গে গোল টেবিলের চারপাশে দাঁড়িয়ে নানা ধরনের যুক্তির সঙ্গে সমস্যার আলোচনা করছে। সব বিষয়ে যে তাদের মতামত এক ছিল তা নয়। - they were agreed to disagree.

আরও পড়ুন : দেখা হয়েছিল পূর্ণিমা রাতে

গণতন্ত্রে যদি বিরোধী দল না থাকে তবে সে দেশে তো গণতন্ত্রের বেস্ট প্রাকটিস হতে পারেনা। স্রোতের প্রতিকূলে যে মাছ চলতে অক্ষম সে তো মরা মাছ। মরা মাছ শুধু দুর্গন্ধ ছড়ায়, এটা আমাদের অজানা নয়। জানিনে আমার চিন্তা চেতনা পাঠকদের বিবেকের দুয়ারে নক করবে কি-না! কৌতূহলের ছলেও যদি সময় হয় একবার ভেবে দেখো আমার কথা গুলো, আমি তোমাদেরই একজন।

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

ওডি/কেএইচআর

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড