• শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১  |   ২৭ °সে
  • বেটা ভার্সন
sonargao

সুইডেনের শিক্ষা ব্যবস্থা

  রহমান মৃধা

২২ অক্টোবর ২০২১, ১৪:১২
সুইডেনের শিক্ষা ব্যবস্থা
ফাইজারের প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্টের সাবেক পরিচালক রহমান মৃধা (ছবি : সংগৃহীত)

আমি স্বাধীন বাংলা হতে দেখেছি, আমি সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নে মগ্ন হয়েছি। আমি এখন দুর্নীতিমুক্ত এবং সু-শিক্ষাযুক্ত বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমার মতো করে অনেকেই দেখতে চায় তার মধ্যে রয়েছে রাঙামাটি জেলার লংগদু উপজেলার গুলশাখালী ইউনিয়ন। গুলশাখালী হাই স্কুল থেকে ১৯৯৫ সালে সম্ভবত ৮/১০ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সবাই ফেল করেছিল। সেটা দেখেই ১৯৯৬ সালে কয়েকজন শিক্ষার্থী, যারা এলাকার বাইরে থেকে পড়াশোনা করে সফল হয়েছিলেন, তারা মিলে গঠন করে ‘ফরমার স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশন অব গুলশাখালী’।

তাদের উদ্দেশ্য ছিল- এলাকার ছেলেমেয়ে এবং অভিভাবকদের শিক্ষার ব্যাপারে উৎসাহ প্রদান করা। প্রতি বছর বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা, অভিভাবকদের সংবর্ধনা, শিক্ষকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে সংগঠনটি নিজেদের লক্ষ্য পূরণে চেষ্টা করে আসছে। এ সংগঠনের সফলতা হলো- লংগদু উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নের মধ্যে এখন গুলশাখালীর শিক্ষার হার সব চেয়ে বেশি। সংগঠনটি এবার ২৫ বছর উদযাপন করতে যাচ্ছে, সেই উপলক্ষে আমাকে কিছু লিখতে বলা হয়েছে।

কী কব আমি কী লিখিব এটাই ভাবছি, ঠিক তেমন একটি সময় মনে হলো বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে সবাই মোটামুটি ধারণা রাখে। কিন্তু আমার থেকে পাঠকরা নিশ্চয় একটু ভিন্ন ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে সম্যক ধারণা পেতে চায়।

আমি বাংলাদেশের শিক্ষা প্রশিক্ষণে সুশিক্ষার বীজ বুনতে চাই। শিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণ ও বাজার চাহিদার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ করে গড়ে তোলা নতুন শিক্ষা ব্যবস্থা সুইডেনের সামগ্রিক চেহারা বদলে দিয়েছে। আশা করি বাংলাদেশ তার শিক্ষা পরিকাঠামোকে এমন করে তৈরি করতে সক্ষম হবে।

ইউরোপের শিশুশিক্ষার ধরণ আমাকে প্রথমে করেছে অবাক পরে মুগ্ধ। তা কি করে সম্ভব? প্রশ্নটি খুবই আশাব্যঞ্জক। কিন্তু উত্তরটি পেতে সময় লেগেছে ষোলটি বছর, তাইতো লেখাটি এর আগে লিখতে পারিনি।

হ্যাঁ, বলব কিছু ঘটনা সঙ্গে বর্ণনা দেবো সুইডেনের শিশু শিক্ষার ধরণ। উদ্দেশ্য একটিই, আর তাহলো, যদি বাংলাদেশের শিশু শিক্ষার সঙ্গে এখানকার শিশু শিক্ষার অমিল থাকে তবে সেই অমিলটা খুঁজে বের করা। যদি দেখা যায় সেটা আমাদের জন্য ভালো তাহলে ভালো জিনিসগুলো আমরা অনুকরণ এবং অনুসরণ করতে পারি।

জন্মের প্রথম বছর শিশু তার মায়ের সঙ্গে সময় কাটায়। পরে তাকে সুইডিশ ডাগিসে (কিন্ডারগার্টেন বা ডে কেয়ার শিক্ষা প্রশিক্ষণ) ভর্তি করা হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে ডাগিসে মায়েরা শিশুর সঙ্গে থাকেন। আস্তে আস্তে কিন্ডার গার্টেনের শিক্ষাবিদ এবং শিশুদের একটি সমন্বয় ঘটতে থাকে এবং মায়েদের উপস্থিতি কমতে থাকে এবং শেষে সকাল থেকে বিকেল অবধি সময় শিশুর শিক্ষা জীবন শুরু হয় ডাগিসে।

শিশুর বয়স ছয় বছর হওয়া পর্যন্ত তাদেরকে নানা বিষয়ের ওপর নানাভাবে হাতেনাতে প্রশিক্ষণ দিয়ে গড়ে তোলা হয়। ছয়টি বছর দাগিসে এরা শেখে বিভিন্ন বিষয় যেমন শেয়ার ভ্যালু, মনুষ্যত্ববোধ, ভাতৃত্ববোধ, একতা, সামাজিকতা। এক কথায় বলা যেতে পারে এখান থেকে জীবন গড়ার শুরুটাকে মজবুত করে তৈরি করতে সাহায্য করা হয়।

একজন ডাগিসের শিশুর মধ্যে সচেতনতার ছাপ দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি বার বার। দেখেছি যখন আমার ছেলে মেয়ে ডাগিস থেকে বাড়িতে এসেছে। আমি যদি কোথাও কোন ভুল করেছি সঙ্গে সঙ্গে তারা বলেছে বাবা তুমি এটা এভাবে না করে এইভাবে কর।

আমাদের ডাগিসের শিক্ষকরা এটা এভাবে করতে বলেছে। আমি অবাক হয়েছি আর তাদের থেকে নতুন নতুন বিষয় শিখেছি। শেখার সঙ্গে সঙ্গে তারাও বুঝেছে বাড়িতে এবং সমাজে তাদের ভ্যালু কত গুরুত্বপূর্ণ। শিশুর ব্যক্তিত্ব এবং আত্মমর্যাদার বিরাট পরিবর্তন দেখা দেয় ছয় বছর বয়সে। যা না দেখলে বিশ্বাস হওয়ার কথা নয়।

ছয় বছর বয়সে কোনো রকম প্রেশার (চাপ প্রয়োগ) ছাড়া একজন শিশুকে গড়ে তোলা, যেখানে তার শিশুকাল হারিয়ে যায়নি, যেখানে সে খেলাধুলার মধ্যদিয়ে জীবনের পরিকাঠামো তৈরিতে যা যা দরকার তার সব পেয়েছে। যার কারণে জীবনে চলার পথে দ্বন্দ্ব নয় প্রতিযোগিতার মনোভাব নিয়ে সে নানা চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করতে শুরু করে।

এবার স্কুলের জীবন শুরু। জীবনের নতুন অধ্যায়। জানা, দেখা, নিজের হাতে সব কিছু তৈরি করা। নিজের চেষ্টায় কিছু করা। দেশের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখা। নতুন এবং পুরনোর সংমিশ্রণে চিন্তার উন্নয়ন করা। প্রকৃতিকে নিজের মতো করে উপলব্ধি করা। অজানা এবং অচেনাকে চেনা। সব কিছুর সঙ্গে লতার মতো জড়িয়ে পড়া। যা এদের জীবনকে পরিপূর্ণতা দিতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন : রাষ্ট্রতন্ত্র নয় দরকার গণতন্ত্রের

ছয় বছর থেকে পনের বছর বয়সে এরা শিক্ষার বেসিকের সঙ্গে সুন্দরভাবে জড়িয়ে পড়ে। এ সময়ের শিক্ষায় জীবনের দিক নির্দেশনা সম্পর্কে একটি পরিপূর্ণ ছবি দেয় বিধায় তারা বেশ সচেতন হয়ে ওঠে। তারা কি হতে চায় তাদের কর্মজীবনে।

আমি কখনো দেখিনি আমার ছেলে-মেয়েকে বই পড়তে বা লেখাপড়া করতে বাড়িতে। মাঝে মধ্যে তাদের জিজ্ঞেস করেছি, কি কোন হোম ওয়ার্ক নেই?

তারা বলেছে,

-বাবা তুমি কত ঘণ্টা কাজ কর?

-আট ঘণ্টা।

-বাড়িতে এসে কেন অফিসের কাজ করো না?

-কেন আমি তো অফিসেই আমার কাজ শেষ করে এসেছি, বাড়িতে কেন সেই কাজ করব?

তারা তখন বলেছে স্কুলে যাওয়ার উদ্দেশ্য স্কুলের কাজ স্কুলে শেষ করা। বাড়ি এসে খেলাধুলা, বন্ধু-বান্ধবদের সঙ্গে সময় কাটানো, মজা করা এসব করতেও তো সময় এবং মন দরকার।

এবার আশা যাক শিক্ষার পরিকাঠামো নিয়ে।

সুইডেনে বাধ্যতামূলক শিক্ষার স্তর ৭-৮ বছরে শুরু হয়। বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ৩টি স্তরে বিভক্ত। ১ম-৩য় শ্রেণি পর্যন্ত নিম্ন স্তর, ৪র্থ-৬ষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত মধ্যম স্তর এবং ৭ম-৯ম শ্রেণি পর্যন্ত উচ্চ স্তর। প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুদের শিক্ষা ও উন্নয়নের জন্য স্কুল ও অভিভাবকের দায়িত্ব সমান। শিশুদের উন্নতির ধারা এবং পছন্দ সম্পর্কে স্কুলগুলো নিয়মিতভাবে অভিভাবককে জানায়।

প্রাথমিক পর্যায়ে শিশুদের এমনভাবে গড়ে তোলা হয় যেন তারা স্কুল ও স্কুলের বাইরের জীবন থেকে ভবিষ্যৎ শিক্ষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে। তারা যেন ভবিষ্যতে লিঙ্গ, সংস্কৃতি কিংবা সামাজিক কারণে পেশা বাছাইয়ের সময় কোনোরূপ সমস্যায় না পড়ে সে ব্যাপারে দৃষ্টি রাখা হয়। প্রাথমিক শিক্ষার ৩টি স্তরে শিশুদের সুইডিশ ভাষা, গণিত, শারীরিক শিক্ষা, ইংরেজি, কারুকলা, সংগীত, ভিজুয়াল আর্টস, প্রযুক্তিবিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, জীববিদ্যা, ইতিহাস, সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্ম, ভূগোল এবং গার্হস্থ্য অর্থনীতি মোট ১৬ বিষয় বাধ্যতামূলকভাবে পড়তে হয়।

৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে শিক্ষার্থীরা পছন্দসই একটি বিদেশি ভাষা পড়তে পারে। ফ্রেঞ্চ, জার্মান আর স্প্যানিশ ভাষার মধ্যে যে কোন দুটি ভাষা স্কুলগুলো শিক্ষার্থীদের পড়ার জন্য অফার করে থাকে। সময়ানুবর্তিতাকে এখানে খুবই গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই ব্যাপারটি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হয়।

সুইডিশ শিক্ষা ব্যবস্থায় গ্রেডিং মূলত ৩ প্রকার। ফেইল, পাস এবং পাস উইথ ডিস্টিংশন। প্রাথমিক বিদ্যালয় গুলোতে এ, বি, সি, ডি, ই এবং এফ এই ৬ ভাবে গ্রেডিং করা হয়। তবে বি এবং ডি গ্রেডকে বলা হয় ফিলিং গ্রেড। পরীক্ষা হয় ২০ পয়েন্টের উপর। প্রাথমিক পর্যায়ের শিশুরা অপশনাল বিষয়সহ মোট ১৭টি বিষয়ে সর্বোচ্চ ৩৪০ পয়েন্ট অর্জন করতে পারে। শিশুদের ৩য়, ৬ষ্ঠ এবং ৯ম শ্রেণিতে জাতীয়ভাবে মূল্যায়ন পরীক্ষা নেওয়া হয়।

সকল শিশুকে সমানভাবে মূল্যায়ন করাই এই পরীক্ষার উদ্দেশ্য। তবে ৬ষ্ঠ শ্রেণির আগ পর্যন্ত শিশুদের গ্রেডিং করা হয় না। ৩য় শ্রেণিতে শুধুমাত্র গণিত ও সুইডিশ ভাষার উপর পরীক্ষা নেয়া হয়। অন্য দিকে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে গণিত, সুইডিশ ভাষা এবং ইংরেজির উপর লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা হয়। পাশাপাশি ৯ম শ্রেণিতে পদার্থবিদ্যা, রসায়ন ও জীববিদ্যার মধ্য থেকে যে কোন একটি এবং সামাজিক বিজ্ঞানের বিষয় থেকে একটি বিষয়ে পরীক্ষা দিতে হয়।

সুইডেনে দশম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত উচ্চ মাধ্যমিক স্তরকে বলা হয় জিমনেশিয়াম বা হাইস্কুল। হাইস্কুলে লেখাপড়া করা সুইডেনের শিক্ষার্থীদের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। তবে শতকরা ৯৮ ভাগ সুইডিশ শিক্ষার্থী প্রাথমিক পর্যায় শেষ করে হাইস্কুলে ভর্তি হয়ে থাকে। এখানে হাইস্কুল স্তরে দুটি শাখা রয়েছে। ১ম শাখাটি কারিগরি শিক্ষার উপর নজর দেয় এবং অন্যটি উচ্চ শিক্ষার উপর। তবে উভয় শাখার শিক্ষার্থীরাই ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করার সুযোগ পায়। কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে একই ধারার বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করে।

আরও পড়ুন : আমার দেখা একজন দেশপ্রেমিক তরুণ সাংবাদিক, সে হঠাৎ জেলে

আমি কখনো তাদের লেখাপড়া নিয়ে ঘাটাঘাটি করিনি। তবে খেলাধুলার ব্যাপারে বরং বেশি সময় দিয়েছি। তারা জীবনের শুরু থেকে এ পর্যন্ত তেমন কিছু মিস করেছে বলে আমার জানা নেই। এটা আমার ছেলে-মেয়েদের সৌভাগ্য হয়েছে বলে আমি মনে করি। যখন যা প্রয়োজন এবং যখন যা করার সময়, তা করতে পারার মাঝেই কিন্তু রয়েছে আসল আনন্দ।

যদি ফিরে যাই আমার জীবনের শুরুতে, আমাদের ছোটবেলার সময়ের সঙ্গে কিছুটা মিল এখানে আছে। যেমন আমরা স্কুলের পরে খেলাধুলা করেছি, দুষ্টুমি করেছি, নদীতে গিয়ে সাঁতার কেটেছি।

কিন্তু বাংলাদেশে বর্তমান শিশু শিক্ষার ধরণ যা শুনেছি বা দেখেছি সেটা বেশ আলাদা। যেমন পিঠে উটের মতো করে বইয়ের বোঝা তুলে দেওয়া। স্কুল থেকে ফিরে বন্ধ ঘরে গৃহশিক্ষকের কাছে দীর্ঘসময় পড়াশোনায় মনোযোগ দেওয়া। তারপর বাবা মার কাছে পড়া, পড়া আর পড়া।

এখানে একটি বিষয় এড়িয়ে গেলে চলবে না, আর তা হলো যারা world class খেলোয়াড় হতে চায় তাদের activities সাধারণ শিক্ষার্থীদের থেকে ভিন্ন। কারণ এলিট স্পোর্টসে দরকার প্রচুর মোটিভেশন, ডেডিকেশন, সাফার এবং অফার। যেহেতু কথায় রয়েছে Winner takes it all so one must work harder than others. এ ক্ষেত্রে এলিট ক্রীড়াবিদদের জীবনের কিছু মজার সময় তারা মিস করে বিশ্ব সেরা খেলোয়াড় হওয়ার জন্য।

ঠিক তেমনিভাবে যদি কেও এলিট শিক্ষার জন্য পুরো সময় ইনভেস্ট করতে চায়, যেমন শুধু ডাক্তার বা প্রকৌশলী হওয়ার কারণে জীবনের দুই তৃতীয়াংশ সময় ব্যয় করে, তখন দেখা যায় তারা শৈশব এবং কৈশোরের অনেক কিছু মিস করেছে, যা পরে হাজার চেষ্টা করলেও সেটা পূরণ করা সম্ভব হয় না। এ ধরনের চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় দরকার সুন্দর পরিকাঠামোর। সে ক্ষেত্রে শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণের পুরো সময়ের ওপর সুন্দর ব্যবস্থাপনা থাকতে হবে।

কারণ মানব জীবনের শৈশব, কৈশোর, যৌবন একবারই আসে বারবার নয়, এ বিষয়টি ভুলে গেলে চলবে না। একদিন শিশুর শৈশব, কৈশোর শেষ হয়ে যাবে, জীবনের অনেক কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। শিক্ষা জীবন শেষে কর্মজীবন শুরু হবে। তখন টাকা পয়সা, গাড়ি, বাড়ি সবই হবে তবে জীবনের পরিপূর্ণতা হয়ত আসবে না।

ভাবার ব্যাপার হলো পুরো প্রাইমারী এবং হাইস্কুলের সময়টি শিশুরা ডাইনিং হলে শিক্ষকদের সঙ্গে লাঞ্চসহ কোয়ালিটি সময় কাটায়। স্কুলের এই ফ্রি লাঞ্চ একসঙ্গে উপভোগ করার সুযোগ বিশ্বের কয়েকটি দেশে রয়েছে। অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা যুক্তরাজ্যের মতো অনেক দেশ রয়েছে, যারা ভিয়েতনাম বা আফগানিস্তানের নিরীহ মানুষ হত্যার জন্য কোটি কোটি টাকা খরচ করে চলছে যেখানে সেই অর্থে তাদের শিশুদের জন্য বিনামূল্যে স্কুলের খাবার দিতে পারত!

যাই হোক বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে শিক্ষার ক্ষেত্রে এদেশে স্নাতক, স্নাতকোত্তর এবং ডক্টরাল লেভেল রয়েছে। সকল ক্ষেত্রেই লেখাপড়ার জন্য এদেশে বিশ্ববিদ্যালয় বা ইউনিভার্সিটেট এবং বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ এই দুটি শাখা রয়েছে। ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জনের ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশাপাশি রিসার্চ ওরিয়েন্টেড বিশ্ববিদ্যালয় কলেজও রয়েছে এদেশে। সুইডেনে ৩ বছরের স্নাতক, ১ বা ২ বছরের স্নাতকোত্তর এবং ২-৪ বছরের ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জনের সুযোগ রয়েছে।

বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা সুইডেনের বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসে। শিক্ষা ও গবেষণা খাতে সুইডিশ সরকারের বিশেষ দৃষ্টি ও অর্থায়ন উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে সুইডেনকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আকর্ষণ হিসেবে গড়ে তুলেছে। বিশেষত ডক্টরাল পর্যায়ের গবেষণার জন্য সুইডিশ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আলাদা সুনাম রয়েছে।

ইউরোপের শিক্ষায় রয়েছে সুশিক্ষা, সুচিন্তা, সু-ভাবনা। যেখানে কোন কিছুই বাদ দেওয়া হয় না। সব কিছুই রয়েছে এখানকার শিক্ষা ব্যবস্থায়। আমি আমার অভিজ্ঞতা থেকে এতটুকু বলতে চাই সেটা হলো ইউরোপের শিক্ষা পদ্ধতি সুস্থ এবং সমৃদ্ধ জীবন গড়ার এক চাবিকাঠি। সুইডেনের সাথে বাংলাদেশের আর্থিক কাঠামোর ভিন্নতা থাকার সত্ত্বেও শিক্ষা কাঠামো, কারিকুলাম ও সিলেবাস প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ সুইডিশ মডেল অনুসরণ করতে পারে।

আরও পড়ুন : দেখা হয়েছিল পূর্ণিমা রাতে

বাংলাদেশ ও সুইডিশ সরকারের পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তন সম্ভব। -Well and all round education is the global passport to the future, for tomorrow belongs to those who prepare for it today.

লেখক : রহমান মৃধা, সাবেক পরিচালক (প্রোডাকশন অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট), ফাইজার, সুইডেন।

[email protected]

ওডি/কেএইচআর

চলমান আলোচিত ঘটনা বা দৃষ্টি আকর্ষণযোগ্য সমসাময়িক বিষয়ে আপনার মতামত আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সরাসরি দৈনিক অধিকারকে জানাতে ই-মেইলকরুন- [email protected] আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত

নির্বাহী সম্পাদক: গোলাম যাকারিয়া

 

সম্পাদকীয় কার্যালয় 

১৪৭/ডি, গ্রীন রোড, ঢাকা-১২১৫।

যোগাযোগ: 02-48118243, +8801907484702 

ই-মেইল: [email protected]

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

Developed by : অধিকার মিডিয়া লিমিটেড